Illogical Ministry of Bengal |
নোদাখালির একটি জল প্রকল্পে বিষ মেশানোর গুজব রটানো হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরীমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এর জন্যে সিপিএমের দিকে আঙুল তুলেছেন। মুখ্যমন্ত্রীও বিনা তদন্তে এই বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। রাজ্যে বিষমদ কাণ্ড থেকে শুরু করে মিড ডে মিলে বিষক্রিয়া, সব ঘটনার জন্যই সিপিএমের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, রাজ্যে মানুষ খুনের চক্রান্ত করছে বিরোধীরা। একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর হুমকি, ভবিষ্যতে রাজ্যে কোথাও কোনও ঘটনা ঘটলে তার জন্য সিপিএম-ই দায়ী থাকবে। এই নজিরবিহীন অভিযোগের সাক্ষী রইল রাজ্য বিধানসভা। একেই বলে শুঁড়ির সাক্ষী মাতাল।
গত সাত মাসে পশ্চিমবঙ্গে যা কিছু খারাপ ঘটেছে তার সবটাই সিপিএম ঘটিয়েছে। তৃণভোজীরা তাই সারা বাংলায় প্রচার করে বেড়াচ্ছে। সংবাদপত্রগুলির পোয়া বারো। তাদের মনের কথাই তৃণভোজীরা বলছে। এবং যেহেতু তারা সমাজের আয়না, তাই যা ঘটছে হুবহু লিখে দিচ্ছে। কখনো আবার সুযোগ পেলে তৃণভোজীদের মাতলামিকে আরও উসকে দিচ্ছে। এখন আমরি নিয়ে কামড়াকামড়ি করছে কিছু সংবাদপত্র। এইরকম ভাবে কতদিন চলবে? উন্নয়নের কাজকর্ম শিকেয় উঠেছে। অন্যদিকে প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। মানুষ তাই নিয়ে মেতে আছে।
গত সাতমাসে পশ্চিমবঙ্গে যে কোন দুর্ঘটনার জন্যে দায়ী সিপিএম। মিথ্যা বলার প্রবণতা এত বেড়ে গেলে কি ভাবে রাজ্যে সুশাসন চলবে? নিজেদের দায়িত্ব থেকে হাত সরিয়ে নিতেই এইরকম রটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাই মনে হচ্ছে বর্তমান সরকার পাঁকের মধ্যে বসে আছে আর সুযোগ পেলেই একতাল কাদা সিপিএমের দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছে। কচি কাঁচা লোকেদের হাতে রাজ্যভার। তাই আঙুল উঠছে অন্যদিকে।
চোলাইয়ের কারবারিদের গত সাতমাস ছিল পৌষ মাস। হঠাৎ পৌষ মাসে তাদের মাথায় সর্বনাশ নেমে এসেছে। তৃণভোজীদের রাগ হওয়া স্বাভাবিক। এত লোক একসঙ্গে মারা গিয়ে চোলাইয়ের কারবারে দু’পয়সা রোজগারের রাস্তা বন্ধ করে দিল। তৃণভোজীরা তৃণ ছাড়াও চোলাইয়ের টাকা খেত। তাই রেগেমেগে বলেই দিল, “চোলাইয়ে বিষ মিশিয়েছে সিপিএম।” আমরির ঘটনাকে ধামাচাপা দিতেই নাকি সিপিএম এমন ষড়যন্ত্র করল। চোলাই সম্বন্ধে কথা বলতে হয়েছে বলেই হয়ত মন্ত্রীরা মাতলামি মার্কা কথা বলে দিয়েছেন।
দুর্গা পুজোর মহাপঞ্চমীর দিন যান্ত্রিক গোলযোগের জন্যে সারা ভারতে বেশির ভাগ রাজ্যে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার কোন কাজকর্ম সম্ভব হয়নি। কিন্তু তৃণভোজীদের মাতলামি সে কথা মানেনি। ওরা বলে দিল প্রাক্তন সরকারের কারসাজি। মাওবাদীদের পশ্চিমবঙ্গে আস্কারা দিল তৃণভোজী গোয়ালের কুবুদ্ধিজীবি গুষ্টি। নাম পড়ে গেল সিপিএমের। যেহেতু দু’দলে পতাকার রঙ লাল তাই দুটি দলই ভাই ভাই। নিজেদের দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে উঠতে চলেছে। এর জন্যে দোষী সিপিএম। প্রাক্তন সরকার থেকে ‘বেনোজল’ নাকি দল পালটেছে বলে এসব হচ্ছে। তৃণভোজী দলটি বেছে বেছে বেনোজলকে দলে ঢোকাচ্ছে সে কথা আর কে বলে! আমরি হাসপাতালে নাকি আগুন লাগাল সিপিএম। মগরাহাটে বিদ্যুতের লাইন কাটতে গিয়ে পুলিশ গুলি চালিয়ে দিল। কয়েকজন মহিলা মারা গেল। পেছনে সিপিএম। চোলাই মদ খেয়ে বহু লোক এক সঙ্গে মারা গেল। দোষ সিপিএমের।
মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে আরও বিপজ্জনক পরিস্থিতির ডেকে আনার আহ্বান করলেন। পার্থ চ্যাটার্জি, সুদীপ ব্যানার্জি এবং মুকুল রায়ের বিষমদ সম্বন্ধে মাতাল বক্তব্য যে তাঁদের মনগড়া ছিলনা এ কথা স্পষ্ট হয়ে উঠল। পর্দার পেছন থেকে দলনেত্রী ইশারা না করলে এরকম বেহেড মন্তব্য করার সাহস ঐ দলের কারোর নেই। মূখ্যমন্ত্রী আজ বিধানসভায় সরাসরি এইরকম বেয়াক্কেলে কথা বলে তৃণমূলীদের বলে দিলেন যে তারা যা খুশি করতে পারে। সম্মানীয় ব্যক্তিদের সরাসরি মাতাল বলা অশোভনীয়। সরকার তার চোখ বন্ধ করে নিয়েছে। তদন্ত হলে তার দোষ সিপিএমের ঘাড়ে পড়বে। দুষ্কৃতীরা আস্কারা পেল। তৃণমূলীদের ঔদ্ধত্য যে আরও বাড়বে এ বিষয়ে আশংকা বাড়ল। পশ্চিমবঙ্গে অশান্তির মেঘ ঘনিয়ে এসেছে মানুষ সতর্ক থাকুন।