Flickr Gallery

Sunday, December 18, 2011

খবরের কাগজের দাম দু'টাকার কিছু বেশি


মুখ্যমন্ত্রী জনতার মাঝে চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে বসে চা খেতে খেতে মিটিং সেরেছেন বলে গোটা সম্পাদকীয়টি তাঁকে উৎসর্গ করে দিল মাধ্যমটি। ভগবানকে চটিয়ে লাভ কি? কিছু সংবাদমাধ্যম ব্যক্তিস্তুতিতে ব্যস্ত। একটি দৈনিক সংবাদপত্র, যারা বলে তারা তাঁবেদারি করেনা, তারাই ভয় পেয়ে তাঁবেদারি করে যাচ্ছে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর।

ক্যামেরা দেখলেই যিনি অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে দেন তাঁর মহিমা প্রচারের জন্যে যেখানে ক্যামেরা সেখানে তাঁকে যেতেই হয়। সংবাদ কর্মীদের সঙ্গে এই সরকার বেশ কয়েকবার দুর্ব্যবহার করেছে বলে হয়তো ক্যামেরার লেন্স ওঁর দিকে আর তাক করছেনা। তাই যেখানে ক্যামেরা, সেইখানেই পৌঁছে যাও। তাঁবেদারি না করা কাগজটি ভুলেই গেছে তাদেরই এক সংবাদ কর্মী খানিকটা অপছন্দের কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করে বেজায় ধমক খেয়েছিলেন। ‘জরুরি অবস্থা’র অশনি সংকেত দেখে এক প্রস্থ লেখালেখি হল সেই কাগজে। স্লোগানটিও পরিবর্তিত হয়ে গেল। কিন্তু তাঁবেদারি কমল না। হতে পারে মিটমাট হয়ে গেছে। হতে পারে অন্য কোন কাগজ বেশি পাত্তা পেয়ে যাচ্ছিল তাই একটু ফোঁস করে গোঁসা দেখিয়ে দিয়ে আবার তাঁবেদারিতে মনোনিবেশ করল মাধ্যমটি। 

রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন যে সব প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়েছেন তার যথাযথ সমালোচনা তাঁবেদাররা করতে পারবেনা। মাওবাদীদের সঙ্গে সখ্যতার সমালোচনা তাঁবেদাররা করবেনা। কুবুদ্ধিজীবিদের মাওবাদীদের নিয়ে আদিখ্যেতা এবং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর দহরম মহরমের সমালোচনা তাঁবেদাররা করবেনা। একজন মাওবাদী সমর্থক যে ঐ দলেরই সাংসদ, তাঁরও সমালোচনা হতে পারেনা। ১০০ দিনের কাজে এই রাজ্য পিছিয়ে গেল। এই কাজের সমালোচনা করতে গেলে তাঁবেদারি ভুলে বসতে হবে। গোষ্ঠীদ্বন্দের জেরে জেরবার তৃণমূল কংগ্রেস। যার ফলে উন্নয়নমূলক কাজ আটকে যাচ্ছে। এর সমালোচনা তাঁবেদাররা করবেনা। চোলাই খেয়ে মারা গেলে দু’লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এগুলিও আলোচ্য বিষয় নয়। খামখেয়ালিপনা ও নির্বুদ্ধিতার জেরে কৃষকেরা তাদের ফসলের দাম পাচ্ছেনা। এর সমালোচনা করাও তাঁবেদারদের কাছে বেমানান। কিন্তু একটি সভ্রান্ত রাজনৈতিক দলকে ‘দুকান কাটা’ বলতে এদের রুচিতে বাধেনা। অপেক্ষাকৃত দুর্নীতিমুক্ত একটি সর্বভারতীয় দলকে নর্দমার পোকারাই ‘দু কান কাটা’ বলতে পারে। অসময়ে ব্যাঙেও লাথি মারে। দলটির মনে হয় এখন সংসদীয় রাজনীতিতে অসময় চলছে। তাই ব্যাঙের লাথি খেতে হচ্ছে। 

ভবানীপুর থানায় রাতদুপুরে দু’জন দুষ্কৃতীকে ছাড়াতে খোদ রাজা বা এখন রাণীকেই দৌড়োতে হয় সেই কথা মাধ্যমটি ভুলে গেল তাড়াতাড়ি। অনেকের পেনশন আটকে আছে। অনেকের বেতন আটকে আছে। মিথ্যেবাদীদের মুখে মিথ্যে কথার ফুলঝুড়ি ছুটছে। এ সব ভুলে গেছে মাধ্যমটি। আজ পর্যন্ত যত রকম কেন্দ্র সরকার এসেছে তাদের দুর্নীতিকে ছাড়িয়ে গেছে বর্তমান কেন্দ্র সরকার এবং তাদের শরিক তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু সেই দুর্নীতিপরায়ণ মন্ত্রীরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলে তা আজকাল খবর হয়ে যায়। যাবতীয় রেল দুর্ঘটনাকে ছাপিয়ে গেছে বিগত দু তিন বছরের দুর্ঘটনার রেকর্ড। এগুলি কোন খবর নয়। তাঁবেদারি করতে গেলে এসব ভুলে মেরে দিতে হয়। রাজধর্ম পালন করতে গিয়ে দলতন্ত্র কায়েম হচ্ছে এটিও কোন খবর নয়। এগুলি ঐ সংবাদ মাধ্যমের ভাষায় হয়ত অন্য ধরণের রাজধর্মের নমুনা। ৯ ডিসেম্বর দিনভর আমরি হাসপাতালের নীচে এবং পিজি হাসপাতালের চত্তরে ট্যাং ট্যাং করে ঘোরা মানে রাজধর্ম। এ এক অন্য ধরণের রাজধর্ম! তাঁবেদারির শেষ কবে হবে? 

রাজ্যের ২০০ দিনের কাজের রিপোর্টটি সম্পূর্ণ নিরাশাজনক। এগুলি আজকাল রাজধর্মের বাইরের বিষয়। তাঁবেদারি করতে গেলে এগুলির আলোচনা না করাই ভাল। এখনো অনেক দিন রাজধর্ম চালাতে হবে। এখনো অনেক দিন রাস্তার ধারের চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে বসে ক্যামেরার সামনে সরকারি অফিসারদের নিয়ে জরুরি মিটিং করতে হবে। দুর্ঘটনা ঘটবেই। ক্যামেরা যাবেই সেখানে। তাই সেখানে গিয়ে রাজধর্ম পালন করতেই হবে।

রাজ্যের উন্নয়ন যে শুধু মুখের বুলি দিয়ে সম্ভব নয় তা বোঝাতে যাওয়া আহাম্মকি। আমরা যারা বাংলার বাইরে থাকি তারা সবসময়ে রাস্তা ঘাটে একটা প্রবাদ বাক্য বলি। “মুরখ কো দো রুপয়া দে দো, পর দিমাগ মত দো।” অর্থাৎ মূর্খকে দু’টাকা দিয়ে দিও কিন্তু বুদ্ধি দিওনা। কথাটা পশ্চিমবঙ্গের খবরের কাগজগুলির জন্যে অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায়। ঐ রাজ্যে বেশির ভাগ খবরের কাগজের দাম দুটাকা বা তার চেয়ে কিছু বেশি।
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM