আন্না আর মমতা কি এক মঞ্চে বসতে পারেননা? কয়েকদিন আগে দিল্লিতে একটি পুরস্কার বিতরণী সভায় মমতা ব্যানার্জিকে এ বছরের সেরা রাজনীতিবিদের পুরস্কার দিল একটি সংবাদমাধ্যম। তবে উৎকৃষ্ট রাজনীতিবিদ হলেও তিনি যে নিকৃষ্ট প্রশাসক এ বিষয় সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পর থেকে দলতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন। প্রতি অঘটনে প্রাক্তন সরকারকে দোষ দিয়ে নিজের কষ্ট লাঘব করছেন। রাজকোষ শুন্য বলে চিল চিৎকার করছেন। অথচ চোলাই খেয়ে মারা গেলেও আইনত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার রাস্তা পাকা করে বসে আছেন। রাজ্যের উন্নয়ন খাতে যা বরাদ্দ তার এক চিলতে খরচ করতে পারেননি তিনি। বিশাল বিশাল স্বপ্ন দেখে গদি সামলেছেন। কিন্তু দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামলাতেই হিমশিম অবস্থা। আট মাস কেটে গেছে।
ঐ পুরস্কার বিতরণী সভায় আন্না হাজারেকেও পুরস্কৃত করার জন্য আমন্ত্রিত করা হয়। লোকপাল বিল না জনলোকপাল বিল, এই নিয়ে আন্নার ভারত জুড়ে কড়া অহিংস আন্দোলনের জন্যে সংবাদমাধ্যমটি তাঁকেও একটি পুরস্কার দেয়। কিন্তু মঞ্চে মমতার সঙ্গে আন্না হাজারের দেখা হলনা। আন্না এসে উপস্থিত হলে মূখ্যমন্ত্রী মঞ্চ থেকে সরে যান। আবার আন্না চলে যাওয়ার পরে তিনি পুনরায় মঞ্চ আলোকিত করতে হাজির হয়ে যান। ক্যামেরার ফোকাস থেকে মমতার সরতে ইচ্ছা না থাকলেও আন্না এসে তাঁকে খানিকটা বিব্রত করেছেন একথা পরিষ্কার। আন্নার সঙ্গে এক ঘাটে জল খাওয়াতে তাঁর যে অনীহা তাও পরিষ্কার। নয়তো আন্না মঞ্চ থেকে সরে যেতেই আবার তিনি কেন মঞ্চাসীন হলেন!
একথা মমতা বলতে পারবেন না যে আন্না তাঁকে পাত্তা দেননি। আন্না তাঁর রামলীলা অনশন মঞ্চ থেকে একবার মমতার নামেও হাঁক পেড়েছেন। কিন্তু কেন এই বিড়ম্বনা? কেন মমতা এই ভারত প্রসিদ্ধ ব্যক্তিটির সঙ্গে দেখা করলেন না?
হতে পারে বর্তমান কেন্দ্র সরকারের শরিক দল হিসেবে আন্নার সঙ্গে তাঁর দেখা করা মানা। কংগ্রেস পার্টি হয়তো বলে দিয়েছে যে তাদের কোন শরিক যদি আন্নার সঙ্গে কথা বলে তবে তারা বিভিন্ন সুখ সুবিধে থেকে বঞ্চিত হবে। কিংবা সেই সব শরিকদের দুর্নীতি জনসমক্ষে আনা হবে। এরকম হতেই পারে। বিগত ষাট বছরে যতরকম সরকার দিল্লির মসনদ দখল করেছে তার মধ্যে এই সরকার দুর্নীতির সব রকম গন্ডি পার করে গেছে। তাদের শরিকরাও যে ধোয়া তুলসী পাতা হয়ে বসে নেই সেটা না বললেও চলে। কখনোই আন্নার আন্দোলন নিয়ে তাই মমতার দলকে মুখ খুলতে দেখা যায়নি। আন্নার আন্দোলনকে সমর্থন করলে কংগ্রেস ব্ল্যাকমেল করতে পারে। ব্ল্যাকমেল করা কংগ্রেসের পুরোন অভ্যেস। আবার আন্নার আন্দোলনের বিরুদ্ধেও মুখ খুললেও বিপদ। এখন এমন অবস্থা হয়েছে, যে কেউ আন্নার বিরুদ্ধে কথা বললেই পাবলিক তাকে চোর বলে দিচ্ছে। আন্নার সুনাম করলেও কংগ্রেসের কোপভাজন হতে হবে। দুর্নাম করার দুঃসাহস তো এক মাত্র কপিল সিবল এন্ড কোম্পানিই দেখাতে পারেন। অতএব ভায়া আগেভাগে কেটে পড়। মঞ্চ থেকে নেমে পড়।
হতে পারে লোকপাল কিংবা জনলোকপাল বিল নিয়ে মমতার স্বচ্ছ কোন ধারণা নেই। আন্নার সঙ্গে সামনা সামনি দেখা হয়ে গেলে ঐ বিল নিয়ে দু চার কথা বলতেই হত। কিন্তু ওটা খায় না মাথায় দেয়! লোকপাল হোক আর জনলোকপালই হোক, তাঁর গোপালদের চারা পেলেই হল। অন্যদিকে সরকার দলের যাবতীয় সাংসদদের আন্না যাচ্ছেতাই বলেছেন। বর্তমান শাসকরা যে টাকা লুটছে আর এরা ইংরেজ শাসকের চেয়ে কম কিছু নয় তাও তিনি বলেছেন। সাদা গিয়ে কালো লোকেরা এখন রাজত্ব করছে। সরকারি টাকা যে চোরে চুরি করছেনা বরং রাজকোষের পাহারাদাররাই টাকা চুরি করছে। এরকম কথা আন্না রামলীলা ময়দান থেকে ঘোষণা করেছেন। মমতাও সেই পাহারাদারের একজন। তাই তাঁর রাগ হতেই পারে। অতএব ভায়া লাজ ঢাকতে কেটে পড়। মঞ্চ থেকে নেমে পড়।
হতে পারে আন্না মঞ্চে এসেই মমতাকে জিজ্ঞাসা করতেন, “আপনি সিঙ্গুরে ২৬ দিন নিরম্বু উপবাস করলেন কি করে! আমার বেলায় তো ১২ দিন পরেই ডাক্তার বলতে শুরু করল অবস্থা বিপজ্জনক হয়ে যাচ্ছে!” এ কথার উত্তর মমতার কাছে ছিলনা। আন্না আবার অনশনে বসতে পারেন। তাই ২৬ দিন অনশন কি ভাবে করা যেতে পারে তার একটা যৌগিক পরামর্শ তিনি চাইলেও চাইতে পারতেন। এই প্রশ্নের উত্তর দিতে মমতাকে হিমশিম খেতে হত। অতএব ভায়া মান রাখতে কেটে পড়। মঞ্চ থেকে নেমে পড়।