Flickr Gallery

Saturday, February 11, 2012

আমার চেয়ে তোমার দুঃখ বেশি তাই আমি সুখী

‘ইপসস’ একটি গ্লোবাল রিসার্চ কোম্পানি। ২০০৭ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০১০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত এই সংস্থাটি ২৪টি দেশে একটি সার্ভে করেছে। এদের উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীর সুখীতম দেশ খোঁজা। ওরা খুঁজে দেখিয়ে দিয়েছে অর্থই অনর্থের মূলে। ইন্দোনেশিয়ার মানুষপ্রতি রোজগার আমেরিকার মানুষপ্রতি রোজগারের ছয় ভাগেরর এক ভাগ। কিন্তু সার্ভে অনুযায়ী বিশ্বের সুখীতম দেশ ইন্দোনেশিয়া। ওই সার্ভের হিসেব অনুযায়ী আমেরিকায় এখন ৭২ শতাংশ অসুখী মানুষের বাস।
সার্ভে প্রমাণ করে দিয়েছে গরীবরাই বেশি সুখী। ধনীদের অসুখ বেশি। অর্থাৎ অর্থই অনর্থের মূলে। যাদের কিছুই নেই তারা সামান্য কিছু পেলেই আহ্লাদে আটখানা হয়ে যায়। ভারতের অবস্থাও তাই। এদেশের একটি রিপোর্ট বলছে ভারতের প্রায় আশি শতাংশ মানুষ দৈনিক কুড়ি টাকার নিচে রোজগার করে। অথচ ভারতীয়রা সুখের সাগরে গা ভাসিয়েছে। সার্ভে বলছে সুখী মানুষের সংখ্যা বিচার করলে ভারত এখন জগৎসভায় শ্রেষ্ঠতর আসন নিয়ে ফেলেছে। ৪৩ শতাংশ ভারতীয় এখন পরমসুখে আছে। মানে কুড়ি টাকার নিচে রোজগার করেও মানুষ এখানে সুখে থাকে। সেলুকাসই বিচিত্র ছিল। কি করে তখন যে এই দেশটাকে সঠিক চিনল কে জানে! 
চীনের ব্যাপারটা পুরোপুরি উল্টো। ২০১১-র রিপোর্ট অনুযায়ী চীনে দারিদ্র্যরেখার নিচে বসবাসকারী জনসংখ্যা মাত্র ৩ শতাংশ। অথচ চীনে অসুখী মানুষের সংখ্যা ৮১ শতাংশ। অর্থাৎ সার্ভে প্রমাণ করে দিচ্ছে মানুষের সুখের সঙ্গে আর্থিক অভাব অনটনের কোন সম্বন্ধ নেই। মানে মানুষের দুঃখ দুর্দশা দূর করার জন্যে আর্থিক স্বাচ্ছল্য একেবারেই গৌণ। 
আমার যদি একটা এরোপ্লেন থাকত তবে তাতে চড়ে ঘুরতে পেরে আমার অসুখ বাড়ত। কারণ সব সময়ে মনে হত যদি উড়তে উড়তে গোঁত্তা খেয়ে প্লেনটা মাটিতে আছাড় খেয়ে পড়ে তবে তো ইহলীলা সাঙ্গ! প্লেনের জানলায় এক চিলতে ধুলো দেখলেই চড়াং করে রাগ চড়ে যেত। এত টাকা মাইনে দিয়ে প্লেন পরিষ্কার করার মেথর রেখেছি, তাতেও ধুলো! ককপিটে কাক বসে থাকতে দেখলে সেই কাকের বিষ্ঠা পরিত্যাগের কথা কল্পনা করে রেগে যেতাম। অত টাকা দিয়ে প্লেন কিনে তার মাথায় কাকের গু! ভেতরের সিটগুলোর তোয়ালে অগোছালো দেখলেও রেগে যেতাম। প্লেন আছে বলে গাড়ি চাপলেও রাগ হত। যান জটে ফেঁসে গিয়ে গাড়ির মধ্যে বসে থাকতে অস্বস্তি হত। শুধু ভাবতাম কেন যে এখন পর্যন্ত উড়ুক্কু গাড়ির কোন ব্র্যান্ড বাজারে এল না! এই ভেবেই আমার রাগ হত। উড়ুক্কু গাড়ি যতদিন না বেরোচ্ছে ততদিন গাড়িতে চাপতে গেলেই রাগ হয়ে যেত। রাগ হলেই অসুখ বাড়ত। 
তাই প্লেন কিনতে পারব না বলে সুখে আছি। আঙুর ফল টক ভেবেই সুখে থাকি। তাছাড়া অত টাকা থাকলে পাহারা দেওয়ার চিন্তা করে সুখ নষ্ট হয়ে যেত। 
আমার তো কিছুই নেই। একবেলা উপোস করে অন্যবেলা আধপেটা খেতে পেলে আমি আনন্দে আহ্লাদিত হয়ে যাই। যাক তাও তো কিছু পেটে গেল! গরমে কোদাল দিয়ে মাটি কেটে ঘাম ঝরিয়ে দু’দন্ড গাছের তলায় বসতে পেলে আরাম পাই। তাইতেই সুখী হয়ে যাই। বর্ষায় যখন ঘরদোর ভেসে যাচ্ছে তখন নিজের ধানের বস্তা সামলানোয় ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কাজে থাকি বলে কোন দুঃখ হয় না। কিন্তু বর্ষা শেষ হলে, চনমনে রোদ উঠলে মনটা আবার আনন্দে উথলে ওঠে। যাক, ধানগুলো এ যাত্রায় বেঁচে গেল। ছেঁড়া কাঁথা গায়ে চাপিয়ে শীতের রাতে ঠকঠকিয়ে কেঁপে সকালের রোদে উবু হয়ে বসে যখন বিড়ি খাই তখন সুখে চোখে ঘুম ধরে। ছেঁড়া লুঙ্গি পরে ঘোরাফেরা করতে হয়। ফাটা জামায় ছোপ ধরা। খুব নোংরা হয়ে তেলচিটে ধরলে সোডার জলে ফুটিয়ে নোংরা সাফ করে ওই দুটো আবার পরলে আনন্দে বুক ভরে যায়। নিজেকে আমার কল্পনার আকবর বাদশার সঙ্গে এক খাটে বসিয়ে দিই তখন। কে বলবে উনি আকবর বাদশা আর আমি এক চাষা! পান্তা ভাতে নুন আর ছোলার বদলে কোনদিন যদি গরম ভাতে চুনোমাছের চচ্চড়ি খেতে পাই সেদিনও চরম সুখ আমার। পুজোর সময়ে ফাটা লুঙ্গির বদলে একটা লুঙ্গি কিনি। নতুন। তাতেও সুখ। আমার সুখের অন্ত নেই। সার্ভে কোম্পানি রিসার্চ করে বের করে দিয়েছে আমারই সুখ বেশি। আমাকে আনন্দ দিয়েছে। আমার আজ দু’গুণ সুখ। গোলায় দশ বস্তা ধান ছিল। বস্তাপ্রতি মাত্র পঞ্চাশ টাকা লোকসানে বেচে দিয়েছি। নিতাইয়ের কাকা আমার পরে ধান বেচতে গেল। ওর লোকসান হল একশো টাকা বস্তায়। ওর লোকসান বেশি দেখে আমার সুখ বাড়ল। অন্যের অসুখ দেখলে আমার সুখ বাড়ে। তাই তো দেশে যত বেশি অসুখী লোক বাড়বে আমার তত সুখ বেড়ে যাবে। আমি যে দুঃখ দেখেও সুখী হয়ে যাই।
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM