রাজা জনার্দন তাঁর রাজসভাগারে হুটাহুট শব্দবাণ প্রয়োগ করিয়া হুতোমকে স্মরণ করিতেই হুতোম তাঁর পাখনা বিস্তার করিয়া পৎপৎ মন্ত্রোচ্চারণ করিতে করিতে সভাগারের ঝাড়বাতির ওপর আসন গ্রহণ করিল। রাজা জনার্দন হুতোম দর্শনে আহ্লাদিত হইয়া সাষ্টাঙ্গ প্রণামবিধি পালনপূর্বক হুতোমকে খাদ্যাদি দ্বারা আপ্যায়ণ করিয়া নিজের কৌতূহল নিবারণ করিবার মনস্থির করিয়া হুতোমকে কহিল, “হে মহাপন্ডিত, সর্বকালবেত্তা, সর্বলোকগামী, কূলশ্রেষ্ঠ হুতোম, আপনি আজ আমাদিগের কাছে পুরাকালের ভারতবর্ষের রাজা নরেন্দ্র কাহিনী বর্ণনা করিলে আমরা ধন্য হইয়া সহস্রকোটি বৎসর আপনার জ্ঞানের প্রচার করিব”।
রাজার মুখে এইরূপ শুনিয়া হুতোম কহিল, “শোন হে নরপতি জনার্দন, পুরাকালে ভারতবর্ষে বাগ্মী রাজা নরেন্দ্রমোদি অলৌকিক ক্রিয়াদির দ্বারা জনতাকে বশীভূত করিতে সক্ষম ছিলেন। তিনি বশীকরণ মন্ত্র জানিতেন। তিনি মিত্রোঁবাণ নিক্ষেপ করিলে অন্ধজনের চক্ষুপ্রাপ্তি হইত। অমাবস্যার সন্ধ্যায় তিনবার তিনি পাকিস্তানবাণ নিক্ষেপ করিলে জনতা বশীভূত হইয়া ঢক্কানিনাদে তাঁহার জয়জয়কার করিত। জয়োধ্বনি শ্রবণ করিয়া নরেন্দ্র উৎফুল্ল হইয়া মন কি বাত মন্ত্রপাঠ করিলে বশীভূত প্রজাগণ মোদিধ্বনি প্রয়োগ করিয়া সহর্ষে জীবনযাপন করিত।“
এইরূপ কহিয়া হুতোম রাজা জনার্দনের সিংহাসনের বাহুর ওপর আসীন হইয়া চুপিচুপি কহিল, “রাজা নরেন্দ্র গুলমন্ত্র জানিতেন। ততঃদ্বারা তিনি গুলবাণ নিক্ষেপ করিলে প্রজাগণ সজ্ঞানে অজ্ঞান হইতেন। তাঁহার গুলবাদ্য শুনিয়া প্রজাগণ মুগ্ধ হইয়া পুনরায় মোদিধ্বনি তুলিয়া গুলকাহিনী কর্তন করিত। কথিত আছে সেইকালে গুলকাহিনী শ্রবণ করিলে দুরারোগ্য ব্যধি নিরাময় হইত। ক্ষুধাব্যধি নিবারণের জন্যে তিনি গুলমন্ত্র নিক্ষেপ করিলে মানুষ ক্ষুধা ত্যাগ করিয়া মোদিরবে মুখরিত হইত।“
সভাস্থলে সভাসদগণ নিশ্চুপ হইয়া হুতোম কন্ঠে প্রাচীন কাহিনী শ্রবণ করিতে করিতে মৃদু মোদিবাদ্য বাদনে মগ্ন হইতেছে। এইরূপ দেখিয়া হুতোম উৎসাহিত হইয়া গম্ভীর কন্ঠে কহিতে লাগিল, “পুরাকালে রামায়ণের রাম যখন সীতাকে খুঁজিতে তাঁহার পরাক্রমী বানরসেনাকে পৃথিবীর চতুর্দিকে প্রেরণ করিলেন, তখন পবনপুত্র মহাবীর হনুমান অহরহ নরেন্দ্রকে ইমেল করিতেন। ইমেল প্রাপ্ত হইলে মোদিরাজা রামের নিকট তাহা প্রেরণ করিয়া রামকে সীতাসন্ধানের পূঙ্খানুপূঙ্খ বর্ণনা করিতেন। যখন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ চলিতেছে তখন মহামতি বিদুর যুদ্ধচিত্র ক্যামেরাবন্দী করিয়া রাজা নরেন্দ্রকে প্রেরণ করিতেন। নরেন্দ্র তাঁহার মন কি বাত পুরাণে এইরূপ কহিয়াছেন।”
রাত্রিকাল পূর্ণ হইয়া ভোরের আলো ফুটিতে দেখিয়া হুতোম স্বস্থানে গমনের জন্যে উদগ্রীব হইয়া রাজা জনার্দনকে কহিলেন, “হে সুমতি জ্ঞানপিপাসু জনার্দন, রাজা নরেন্দ্রমোদির কাহিনী সহস্র বৎসরকাল চলিতে পারে। সময়াভাবে অদ্য ক্ষান্ত হইলাম”। সভাসদগণ মোদিধ্বনি সহযোগে হুতোমকে সম্ভাষণ করিয়া হুতোম মহাপন্ডিতের পুনরায় আগমনের তিথি নির্ণয় করিতে লাগিল।