Flickr Gallery

Sunday, December 25, 2011

অবিবেচক রাণী মমতা কাকেশ্বর রোগাক্রান্ত হইয়াছিলেন



হে পন্ডিত হুতোম, আপনি সর্বকালবেত্তা। আপনি সর্বলোকগামী মহাপুরুষ। আপনি আমাদিগের কৌতূহলের একমাত্র নিবারক হইয়া আবির্ভূত হইয়া পুরাকালের ঘটনাবলীর বর্ণনা দ্বারা অহরহ আমাদিগকে মুগ্ধ করিয়াছেন। অদ্য আপনার নিকট পরিশ্রুত হইতে চাই, কি কারণে মহারাণী মমতাকে কাকেশ্বর রোগ গ্রাস করিয়াছে এইরূপ কথিত ছিল? প্রশ্নপর্বের ক্ষণকাল পরে রাজা জনার্দন মন্ত্রোচ্চারণের দ্বারা বিবিধ জপাদি সম্পন্ন করিয়া দুই হস্তের ষড়াঙ্গুলি মুখগহ্বরে প্রবিষ্ট করাইয়া হুতোম পন্ডিতকে আনয়নের নিমিত্ত হুটাহুট মন্ত্রবাণ নিক্ষেপ করিলে তৎক্ষণাত পক্ষবিস্তার করিয়া নিঃশব্দে সর্বলোকচর হুতোম আবির্ভূত হইলেন।


“হে সুমতি জনার্দন, পুরাকালে বঙ্গবর্ষে কুমতি, ক্ষীণবুদ্ধি ও মিথ্যাচারী রাণীর মমতার রাজত্বকালে বঙ্গবর্ষের প্রজাসকলের দুঃখের অন্ত ছিলনা। প্রজাসকল রাণীর কোপভাজিত হইয়া মৃত্যু গহ্বরে পতিত হইত। কুশাসনের কোপে পতিত হইয়া নবোজাত শিশুসকল ভূমিষ্ঠ হইয়া তৎক্ষণাত প্রাণবায়ু ত্যাগ করিয়া পরলোকগামী হইত। শিশুমৃত্যর হার বর্ধিত হইয়াছিল। মিথ্যাচারী ও অবিবেচক রাণী মমতা ইহাতে আহ্লাদিত হইয়া পরস্কন্ধে দোষারোপণ করিয়া নিতান্ত সুখী হইয়াছিলেন।”

“আমরি চিকিৎসায়নে সেই কালে শতাধিক দুঃস্থ ও দুরারোগ্য ব্যধিময় রোগীর হত্যালীলা সংঘটিত হইয়াছিল। আমরি কর্তৃপক্ষের অসাবধানতা এবং ভ্রষ্টাচারী রাণীর অদূরদর্শিতার কারণেই চিকিৎসায়নের সুরক্ষা বিঘ্নিত হইয়াছিল। আমরি অট্টালিকার অন্দরগহ্বরে সামান্য স্ফূলিঙ্গসম অগ্নিশিখা রাক্ষসীরূপ ধারণ করিয়া শতাধিক রোগীকে গ্রাস করিয়াছিল। ইহাতেও কদাচারী রাণী যারপরনাই আহ্লাদিত হইয়া সংবাদমাধ্যমের সম্মুখে নিজ নাট্যলীলা সম্পাদিত করিয়া সমগ্র প্রজাসকলের নিমিত্ত দুঃখনিবারক ছলব্রতী হইয়াছিলেন। যথারীতি পরস্কন্ধে দোষারোপণ করিয়া পরমসুখে রাজকার্য্যাদিতে মনোনিবেশ করিয়াছিলেন।”

“সেই সময়ে বঙ্গবর্ষের দুঃস্থ প্রজাসকল অত্যধিক পানাসক্ত হইয়াছিল। তাহারা দেশজ সুধা পান করিয়া নিজ দুঃখ নিবারণ করিবার প্রচেষ্টা করিত। দেশজ সুধাকে গরল রূপে গণ্য করা হইত এবং উক্ত পানীয় নিষিদ্ধ ছিল। কথিত আছে অবিবেচক রাণী মমতার রাজত্বকালে সুধাপায়ী জনসংখ্যা শতগুণ বর্ধিত হইয়াছিল। একদা মগরাহাট নামক জনপদে সেই গরলসুধা পান করিয়া দ্বিশতাধিক প্রজা প্রাণবায়ু ত্যাগ করিলে সমগ্র বঙ্গবর্ষ আন্দোলিত হইয়াছিল। দিকে দিকে অপশাসনের ফলস্বরূপ ইহা সংঘটিত হইয়াছে এইরূপ প্রতিফলিত হইয়াছিল। প্রজাসকল রাণীর নিকটাত্মীয় গরলসুধা ব্যবসায়ীদিগের শাস্তির বিধান দাবি করিয়াছিল। মিথ্যাচারী রাণী পরস্কন্ধে দোষারোপণ করিয়া স্বীয় ঘৃণ্যকৃত কিঞ্চিত লাঘব করিবার প্রচেষ্টারত হইয়াছিলেন।”

