ছট পুজোর প্রথমা তিথির ঊষালগ্নে নদীস্নাত রাজা জনার্দন সূর্যের বন্দনা করিয়া ত্রিংশতিবার আচমন করিয়া দুই হস্তের বৃদ্ধাঙ্গুলিদ্বয় সমরেখায় মুখগহ্বরে প্রবিষ্ট করাইয়া স্বীয় উদর হইতে ঝাঁকুনিবল প্রয়োগ করিয়া হুতোমের স্মরণে বায়ু নির্গত করিলেন। উদর নির্গত বায়ু বৃদ্ধাঙ্গুলিদ্বয়ের পরামর্শে সুতীক্ষ্ণ কর্ণভেদী শব্দবাণের রূপ ধারণ করিয়া পুরাণ কর্ত্তন করিবার নিমিত্ত দশলোকাচর পেঁচানন্দন পন্ডিত হুতোমকে স্মরণ করিল। সভাসদগণ মহানন্দে করধ্বনিদ্বারা রাজা জনার্দনের মুখনিঃসৃত শব্দবাণের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হইলেন। তৎক্ষণাৎ শ্বেতাভ্র পক্ষবিস্তার করিয়া নিঃশব্দযোগে গগনচর হুতোম রাজসভায় উপস্থিত হইয়া রাজার ইচ্ছাপূরণ করিয়া কহিলেন, কি কহিতে হইবে আজ্ঞা করুন।
নরকূলের নৃপতি রাজা জনার্দন করজোড়ে সর্বজ্ঞানী হুতোমকে সম্ভাষণ করিয়া কহিলেন, হে সর্বলোকচর সর্বশাস্ত্রবিশারদ দেবোত্তম হুতোম, আজ আপনি আমাদের নিকট আলুর ভিতর চক্রান্তাসুরের আগমন বার্তা কীর্তন করুন। সভাসদবৃন্দ রাজার বার্তা শ্রবণ করিয়া যথাযথ আহ্লাদিত হইয়া বাদ্যযন্ত্র সমাদরে মহাজ্ঞানী হুতোমের জ্ঞানকীর্তনরত হইলেন। প্রশংসাপূত দেবাকৃতি বিশ্বপরিব্রাযক হুতোম রাজা জনার্দনের সভায় এইরূপ কীর্তন করিলেন।
হে মনুষ্যনন্দন মহাতপা জনার্দন, পুরাকালে বঙ্গবর্ষে ক্ষণচিত্ত ও ক্ষীণমতী জনৈক রাণীর রাজত্বকালে চক্রান্তাসুরের আগমন হইয়াছিল। ক্ষণমতি রাণীর রাজত্বের মধ্যগগনে দীপাণ্বিতা অমাবস্যার চতুর্দশী তিথিতে হ্যালোউইন দিবস অর্থাৎ ভূত চতুর্দশী উদযাপনের মুহূর্তে চক্রান্তাসুর কন্দ জাতীয় খাদ্যের ভিতর সন্নিহিত হইয়াছিলেন। শ্বেতবর্ণাভ মিষ্টান্ন খাদ্যকন্দ আলুর ভিতর চক্রান্তাসুরের অনুপ্রবেশ ঘটিলে প্রজাগণ হাহা রবে দশদিক বিদীর্ণ করিয়া উচ্চৈঃশ্বরে শব্দ করিয়া ক্রন্দনরত থাকিতেন। এহেন যুগে শ্বেতাভ মিষ্টান্নের ভিতর চক্রান্তাসুর স্বীয় প্রাসাদ নির্মাণ করিলে মৃত্তিকাপ্রসূত শুভ্রান্ন আলুর মূল্যবৃদ্ধি হইয়াছিল। চক্রান্তাসুরের ছল ও কুচতুর কার্যাদি রাণীকে সর্বদা ব্যথিত করিত। সরস ও সহজপাচ্য শ্বেতান্ন আলু প্রজাগণের নিকট দেবান্নরূপে গণ্য হইত। চক্রান্তাসুরের সমাগমনে আলোকান্নের মূল্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইলে রাণী চক্রান্তাসুরের ছলদৃষ্ট হইয়া মন্ত্রীদের আলোকান্নের ভিতর প্রবেশ করিয়া আলুর মূল্য নিয়ন্ত্রণ করিবার আদেশ করিলেন। মন্ত্রীসকল আদেশপ্রাপ্ত হইয়া শ্রুভ্রান্ন আলুর অন্দরে প্রবিষ্ট হইয়া চক্রান্তাসুরবধের উপায় সন্ধানের নিমিত্ত তপস্যারত হইলেন।
মন্ত্রীসভার তপস্যায় একনিষ্ঠতার অভাব প্রতিফলিত হইয়াছিল। মন্ত্রীসকল সুমিষ্ট সরস আলোকান্নের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করিতে ব্যর্থ হইল। এইরূপে রাণীর মন্ত্রণাকক্ষ চক্রান্তাসুর বধের উপায় সন্ধানে বিফল হইলে অর্থবাণ প্রয়োগ করিয়া আলুর মূল্য নিয়ন্ত্রণ করিয়া প্রজাসকলকে আহ্লাদিত করিলেন। চক্রান্তাসুর নিক্ষেপিত শব্দবাণে জর্জরিত হইয়া রাণী উন্মত্তা হইয়া অসুর বধ করিবার নিমিত্ত অসমদৃষ্টি ও অপারদর্শী পারিষদবর্গের নিকট অবগত হইয়া আলুর মূল্যহ্রাস করিবার নিমিত্ত অর্থবাণ প্রয়োগ করিলে মহাকাল চক্রান্তাসুর বিপাকে পড়িয়া সসাগরা পৃথিবীকে বারংবার মৃত্তিকাজাত শ্বেতশষ্য আলুহীন করিত। চক্রান্তাসুর শ্বেতশুভ্র আলোকান্নের অন্দরমহলে লুক্কায়িত থাকিয়া রাণীর কোপদৃষ্টির অগোচরে থাকিত। প্রজাবর্গ আলুহীন খাদ্য ভক্ষণ করিতে বাধ্য হইত।
এইরূপ ভাষ্যপ্রদানপূর্বক দশদিকগামী উভয়চর সুজ্ঞানী পন্ডিত হুতোম নিঃশব্দে সভাগৃহ ত্যাগ করিয়া ভূমন্ডলে অদৃশ্য হইলেন। সভাসদসকল বিধিপূর্বক আলুজ্ঞানপ্রাপ্ত হইয়া ধন্য ধন্য করিয়া হুতোমকে সশরীরে প্রণাম নিবেদন করিলে জনার্দন সভাভঙ্গ করিলেন।