Flickr Gallery

Monday, October 7, 2019

এখন আমরা পদ্মফুলের পেঁয়াজি খাচ্ছি


পুরোন দোকানদারের পেঁয়াজির ওপর ছিল দুর্নীতির আস্তরণ। দেওয়া হত কর্পোরেট প্রীতির ঠোঙায় ভরে। তাতে লঙ্কার বদলে ছিল গরীবগুর্বোদের প্রতি সমবেদনা। এই একরকম পেঁয়াজি বছর ষাটেক ধরে খেয়ে খেয়ে মানুষের মুখ হেজে গিয়েছিল। স্বাদ বদলানোর জন্যে মানুষ চাইছিল নতুন ধরণের পেঁয়াজি। সঠিক সময়ে আরেক দোকানদার বাজারে নিয়ে এল পদ্মফুলের পেঁয়াজি। এতে পেঁয়াজের বদলে দুর্বল মানুষের কুচি মেশানো। বেসনের বদলে ধর্মের গুঁড়ো। লঙ্কার বদলে তিন তালাক। নুনের বদলে রামমন্দির। তার মধ্যে মেশানো হল ‘ব্যান ৩৭০’ ব্র্যান্ডের মশলা।

দেশপ্রেম ব্র্যান্ডের আগমার্কা তেলে ভাজা হতে শুরু হল পেঁয়াজি। কারিগর কিছু উন্মাদ রাঁধুনি। এরা আবার পেঁয়াজি ছাড়া আর কিছুই রাঁধতে জানেনা। প্রায় একশো বছর ধরে এই রাঁধুনিরা এইসব উপাদান দিয়ে মানুষকে পেঁয়াজি খাওয়াতে চাইছিল। মানুষ খাচ্ছিলনা। জানলে তো খাবে! আসলে দোকান তৈরি ছিলনা। তাই মানুষ এই পেঁয়াজি কেনার সুযোগ পেত না। এখন পাচ্ছে। তাই খাচ্ছে। তবে দুর্নীতির আস্তরণে মোড়া আর কর্পোরেট প্রীতির ঠোঙায় পোরা নতুন স্বাদের পেঁয়াজি পেয়ে মানুষ আহ্লাদের চরমে।

তারপর বড় বড় দোকান খুলে গেল। অনলাইন ব্যাপার স্যাপার! ঘন্টার পর ঘন্টা বিজ্ঞাপন চলতে শুরু করল। আগে সাবান, বিস্কুট আর সিমেন্টের বিজ্ঞাপনের পরে দেশের খবর শোনা যেত। এখন সাবান আর মশা মারার ধুপের খবর শেষ হওয়ার পরে পেঁয়াজির বিজ্ঞাপন শুরু হয়ে যাচ্ছে। পেঁয়াজির গুণবত্তা নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা আলোচনা। পেঁয়াজির উপাদানের চুলচেরা বিশ্লেষণ। টেবিলের ওপর স্বচ্ছ ভারতীয় টেবিল ক্লথ। তার ওপর ‘আচ্ছে দিন’ মার্কা ফুলদানি। পুরোন ফুল শুকিয়ে গেছে। এখন তাতে ‘নঈ ইন্ডিয়া’ নামের একটা কাঠি দিয়ে পদ্মফুল গোঁজা। চেয়ারে বসেছেন দু’দশ জন বোদ্ধা। ওরাই নাকি তার্কিক যোদ্ধা। যুদ্ধ করছেন। বেসনের রং নিয়ে তর্ক চলছে। লঙ্কার ঝাল নিয়ে বাকবিতন্ডা তুঙ্গে। তেল আর নুনের কোয়ালিটি নিয়ে গল্প চলছে। মানুষ বিজ্ঞাপন দেখতে দেখতে পেঁয়াজি খেয়ে যাচ্ছে।

পেঁয়াজি খাওয়ার জন্যে মানুষের ঢল নামল। বোতাম টিপে নিজের পছন্দের পেঁয়াজি অর্ডার করেছিলাম ‘ইভিএম অ্যাপ’-এ। অর্ডারের ফলাফল বেরোল। দেখা গেল দেশের বেশিরভাগ মানুষ পেঁয়াজি খেতে চাইছে। তাই এখন লাইন দিয়ে পেঁয়াজি কিনছি আমরা। তাই অর্ডারের লাইন শেষ হলেও পাইপ লাইনে থাকা মেনু থেকে অন্যান্য আইটেম পাতে পড়তে শুরু করে দিল। নোটবন্দীর পেঁয়াজি খেতে লাইন পড়ল ব্যাঙ্কে। তারপর এনআরসি-র পেঁয়াজি খেতে লাইন পড়তে শুরু হয়ে গেল বিভিন্ন দফতরে। আধার কার্ডের লাইন। ভোটার কার্ডের লাইন। র‍্যাশন কার্ডের লাইন। এই লাইন ধীরে ধীরে লম্বা হয়ে যাচ্ছে। পেঁয়াজির দোকানদার লাইন দেখেই বুঝতে পারছে পেঁয়াজির ডিম্যান্ড বেড়েছে। তাই আরও বেশি করে পেঁয়াজি ভেজে যাচ্ছে।

পদ্মফুলের পেঁয়াজির মধ্যে একটা নেশা আছে। এই পেঁয়াজি খেলেই মানুষের মনে দেশপ্রেম চাগাড় দিয়ে উঠছে। আগমার্কা ঝাঁজালো ঢেকুর উঠছে। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষজন বলাবলি করছে ভুল হয়েছে এইরকমের পেঁয়াজি খেয়ে। দেখা যাচ্ছে এই পেঁয়াজি খেলে বদহজমের রোগ ধরছে। বমি হচ্ছে। উঠে আসছে বিষাক্ত উপাদানগুলো। পরিবেশ আর সমাজ দুর্গন্ধে ভরে যাচ্ছে। দোকানদার আরও পাঁচবছর থাকবে। নাকি পঞ্চাশ বছর! লিজ না শেষ হলে তোলাও যাবেনা। ততদিন নানারকম পেঁয়াজি ভাজা চলবে। আমাদেরও তাই খেয়ে বাঁচতে হবে।
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM