একদিন ধর্মঘট করলে একদিনের বেতন কাটা যেতেই পারে। কিন্তু ভয় দেখিয়ে শ্রমিক ও কর্মচারীদের বশে আনা যেতে পারেনা। শোনা যাচ্ছে চাকরির মেয়াদও একদিন কমিয়ে দেওয়া হবে। তুঘলকি ফরমান ফিরিয়ে নেওয়া হবেনা। কিন্তু তুঘলকি অপশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া যেতেই পারে। প্রতিবাদ করা মানুষের মৌলিক অধিকার। ধর্মঘটের অর্থ, গণতান্ত্রিক উপায়ে প্রতিবাদ করা। এটাই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে লড়াই করার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এই হাতিয়ার যে ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করবে তাকে অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী বললেও ভুল হবেনা।
বাংলায় ‘ওয়ার্ক কালচার’ ফিরিয়ে নিয়ে আসতে গিয়ে সরকারি কর্মচারীদের ধর্মঘটে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল। ‘ব্রেক ইন সার্ভিস’ করা হবে বলা হয়েছিল। ধর্মঘটে শামিল বা ২৮শে ফেব্রুয়ারি অনুপস্থিত সরকারি কর্মচারীদের ‘শো কজ’ নোটিশ ধরিয়ে দিয়ে সার্ভিস ব্রেক করার নোংরা চেষ্টা করার কাজ শুরু হয়ে গেল। সরকারি কর্মচারীদের সংগঠনগুলি যথেষ্ট শক্তিশালী। হুমকি দিয়ে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। বেসরকারি সংস্থাগুলি এই সুযোগে তাদের অসংগঠিত শ্রমিকদের ওপর কষাঘাত হানার আরেকটু বেশি সুযোগ পেয়ে যাবে। অশান্তি বাড়বে। হতে পারে দেশ জুড়ে তুঘলকি ফরমানের বিরোধিতা হবে। এই রাজ্যের বেআইনি আদেশের বিরুদ্ধে সারা দেশে আবার আইনি ধর্মঘট হয়ে যেতে পারে। আখেরে মঙ্গল হবে পশ্চিমবঙ্গের নিষ্কর্মা রাজ্য সরকারের।
তৃণমূল দলটাই অশান্তিবাজের দল। বিগত নয় মাসে রাজ্যে যতরকম অশান্তি হয়েছে তার বেশির ভাগ ঘটনার উৎস ছিল তৃণমূলীরা। চুরি, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, হত্যা, ধর্ষণ, শিক্ষক পেটান ইত্যাদি বিভিন্ন অশান্তির মূলে আছে তৃণমূল। দলনেত্রীও অশান্তিবাজ। যখন সরকার বিরোধী ছিলেন তখন কোন রকম সর্বদলীয় বৈঠকে যোগ দেননি। উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির মূলে অশান্তি পাকিয়ে ন্যানোকে ভবিষ্যত না বানাতে পেরে ভূত বানিয়ে দিয়েছেন। নন্দীগ্রামে ফন্দি এঁটে সারা পৃথীবিতে হইচই ফেলে দিয়েছেন। তের দিন রাস্তা অবরোধ করেছেন। ছাব্বিশ দিন নিরম্বু উপবাস রেখেছেন। বিধানসভায় দলীয় নেতাদের সঙ্গে সদলবলে পৌঁছে গালিগালাজ করেছেন। বিধানসভার সুপ্রাচীন আসবাবপত্র ভেঙে অনিষ্ট করেছেন। গরিমামন্ডিত বিধানসভাকে কলুষিত করেছেন। দিনের পর দিন ‘বন্ধ’ ডেকেছেন। যখন তখন অবরোধ বিক্ষোভের নামে অশান্তি করেছেন। কিন্তু তখনকার সরকারপক্ষ ‘রাজনৈতিক মোকাবিলা’র করার অভিপ্রায়ে এই দলটির বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা নেয়নি। কোন রকম প্ররোচনায় পা দেয়নি। এবং এইরকম অশান্তিবাজদের দৌরাত্ম্য সহ্য করেছে। অশান্তি বেড়ে গেছে।
অনেকে আশা করেছিলেন ‘জয়নগরের মোয়া’ হাতে পেয়ে অশান্তিবাজরা কিছুদিন খুশি হয়ে চুপ থাকবে। অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন এদের হাতে রাজ্যভার গেলে সাধারণ মানুষের বিপদ বাড়বে। আশঙ্কাই প্রকট হয়েছে। মানুষ আশাহত হয়েছেন। রাজ্যে অশান্তি বেড়েই চলেছে। ‘রাজ্য জ্বলছে’ বলছেন হাইকোর্টের বিচারপতি। ‘আগে রাজ্য নিরাপদ ছিল’ বলছেন রাজ্যপাল। মাত্র নয় মাস হয়েছে। এখনও অনেকদিন দেখার বাকি আছে।
অশান্তি পাকিয়ে দিলে লাভ হবে তৃণমূলের। আখেরে লাভে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী। শিল্পপতিরা জমি না পেয়ে পালাচ্ছেন। শিল্পপতিরা পালাচ্ছেন তোলাবাজদের ভয়ে। কিন্তু ‘ওয়ার্ক কালচার’-এর ধুয়ো তুলে কর্মচারীদের উসকে দিতে বেতন কাটা সর্বোপরি ধর্মঘট করার শাস্তি হিসেবে চাকরির মেয়াদ কমিয়ে দেওয়ার ফরমান পেলে আবার ধর্মঘট হতে বাধ্য। স্বাভাবিক কাজকর্ম শিকেয় উঠতে পারে। রাজ্য সহ দেশ জ্বলে উঠতে পারে। আগুল জ্বলতে শুরু করলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী অত আগুন সামলাতে পারবেন না। কিন্তু ফন্দি কষে শিল্পপতিদের পালানোর পেছনে ‘যুক্তি’ খাড়া করে দিতে পারেন। চক্রান্ত চলছে। চক্রান্তের চাকা সেই দিকেই গড়িয়ে চলেছে। আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারলে উন্নয়নমূলক কাজের চেয়েও বড় করে লেখা থাকবে আগুনের কথা। আগুন নিয়ে লোকে ভাববে। আগুন নিয়েই শঙ্কিত থাকবে। আগুন নেভানোর ব্যবস্থাতেই সরকার দমনাত্মক ব্যস্ততা দেখাবে।
সেই সুযোগে রাজ্য সরকার চক্রান্তের পিন্ডি অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাইবে। প্রচারমাধ্যম ফলাও করে লিখবে। ‘রাজ্যে উন্নয়ন হওয়ার প্রধান বাধা’ হয়ে দাঁড়াবে শ্রমিক ও কর্মচারীরা। তাদের ‘ওয়ার্ক কালচার’ নিয়ে সারা বিশ্বে আবার চর্চা শুরু হয়ে যেতে পারে। শিল্প সম্ভাবনার ছিটেফোঁটাও অবশিষ্ট নাও থাকতে পারে। নন্দীগ্রামের ফন্দির চেয়েও সূক্ষ্ম কোন অভিসন্ধি না থাকলে তুঘলকি পাগলামি কোন সুস্থ মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়। প্রলয় নৃত্যের মঞ্চ বাঁধার ফন্দি চলছে জোরকদমে।