“একদা রাজসভায় দন্ডায়মান হইয়া রাণী উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা করিয়াছিলেন যে ভবিষ্যতে যাহা কিছু দুর্ঘটনা ঘটিবে তাহার ভার তিনি পরস্কন্ধারোপণ করিবেন। সিপিএম নামক একটি জনগোষ্ঠীর প্রতি তিনি সর্বদা ঈর্ষান্বিত থাকিতেন। ঈর্ষার বশীভূত হইয়া তিনি প্রতিটি দুর্ঘটনার দায়ভার সিপিএমের উপর ন্যাস্ত করিয়া প্রজাসকলকে ভ্রমিত করিয়া পরমসুখে বহুকাল রাজত্ব করিয়াছিলেন। রাণী মমতা মিথ্যাচারী হইলেও সংবাদমাধ্যমসকল রাণীর অভিশম্পাত এড়াইতে তাঁহার মিথ্যাভাষ্য প্রচার করিত। প্রজাসকল প্রত্যহ মিথ্যা পাঠ করিলেও রাণীর ভয়ে ভীত হইয়া সত্যান্বেষণ হইতে বিরত থাকিত। এবং মনেপ্রাণে রাণী হইতে মুক্তির পথ ভিক্ষা করিত।”

“একদা সুবৃহৎ চিকিৎসায়নে জনৈক রোগীর দেহ মূষিকে দংশন করিলে অত্যধিক রক্তপাতজনিত কারণে রোগীর মৃত্যু ঘটিলে রাণী মমতা সিপিএমের দোষ খুঁজিয়া পাইলেন। কথিত আছে তিনি বলিয়াছিলেন যে তাঁহার রাজ্যাভিষেকে সিপিএম ঈর্ষান্বিত হইয়া বিভিন্ন চিকিৎসায়নে রোগীদের হত্যা করিবার নিমিত্ত মূষিক প্রসব করিয়াছে।”

“উক্ত রাণীর জন্মলগ্নের শতাধিক বৎসর পূর্বে সুকুমার রায় নাম্নী প্রসিদ্ধ সাহিত্যিক তাঁহার ‘হযবরল’ গ্রন্থে বর্ণনা করিয়াছিলেন যে কাকেশ্বর নামক এক বায়সের নিকট দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের পরিমাপ নিমিত্ত একটি যন্ত্র ছিল। উক্ত যন্ত্রে সর্বদা ‘ছাব্বিশ ইঞ্চি’ প্রতিফলিত হইত। অর্থাৎ কোন বস্তুর পরিমাপ যাহাই হউক না কেন কাকেশ্বরের যন্ত্রে তাহা ‘ছাব্বিশ ইঞ্চি’ দর্শিত হইত। প্রজাসকল কৌতূহল নিবারণের জন্য প্রশ্ন করিলে কাকেশ্বর কহিত যে তাহার যন্ত্রটির সর্ব রেখাসমূহ ক্ষয়িত হইয়াছে এবং কেবলমাত্র ‘ছাব্বিশ ইঞ্চি’ রেখাটি পাঠযোগ্য রহিয়াছে। ফলস্বরূপ পরিমাপ করিতে হইলে তাহার ছাব্বিশ ইঞ্চি ব্যতিরেকে অন্য কোন উপায় নাই।”

“হে জনার্দন, বঙ্গবর্ষের রাণী মমতা কাকেশ্বর রোগগ্রস্ত হইয়াছিলেন। যন্ত্র ক্ষয়িত হইলে কাকেশ্বর যেমন কেবলমাত্র ছাব্বিশ ইঞ্চি দর্শন করিতে সক্ষম হইত তেমনি অবিবেচক রাণী মমতার দৃষ্টিক্ষীণ এবং মতিভ্রম হইলে তিনি কেবলমাত্র সিপিএম উপলব্ধি করিতে সক্ষম ছিলেন। এবং ঘটনা কিংবা দুর্ঘটনার দায়ভার সিপিএমের স্কন্ধারোপণ করিতে তৎপর হইতেন।”

এইরূপ ভাষ্যদানপূর্বক হুতোম পন্ডিত পক্ষবিস্তারপূর্বক ফরফর শব্দ সহযোগে মহাকাশে বিলীন হইলে রাজা জনার্দন পুনরায় রাজনীতিশাস্ত্র অধ্যয়নে মনোনিবেশ করিলেন। 
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM