Flickr Gallery

Monday, September 9, 2019

ফেকুচন্দ্র ভেকুচন্দ্র নেকুচন্দ্র সেকুচন্দ্র চিনে নিনঃ মাকুচন্দ্র


রাজা ফেকুচন্দ্রের রাজত্বকালে ভারতবর্ষে চাঁদের হাট বসেছিল। একশ্রেণির দার্শনিকের মতানুযায়ী ফেকুচন্দ্র রাজা নিত্যদিন অসাড় ও কাল্পনিক বাক্যবাণ ছুঁড়তেন। হিন্দিতে ‘ফেকনা’ মানে ছোঁড়া। যেমন ‘বল ফেকো’ অর্থাৎ বল ছোঁড়। যারা কথায় কথায় লম্বা চওড়া হাঁকতে জানে তাদের চলতি হিন্দিতে ‘ফেকু’ বলা হয়। রাজা ফেকুচন্দ্র হাত পা ঠুকে তাঁর কাল্পনিক বাক্যবাণে ভক্তকূলকে মোহিত রাখতে জানতেন। আবার অন্য এক শ্রেণির দর্শন বলছে ইংরিজির ‘ফেক’ বা নকল শব্দ থেকেই রাজা ফেকুচন্দ্র নামকরণ হয়েছে। সাধারণ প্রজাসকলের মানসে নিজের প্রভাব বিস্তার করার লক্ষ্যে রাজা ফেকুচন্দ্র এমন কিছু বলতেন যা তিনি ছিলেননা। তিনি তাঁর সাহসের উদাহরণ দিতে পুকুর থেকে কুমীর ধরে বাড়িতে নিয়ে আসার কথাও বলেছিলেন।

সেই আমলেও ভারতবর্ষে একশ্রেণির সুবিধাবাদী লোক বাস করত। ভেক বদল করতে এরা সিদ্ধহস্ত ছিল। ক্ষমতাশীল লোক দেখলেই এরা জিভ দিয়ে লালা ঝরিয়ে সেই লালা’তেই অভিষিক্ত হয়ে ক্ষমতাবানদের পছন্দসই ভেকধারণ করত। ভারতবর্ষের চাঁদের হাটে এই সুবিধাবাদী জনতাকে ভেকুচন্দ্র বলা হত। এদের নিজস্ব মতামত বলে কিছুই ছিলনা। ভেকুচন্দ্র জনগণ দোর্দন্ড প্রতাপশালী ফেকুচন্দ্র রাজাকে প্রাণ দিয়ে আগলে রাখত। রাজার বিরুদ্ধে কোন স্বর উঠলেই এরা ঘেউ ঘেউ করে সেই স্বর চাপা দিতে চেষ্টা করত। রাজা ফেকুচন্দ্র কাঁদতে বললে এরা ভেউ ভেউ করে কেঁদে উঠত। রাজা এদের নাচতে আদেশ করলে এরা ধেই ধেই করে নেচে উঠত।

আরেক শ্রেণির মানুষ ছিল যারা রাজার বাজনা বাজাত। এরা সর্বদা রাজপাটের প্রশংসা করত। রাজার প্রশংসা করা দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ভেবেই এরা এই কাজ করত। অনেকে আগে এদের সমাজের আয়না বলতেন। কিন্তু রাজা ফেকুচন্দ্রের রাজত্বকালে এদের নাম পাল্টে গিয়ে ফেকুচন্দ্রের বাজনা নাম দেওয়া হয়েছিল। ইংরিজিতে এই জাতটাকে ‘মিডিয়া’ বলা হত। এরা স্টুডিওতে ব্যাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে ন্যাকা ন্যাকা কথা বলে প্রজাসকলের মনোরঞ্জন করত। তাই এদের নেকুচন্দ্রও বলা হত। নেকুচন্দ্র প্রজাতির স্টুডিওতে বসে ভেকুচন্দ্র জাতির মানুষ ফেকুচন্দ্রের গুণ গাইত। বলা হয়, এই অপরূপ দৃশ্য চাঁদ থেকেও দেখা যেত।

ফেকুচন্দ্রের আমলে ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ছিল। কিন্তু ভারতবর্ষকে একটি ধার্মিক রাষ্ট্রে উন্নীত করার কাজ তখন চলছিল পুরোদমে। এর মধ্যে সেকুলার কিছু লোক ছিল। যারা রাজনীতি আর ধর্ম যারা আলাদা চোখে দেখতে চাইত। সেকুলার জাতির লোকেদের একটা উপজাতি গজিয়েছিল। এদের সেকুচন্দ্র বলা হত। এদের কাজ ছিল রাজনীতির মধ্যে তাগা-তাবিজ, মাদুলি, পাগড়ি-সিঁদুর আর গোমেদের আংটি খোঁজা। এরা হিন্দুদের ‘কুসংস্কার’ পছন্দ করতনা। এরা মুসলমানদের কুসংস্কার নিয়ে ভয়ে কিছু বলতে চাইতনা। এরা ধর্মের মধ্যে আফিম খোঁজার থিম আবিষ্কার করেছিল। বস্তুবাদ আর ভাববাদ থেকে তর্ককে বাদ দিয়ে এরা অন্যের গায়ে কাদা ছেটাত। এই সেকুচন্দ্র পন্ডিতবর্গের কথা নেকুচন্দ্র আর ভেকুচন্দ্রের মাথার ওপর দিয়ে চলে যেত। সেই কালের সাধারণ সমাজ সেকুচন্দ্র প্রজাতিকে একঘরে করে রেখেছিল। এই প্রজাতির পান্ডিত্যের অহঙ্কার অন্য প্রজাদের মূর্খ ভাবত। আর প্রজাসকল এদের পাগল ভাবত।

রাজা ফেকুচন্দ্র, ভেকুচন্দ্র, নেকুচন্দ্র আর সেকুচন্দ্রের সম্বন্ধে যিনি এই কথাগুলো লিখে গিয়েছিলেন তাঁর নাম ছিল মাকুচন্দ্র। আমি পুরোন পুঁথি খুঁজতে খুঁজতে আজ এই লেখাটা পেয়ে গেলাম। ফেসবুকে দিয়ে দিলাম।

[JNU-র সদ্য নির্বাচিত ছাত্র সংসদের অধ্যক্ষ ঐশী ঘোষের হাতে বাঁধা তাবিজ দেখে অনেকের কটু মন্তব্যের জবাব খুঁজতে গিয়ে লিখলাম।]
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM