Flickr Gallery

Thursday, January 19, 2012

ছারখার করে দে মা, লুটে পুটে খাই।


গুড়ের ওপর মাছি বসেছে। চিটে গুড়। এক ঠিলি চিটে গুড়ের হাঁড়ি ভাঙল। হামলে পড়ল মাছির গুষ্টি। পাবলিক হয়রান। চারদিক মাছিতে ভ্যানভ্যান। মাছির ব্রেন বলে কিছু থাকেনা। মাছির মাথায় বুদ্ধি হয়না। তাই গুড়ের ওপর যে মাছির দল হামলা করেছে তাদের মাথায় বুদ্ধি নেই। মাছি রোগ ছড়ায়। মাছি মহামারীর বাহক। তাই পটাপট লোক মরছে। মাছির চোখ বড় বিচিত্র। যা দেখে সব টুকরো টুকরো দেখে। এই মাছির দলও তাই খন্ডচিত্র দেখে। মাছি তাড়াতাড়ি বাড়ে। এরাও বেড়ে চলেছে। মাছির সংখ্যা বাড়ছে। বড় মাছি। মেজ মাছি। সেজ মাছি। ন’ মাছি। ছোট মাছি। নেতা মাছি। মাতাল মাছি। আমলা মাছি। ঘাপলা মাছি। কানা মাছি। পাগলা মাছি। মাছিময় জগৎ।

বুদো এখনও বেঁচে আছে। মাছিদের তাই জ্বালা বেশি। বুদোকে মেরে না ফেলতে পারলে নিশ্চিন্তে গুড় খাওয়া যাচ্ছেনা। রাণী মা, তুমি উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে করে দাও। তবে আমরা উদোর ঘাড়ে চেপেই বুদোর পিন্ডি চটকে খাব। 

মোদ্দা কথা হল বাংলার গুড়ের ওপর যে সব নেতা মাছি আর আমলা মাছিরা এসে বসেছে তারা চোখে দেখতে পায়না। মাছিরা গুড় ছাড়া কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা। চাষী মরছে দেনার দায়ে। নেতা মাছিরা কানামাছি খেলছে। চাষী মরার কারণ খুঁজে পাচ্ছেনা। রাণী মাছি বলে ফেলল, ওসব চাষীফাষি দেনার দায়ে মরছে না। ওরা সব রোগে মরেছে। যারা মরছে তারা চাষী নয়। ওদের নাম চাষীর খাতায় নেই। রাণী মাছি বলল, তোমরা পটল তোল, আর আমি বাজাই বাঁশি। রাণী মাছি গুড় চেটে যাচ্ছে। তাই না দেখে নেতা মাছিরা আহ্লাদে আটখান। রাণী মাছি কা জবাব নেহি! নেতা মাছি, মাতাল মাছি, ঘাপলা মাছি, পাগলা মাছি সবাই মিলে গুড় চেটে যাচ্ছে। 

আমাদের রাণী মাছি জিন্দাবাদ। উনি তো বলেই দিয়েছেন এরপর থেকে যা হবে তার সবটাই তিনি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে দেবেন। মাতাল মাছি বলল, ঠিক কথা। তার মানে বুদোই মদে বিষ মিশিয়েছিল। পাগল মাছি বলল, একদম ঠিক কথা। মাওমাছিকে তবে বুদোই ডেকে এনেছিল। কানা মাছি বলল, খাঁটি সত্যি কথা। বুদোর রাজত্বে দেশের কোন উন্নতি হয়নি। মাতাল মাছি ভ্যান ভ্যান করে আবার উড়ে এসে বলে গেল, এই শোন, জলেও বুদো বিষ মিশিয়েছিল। মাতাল মাছি গুড়ের মধ্যে শুঁড় ঠেকিয়ে জবাব দিল, তুই ঠিক বলেছিস। যা এখন, ভ্যানতাড়া করিস কেন! গুড় খেতে দে। তুইও খা। আয় রে আয়। ছুটে ছুটে আয়। আরও মাছির দল ভ্যান ভ্যান করে গুড়ের ওপর জুটল। 

রাণী মাছি বলল হাসপাতালে বাচ্চা মরছে। বুদোর দোষে মরছে। এতদিন বুদোরা যে সব যন্ত্রপাতি বসিয়েছে, ওসব দিয়ে বাচ্চা বাঁচানো যায় না। রাণী মাছির মুখ থেকে এই কথা শুনে আমলা মাছি বলল, বেড়ে মজা ভাই। চল গুড় খাই। আমার নাম আমলা মাছি। আমি রাজার জামাই। আজ থেকে কিছু হলে বুদোর ঘাড়ে দোষ চাপবে। চোখ কান বন্ধ রাখ। কিচ্ছু চিন্তা নাই। গর্ভবতী হাসপাতালে এলে ফিরিয়ে দিল। রাস্তায় প্রস্রব হয়ে গেল। প্রসূতি মারা গেল। আবার গর্ভবতী এল। আবার ফিরিয়ে দেওয়া হল। নাকি এক মাস পরে বাচ্চা হবে। কিন্ত সেই দিনই রাস্তার মাঝেই পোয়াতির বাচ্চা কেঁদে ককিয়ে বেরিয়ে এল। আমলা মাছি বলল, ছাড় তো। আমরা সব ম্যানেজ করে নেব। রাণী মাছি বলেছে বুদোর দোষ। আমরা বলব পোয়াতি আসেই নি। কানা মাছি তুই গুড় খা। নিশ্চিন্তে থাক। রাণী মাছিকে এখন বুদোয় পেয়েছে। উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপবে। তোর পিন্ডি কেউ চটকাতে পারবেনা।

কানা মাছি ভোঁ ভোঁ। যখন পাবি বুদোকে ছোঁ। এই সব মাছিগুলো চোখ খোলা রেখে কানামাছি খেলছে। সব জায়গাতেই বুদোকে দেখছে। মানুষ বিরক্ত হলে গুড়ের ওপর থেকে মাছি তাড়িয়ে ছাড়বে। মাতাল মাছি বলল, ধুর ব্যাটা। মানুষই তো হাঁড়ি ভেঙে হাটে গুড় ছড়িয়েছে। মানুষ কি অতই বোকা! ওরা কি জানতনা হাটে হাঁড়ি ভাঙলে মাছি ভ্যানভ্যান করবে! মানুষ জেনে বুঝেই গুড়ের হাঁড়ি ভেঙেছে। তাই চল রে চল। গুড়খেকো মাছির দল। সবাই মিলে গুড় খাই। আর রাণী মাছির ভজন গাই। পাবলিক যাক ভোগে। চাষী মরুক রোগে। গোলযোগ শুরু হওয়ার আগে গুড় খেয়ে নে। মরবি তো জানি। তাই গুড় খেয়েই মর। 
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM