কখনো কখনো মনে হচ্ছে আমরা এই রাজ্যে ‘মাদারি কা খেল’ দেখছি। মানে বাঁদর নাচানোর খেলা। মাদারিরা তাদের পোষা বাঁদর নাচানোর সময়ে বাঁদরদের অনেকরকম প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে। যেমন, এই হুনুমান কলা খাবি? বাঁদরও ঘাড় নাড়িয়ে জবাব দেয়। হ্যাঁ পেলেই খাব। তারপর মাদারি বলে, জয় জগন্নাথ দেখতে যাবি। বাঁদরও ঘাড় নাড়া দেয় আবার। মানে হ্যাঁ সু্যোগ পেলেই যাব। মাদারি বাঁদর খেলা দেখিয়ে মানুষের মনোরঞ্জন করে পয়সা রোজগার করে।
এখন এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মাদারির কোন পার্থক্য নেই। মঞ্চে আমলাদের তুলে তাঁদের পেছনে দাঁড় করিয়ে রেখে মাঝে মাঝে নিজের বক্তব্যকে জোরালো করে তোলার জন্যে বলছেন, কি ঠিক বললাম তো? পেছন থেকে এক আমলা ঘাড় নেড়ে জবাব দিলেন, হ্যাঁ ঠিক বলেছেন। তিনি মাঝে মাঝে বলছেন, কত উন্নতি করে দিয়েছি তা আমার মুখ দিয়ে না বলিয়ে আপনারাই বলে দিন। তিনি বলছেন, কটা স্বাস্থ্যকেন্দ্র খুলেছি তা আপনারা নিজের মুখে বলুন। আসুন এদিকে আসুন। এই নিন মাইক। বলে ফেলুন। আমলারা জবাব না দিলে নিজেই তার জবাব দিয়ে দেন। মাদারিরাও এমনি করে জবাব দেয়। যখন বাঁদরগুলি একটু অন্যমনস্ক হয়ে যায় তখন দড়ির টান আর লাঠির দিশা বুঝতে না পেরে অন্যরকম কিছু করলে বাঁদরকে যা জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তার উত্তর মাদারি নিজেই বলে দেয়।
আমলারা এখন ঘাড় নাড়তে না পারলে থাকতে পারবেনা। আমলাদের দলীয় সভায় নিয়ে এসে তোতাপাখির বুলি বলিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পাবলিক তো দেখতে পেলনা! তাই মুখ্যমন্ত্রী বললেন, আপনি এদের সামনে এসে বলুন যে আমি ভুল বলিনি। আমলা এবার মাইক ধরলেন, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন ঠিক বলেছেন। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে ‘মাদারি কা খেল’ চলছে। মাদারিও তো তার পোষা বাঁদরদের দর্শকদের সামনে নিয়ে এসে বলিয়ে নেয় সবকিছু।
পার্কস্ট্রিট ধর্ষণকান্ডের পর একজন পুলিশ আমলা সাংবাদিকদের ডেকে ঘটা করে চাউড় করে দিলেন ঘটনাটি আদৌ ঘটেনি। এসব মিথ্যে কথা। কারণ মাদারি আগেই বলে দিয়েছে, এসব সাজানো ঘটনা। কেতুগ্রাম ধর্ষণকান্ডের পরও একরকম ‘মাদারি কা খেল’ দেখানো হল। মেডিক্যাল রিপোর্টে ধরা পড়েছে ধর্ষণ ‘নেগেটিভ’. ধর্ষণের ‘পজিটিভ’ বা ‘নেগেটিভ’ বলে কিছু হয় কি? পেছনে দাঁড়ানো এক আমলাকে দিয়ে তার সালিশ্যি মানিয়ে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আবার মনে হল আমরা ‘মাদারি কা খেল’এর চরিত্র খুঁজে পেলাম। এইরকম উদাহরণ ভুরিভুরি। মাথায় করে মহাকরণ নিয়ে গিয়ে জেলায় জেলায় মিটিং করা মানে ‘মাদারি কা খেল’ দেখিয়ে দর্শককে ভুলিয়ে রাখা। ৩৪ বছরে এমন হয়নি কিন্তু। ৩৪ বছরের যা যা হয়নি তা এখন করতে হবে। তাই মাদারির খেলা বেশি করে দেখাতে হবে।
আবার কখনো মনে হচ্ছে আমরা কোন নাটকের মঞ্চে বসে আছি। এখানে সবকিছুই সাজানো। মঞ্চ সাজানো। অভিনেতাদের কথোপকথন সাজানো। এইসব দেখে দর্শকাসনে বসে বসে ভাবছি মাদারি এখন মঞ্চে তার বাঁদর নিয়ে চড়েছে। তাই সবকিছুই সাজানো। জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা সাজানো ঘটনা ছিল। পার্কস্ট্রিটের ধর্ষণকান্ড সাজানো ঘটনা। যাদবপুরের গাঙ্গুলিবাগানে সিপিআইএম-এর জোনাল অফিস ভাঙচুর সাজানো ঘটনা। কেতুগ্রামের ধর্ষণকান্ড সাজানো ঘটনা। রাজ্যের কৃষকমৃত্যও সাজানো। শিশুমৃত্যুও সাজানো। সিপিআইএম-এর প্রাক্তন বিধায়ক প্রদীপ তা’র হত্যাও নাকি সাজানো। বিভিন্ন জায়গায় সাংবাদিক নিগ্রহ মানে সাজানো ঘটনা। রাজ্যটি এখন এক বিউটি পার্লার। এখানে সবকিছুই সাজানো থাকে। এখান থেকে সবাই সেজেগুজে বেরিয়ে আসে।
রাজ্যের নৈরাজ্যের প্রেক্ষাপটও সাজানো। এখানে সব কিছুই সাজানো। এখানে মাদারি আর তার গুটিকয়েক বাঁদর রোজ সেজেগুজে বেরিয়ে এসে কয়েকটি সাজানো কথা বলে দিচ্ছে। পাবলিক তাই শুনে বেজায় খুশি আছে। মানুষের মতিভ্রম হলে রজ্জুতে সর্পভ্রম হয়। এই রাজ্যের মাদারিরও তাই হয়েছে। যত দোষ নন্দঘোষ নামক রোগগ্রস্ত হয়ে পড়েছে মাদারি। বাঁদরেরা মুচকি মুচকি হাসছে। দাঁত খিঁচিয়ে ওরা তাই বলাবলি করছে। মতিভ্রম হলে মানুষ বেশিদিন বাঁচতে পারেনা। তাই মাদারির আয়ুও বেশিদিন নেই। বাঁদরেরা দিন গুনছে। মাদারির হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার আগে তাদের ‘মাদারি কা খেল’এ চারিত্রিক অভিনয় চালিয়ে যেতে হবে। দর্শককে আনন্দ দিতে হবে। এমনি করেই মুক্তির দিন গুনতে হবে।