Flickr Gallery

Sunday, May 17, 2020

আত্মা নির্ভর দুঃসাহসী আক্ষেপ ও সংস্কার


সজনে গাছের মগডালে ওঠার মতো সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে একবার আমাকে অনেক আক্ষেপ করতে হয়েছিল। বন্ধুদের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করে দুটাকার বিড়ির বাজি রেখে আমি তরতর করে সজনে গাছের মগডালে চড়তে শুরু করেছিলাম। বেশি দূর উঠতে পারিনি। তার আগেই গাছের মালিককে রে রে করে তেড়ে আসতে দেখে আমার বন্ধুরা আমাকে একলা ফেলেই ভ্যানিশ হয়ে গেল। গাছের মালিক বড় ডান্ডা নিয়ে নারকেল খোঁচানোর মতো আমাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলল। মালিকের রাগ ঠান্ডা হতে না হতেই মালিকের ছেলে নিচে থেকেই ঢিল ছুঁড়ে আমার ডান হাতটা অকেজো করে দিল। এরপর মালিক গিন্নিকে ফুটন্ত গরম জল নিয়ে তেড়ে আসতে দেখে গ্রামের লোক আর স্থির থাকতে পারলনা। আমার সমর্থনে ওদের তিনজনের সঙ্গে ঝগড়া বাধিয়ে দিল। সেই সুযোগে আমি কষ্ট করে গাছ থেকে মাটিতে নেমে কেটে পড়ে সে যাত্রায় নিজের প্রাণ বাঁচিয়ে ছিলাম। তাই যে যখনই একটা করে সাহসী পদক্ষেপ নেয় আমার মনে পড়ে যায় সজনে গাছের মগডালে ওঠার মতো সাহসের কথা।


কড়া পদক্ষেপ নিয়েও আমার অভিজ্ঞতা অসীম। আমি জানি রাত আটটায় টিভিতে ঘোষণা করে সেই ঘোষণা ঠিক রাত বারোটা থেকে বাস্তবায়িত করার নাম কড়া পদক্ষেপ। ঠেকে শিখেছি। ঠকে শিখেছি এসব। টাকা বাতিল হওয়ার মতো সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে আমি কেন দেশটাও কম ভুগছেনা। আমি আজকাল ‘ঠিক রাত বারা বাজে’ শুনলেই ক্ষেপে যাই। দুশ্চিন্তায় মনটা কেঁপে কেঁপে ওঠে। ছাপোষা পাবলিক ভাই। ঠিক রাত বারোটার পরেই হয়তো আমাকে দুহাজার মাইল হেঁটে ঘরে ফেরার মতো সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে। হয়তো উপোস করে জল না পেয়ে মাইলের পর মাইল খালি পায়ে হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে মাঝরাস্তায় লরির ধাক্কায় মরে খবর হয়ে যেতে হবে। কিংবা পুলিশের লাঠির ঘায়ে মাথা ফাটিয়ে আবার সাহস করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে। 

আত্মনির্ভর হওয়া কাকে বলে তা এবার বুঝতে পারছি। আত্মনির্ভর হতে গেলে সাহসী আর কড়া পদক্ষেপ নিয়ে ‘সংস্কার’ করতে হবে। কেউ যদি আত্মনির্ভর হতে চায় তবে প্রথম দফায় নিকট আত্মীয়দের হাতে বাড়ির আসবাবপত্র বেচে দিতে হবে। তারপর নিজের জামা কাপড় বেচে দিন। তারপর শুরু করুন সংস্কারের কাজ। হেঁসেলটার ৯০% সংস্কার করে ফেলুন। অর্থাৎ নিকট আত্মীয়দের কাছে বন্ধক রেখে দিন। নয়তো ৭৯% বেচে দিন। তারপর বাড়িটার ৫০% সংস্কার করে ফেলুন। মানে বিক্রি করে দিন। এইসব সংস্কার পুরো হয়ে গেলে যখন আর কিছুই বিক্রি করার মতো থাকবেনা তখনই আপনি সঠিক ভাবে আত্মনির্ভর হয়ে যাবেন। কারণ আপনার কাছে আর কিছুই তো থাকল না। নিজের ওপর নির্ভর না করলে আপনার আর কোন উপায় থাকল না। 

আমাদের দেশ আত্মনির্ভর বা স্বনির্ভর ছিল নাকি হবে তা নিয়ে আমার কোনও চিন্তা নেই। তবে দেশটা আত্মার ওপর নির্ভর হয়ে গেছে সেটুকু বুঝতে পারা যায়। একদিকে রামের আত্মা জেগে উঠেছে। আরও নানারকম আত্মারা গাছ থেকে নেমে আসছে। মামদোবাজি চলছে। দেখাদেখি রোজ রাত আটটার সময়ে এক সশরীরি আত্মা একের পর এক সাহসী আর কড়া পদক্ষেপ নিয়েই চলেছে। একের পর এক সংস্কার করেই চলেছে। এইসব নিয়ে আমার কোন ভ্রূক্ষেপও নেই। আমি বিন্দাস আছি ভাই। করোনার ভয়ে বাড়িতে বসে আছি আর গুলগল্প ফেঁদে যাচ্ছি। আর কেঁদে যাচ্ছি। 

[ করোনা সংক্রান্ত সংক্রমণ ১৭ মে, ২০২০ ]
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM