Flickr Gallery

Saturday, December 10, 2011

AMRI-র দুর্ঘটনায় দোষী কে?


কোলকাতার একটি নামকরা বেসরকারি হাসপাতালের আগুন লেগে এখন পর্যন্ত ৮৯ জন রুগীর মৃত্যু হল। মৃতের সংখ্যা আর বাড়ার আশংকা কম। সর্বনাশা আগুনের কবলে পড়ে বহু নির্দোষ মানুষ কার গাফিলতিতে প্রাণ হারালেন? সাধারণ ভাবেই মানুষের রাগ গিয়ে পড়বে ঐ হাসপাতালের মালিকদের বিরুদ্ধে। এটাই স্বাভাবিক সচেতনতা। কিন্তু শুধু কি হাসপাতালের মালিকদের দোষ দেওয়া যায়। রাজ্য সরকার বা কেন্দ্র সরকারের কি এতে কোন দোষ নেই?

মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এই ঘটনা শোনার পরে তাঁর মানবিক হৃদয়ের প্রচার করতে সদলবলে এই হাসপাতাল ও অন্য একটি সরকারি হাসপাতালে আজকের দিনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়ে গেলেন। তৎক্ষণাত হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল করে দিলেন। মৃতের পরিবারকে তিন লাখ টাকা করে দিয়ে দেবেন ঘোষণা করে দিলেন। তাছাড়া মৃতদেহ সৎকারের জন্যে আরো দশ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথাও বললেন। সারাদিন মৃতের পরিবারদের সঙ্গে জনসংযোগ করে মৃতের পরিবারের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করতে চেষ্টা করলেন। হাসপাতালের দুজন মালিক আত্মসমর্পণ করলেন। বাকি কয়েকজন মালিককে গ্রেফতার করা হল। দোষীদের কড়া শাস্তি দেওয়া হবে, এইরকম কথা ঘোষণা করা হল। এবং কিছু প্রশ্ন অবশ্যই ধামাচাপা পড়ে গেল।
এই হাসপাতালটির একটি বিশেষ তকমা আছে। “National Accreditation for Board of Hospitals” থেকে এই বেসরকারি হাসপাতালটি একটি শংসাপত্র পেয়েছে। এই গ্রুপের আর কোন হাসপাতাল ভবনের নামে এমন শংসাপত্র নেই। এর অর্থ হল, এটি সবচেয়ে নিরাপদ হাসপাতাল এবং এই হাসপাতালে দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা একেবারে নেই বললেই চলে! দুর্নীতির দুর্দিনে এইরকম হাসপাতাল ভবন NABH থেকে চাইলেই কি শংসাপত্র যোগাড় করে নিতে পারে? Medical Council of India কি এই ধরণের দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নয়? কারা দোষী? হাসপাতালের মালিক দোষী? নাকি পরোক্ষভাবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার দোষী? মৃতের পরিজনদের স্বজন হারানোর আর্তনাদে এই প্রশ্নগুলির ওপর ধামাচাপা পড়ল।
এবার আসি মিডিয়ার দায়িত্বজ্ঞানহীনতার প্রশ্নে। পশ্চিমবঙ্গের কিছু বাংলা বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যম এই দুর্ঘটনার খুঁটিনাটি নিয়ে সারাদিন ব্যস্ত ছিল। এর চেয়ে কোন বড় দুর্ঘটনা না ঘটতে পারলে আগামীকালও যে এই নিয়ে ব্যস্ত থাকবে তা সবাই জানে। তবে এইরকম শোকাবহ মুহূর্তে তারা এমন এমন বিজ্ঞাপন প্রচার করছে তাতে তাদের অমানবিক দিকটা বারবার ফুটে উঠছে। তারা যখন বলছে ‘এ এক শোকের পরিবেশ, এ এক দুঃখের সময়’ তখন হালকা কোন পণ্যের বিজ্ঞাপন না দেখালেই ভাল করত। স্বল্পবাস পরিহিতা, দেহসর্বস্ব আনন্দময় বিজ্ঞাপন আজকে বন্ধই রাখতে পারত! মৃত্যুকে নিয়েও যে মিডিয়া ব্যাবসায় মেতেছে এটা কেউ বুঝল কি? বেশি করে মৃতদেহ দেখাতে পারলে বেশি লোক টিভির সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়বে। বেশি বেশি মরাকান্না শোনাতে পারলে লোকে টিভি ছেড়ে নড়বেনা। আর একই কান্না বারবার দেখাতে পারলে আরো বেশি লোক টিভির কাছে এসে জুটবে। অঢেল ও সরস বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে তাই মরাকান্না শুনিয়ে মিডিয়া কি ব্যাবসা করলনা?
মমতার তিন লাখ দশ হাজার টাকা ‘দান’ করার ঘোষণাও এক ধরণের বিজ্ঞাপন। ঐ হাসপাতালে একদিনের গড় খরচ প্রায় পঁচিশ হাজার টাকা। দুরারোগ্য ব্যাধি হলে দৈনিক চিকিৎসাবাবদ খরচের অংক বেড়ে যায়। যারা ঐ সব হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যান তাঁদের অর্থনৈতিক অবস্থা যথেষ্ট স্বচ্ছল। এরকম খুব কম লোক আছেন যারা নিজের ঘরের ঘটি বাটি বিক্রি করে  AMRI-তে চিকিৎসা করাতে গেছেন। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা খরচ বাবদ দশ বারো দিনের মধ্যেই কোন কোন রুগীর পরিজন হয়তো তিন লাখের বেশি খরচ করে ফেলেছেন। রুগীর পরিজনদের টাকা দিয়ে কি সান্ত্বনা দেওয়া যায়? মৃতদেহকে কিঞ্চিত অর্থ দিয়ে ঢেকে কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য সরকার কি একটি ‘সুরক্ষিত’ তকমা লাগা বেসরকারি হাসপাতালের দেওয়াল থেকে কলংকের দাগ মিটিয়ে দিতে চাইছে? লাইসেন্স বাতিল যখন হচ্ছেই তখন যারা ‘সুরক্ষা’র শংসাপত্র দিয়েছে তাদেরও তলব করা হোক। সারা ভারতের এই ধরণের সব হাসপাতালগুলিতে ‘সুরক্ষা’র শংসাপত্র খুঁটিয়ে দেখা হোক। আর রাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধ কিছু টাকা দুঃস্থ ও জীবিত কিছু রূগীকেও দান করা হোক যেন তারা জীবন ফিরে পায়। এর ফলে মমতার বিজ্ঞাপনের সাথে সাথে মানবিকতারও পরিচয় পাওয়া যাবে। তাই নয় কি? 
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM