মোসাহেবি
মোল্লা বাদশাহের দরবারে মোসাহেবি করতেন। দরবারে তাঁর খুব নামডাকও ছিল। সমঝদার মোসাহেব হিসেবে বাদশাহের দরবারে মোল্লার খাতিরও কম ছিলনা।
একদিন বেগুন ভাজা খেতে খেতে বেজায় খুশি হয়ে বাদশাহ নাসিরুদ্দিনকে বললেন, "বেগুনের মতো এমন সুস্বাদু খাদ্য আর কিছু তোমার জানা আছে কি ?"
“না হুজুর, বেগুনের মতো আর কোন জিনিস হয় না।"
শাহেনশাহ হুকুম দিলেন, " এবার থেকে আমার রোজ বেগুন ভাজা চাই।”
তারপর রোজ রোজ দু'বেলা বেগুন ভাজা খেতে খেতে মুখ পচিয়ে একদিন বাদশাহ হঠাৎ রেগেই গেলেন। খানসামাকে ডেকে বললেন, " আজ থেকে কোন দিন আর বেগুন ভাজা খাব না। বেগুনের কোন গুণ নেই। এসব অখাদ্য কুখাদ্য আমাকে আর দিবিনা।"
“বেগুন একেবারে অখাদ্য।” মোল্লা সায় দিলেন প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই।
বাদশাহ এ কথা শুনে অবাক হয়ে বললেন, " সে কি মোল্লা সাহেব, তুমি যে এই সেদিনই বললে, “গুনের মতো আর কোন জিনিস নেই! “
"আমি তো আপনার মোসাহেব, জাঁহাপনা", বললেন নাসিরুদ্দিন, "বেগুনের তো নই।"
মোল্লার এ কথা শুনে বাদশাহ খুশি হয়ে মোল্লাকে স্বর্ণমূদ্রা বকশিশ দিলেন।
ধারে গাধা
একজন প্রতিবেশি এসে মোল্লা নাসিরুদ্দিনকে বলল, “মোল্লা, আপনার গাধাটা ধার দেবেন। একটু বাইরে যাওয়া প্রয়োজন ছিল।” মোল্লা বললেন, “দুঃখিত ভাই, আজ আর গাধাটা ধার দিতে পারলাম না। আজ ওটা আরেকজনকে ধার দিয়েছি।” এমন সময়ে বাড়ির উঠোন থেকে মোল্লার গাধাটা ডেকে উঠল। লোকটা বলল, “ওই তো গাধা বাড়িতেই আছে।” মোল্লা বললেন, “যে আমার কথার চেয়ে গাধার কথা বেশি বিশ্বাস করে তাকে ধার দেয়া যায় না।”
টাকার গন্ধ
একদিন মোল্লা এক মিষ্টির দোকানের পাশ দিয়ে যেতে যেতে দোকানের থরে থরে সাজানো সুগন্ধি মিষ্টির দিকে চেয়ে মিষ্টি কিনতে না পেরে গন্ধ শুঁকেই আদ্ধেক পেট ভরিয়ে দোকানিকে ধন্যবাদ দিতে গেলেই দোকানি মোল্লার কাছে পয়সা চেয়ে বসল। মোল্লা তো ভ্যাবাচ্যাকা। একি কান্ড! ভাল লোকের দিন শেষ হয়ে গেছে নাকি!
বচসা না করে দোকানির পয়সা মিটিয়ে বেরিয়ে গেলেন।
পরের দিন। সেই মিষ্টির দোকানে এসে মোল্লা পেট পুরে মিষ্টি খেলেন। গান্ডেপিন্ডে গিলে মোল্লা দোকানির সামনে এসে দাঁড়ালেই দোকানি মিষ্টির দাম চাইল। মোল্লা তার জোব্বা থেকে একটা মূদ্রার থলি বের করে থলিটা আচ্ছা করে ঝনঝন শব্দ করে নাড়াতে নাড়াতে বললেন, টাকার ঝনঝন ঝঙ্কার শুনতে পাচ্ছেন কি?
দোকানি বলল, হ্যাঁ পাচ্ছি।
মোল্লা বললেন, তাহলে তো ভালই। মিষ্টির গন্ধ শুঁকলে যখন পয়সা দিতে হয় তখন পয়সার শব্দ শুনেই মিষ্টির দাম বুঝে নিন ভাই। আমি চললাম। এই বলে পয়সা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে মোল্লা দোকান ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন।
দুটো প্রশ্নের দাম পাঁচ টাকা
মোল্লা একদিন তাঁর দরজায় একটা নোটিশ টাঙিয়ে দিলেন, দুটো প্রশ্নের দাম পাঁচ টাকা। যে কোন দুটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে। মাত্র পাঁচ টাকা লাগবে।
পাড়ার এক মুরুব্বি মোল্লার হাতে পাঁচ টাকা গুঁজে দিয়ে বলল, আমার দুটো প্রশ্ন করার আছে কিন্তু পাঁচ টাকাটা এক বেশি হয়ে যাচ্ছে না কি?
মোল্লা তক্ষুণি জবাব দিল, ঠিক আছে, এবার ঝপ করে দ্বিতীয় প্রশ্নটা করে ফেলুন।
বৃষ্টির মধ্যে দৌড়
খুব জোরে বৃষ্টি পড়ছে একদিন। সেই তুমুল বৃষ্টি মাথায় একটা লোক রাস্তা দিয়ে পাঁইপাঁই করে দৌড়ে যাচ্ছিল। নাসিরুদ্দিন বাসার জানালার ধারে বসে বৃষ্টি দেখছিলেন, লোকটাকে এভাবে দৌড়াতে দেখে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “আরে, এত জোরে দৌড়াচ্ছ কেন?” লোকটি জবাব দিল, “দেখছ না কত জোরে বৃষ্টি হচ্ছে? দৌড়োবনা তো কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজব?” নাসিরুদ্দিন বললেন, “তুমি তো আচ্ছা লোক হে, আরে বৃষ্টি হল সৃষ্টিকর্তার রহমত। আর তা অবহেলা করে তুমি এভাবে দৌড়াচ্ছ?” একথা শুনে লোকটা লজ্জা পেয়ে গেল। আর না দৌড়িয়ে চুপচাপ হাঁটতে হাঁটতে কাক ভেজা হয়ে ঘরে ফিরল।
অন্য আরেক দিন। তেমনি বৃষ্টি। এবার দৌড়োচ্ছেন মোল্লা আর সেদিনের কাকভেজা লোকটা জ্বর বাধিয়ে বাড়িতে বসে আছে আর বাড়ির জানলা থেকে মুখ গলিয়ে দেখছে মোল্লাকে দৌড়োতে। এবার লোকটা মোল্লাকে থামিয়ে বলল, “কি হে মোল্লা, আজ তুমি যে দৌড়াচ্ছ বড়! সৃষ্টিকর্তার রহমত কেন অবহেলা করছ? ধীরে যাও।" মোল্লা নাসিরুদ্দিনের সুচতুর জবাব, “আরে সে জন্যেই তো এত জোরে দৌড়োচ্ছি। যাতে করে সৃষ্টিকর্তার রহমত খুব বেশী পায়ের নিচে পড়ে অসম্মান না হয়।”