Flickr Gallery

Saturday, February 11, 2012

তুমি উত্তম বলিয়া আমি অধম হইব না কেন?


তুমি উত্তম বলিয়া আমি অধম হইব না কেন? ব্যাপারটা উল্টো শোনাল কি? এই রাজ্যে এখন সব কিছুই অধমের সঙ্গে উত্তমের তুলনামূলক চর্চায় ছেয়ে গেছে। যাই হোক না কেন, ‘৩৪ বছরে কিছুই হয়নি’ এই কথা শুনতেই হবে। ৩৪ বছরে যা হয়নি তা আট মাসে হয়ে গেছে। তাও শুনতে হবে। কি কি হয়নি? কেউ জানেনা। কি কি হয়েছে? তাও কেউ জানেনা। জানার কোন প্রয়োজন নেই। তুমি উত্তম। তুমিই জান। ওসব আমি জেনে কি করব? জেনে ফেললে তো ৩৪ বছরে কিছুই হয়নি বলতে পারব না। তাই বলছি তুমি উত্তম বলে আমি অধম হব না কেন!

বর্তমান রাজ্য সরকার তাদের বিরোধী দলকে বহুবার চুপ করার পরামর্শ দিয়েছেন। দলনেত্রী বেশ কয়েকবার বলেছেন দশ বছর চুপ থাকতে। অর্থাৎ দশ বছর চুপ থাকলে নির্বিঘ্নে রাজ্যটিকে রসাতলে পাঠিয়ে দিয়ে বর্তমান সরকার বিরোধী আসনে গিয়ে বসতে পারলে বিরোধিতা করতে সুবিধে হবে। ওখানে বসে কাগজপত্র ছোঁড়াছুড়ি করে, ছেঁড়াছেড়ি করে বলা যাবে রাজ্যকে এখনও রসাতল থেকে ওঠানো গেলনা কেন? কয়েকদিন আগে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি বললেন ‘আপনারা মুখ খুললে রাজ্যে নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর, নেতাই হয়। কারখানার চিমনির ধোঁয়া বন্ধ হয়ে যায়। তাই চুপ করুন।’
বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র সেদিনই বলেছিলেন যে রাজ্যটার গত সাত মাসে যা অবস্থা হয়েছে তাতে দশ বছর কেন, দশ সেকেন্ডও চুপ করে বসে থাকা যাচ্ছেনা। তারই প্রত্যুত্তরে পার্থ চ্যাটার্জি আবার বললেন যে তাঁদের দলনেত্রী নির্বাচনী ইস্তাহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতির অধিকাংশ পূরণ করে ফেলেছেন। এখন নাকি বিরোধীরা বিরোধ করলে রাজ্যবাসীর স্বার্থের বিপরীত কাজ হবে। এরও কয়েকদিন পরে ভূষণ স্টিল রাজ্য ছেড়ে পালাল। তারা নিজেরা জমি জোগাড় করে শিল্প স্থাপনায় আগ্রহ দেখাচ্ছেনা। তার কয়েকদিন পর এনটিপিসি বলছে রাজ্যে জমি নিতে গেলে তারা পঞ্চায়েতের সাহায্য নিতে চায়। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে রাজ্য সরকারকেই জমি দিতে বলছে সংস্থাটি। কিন্তু রাজ্যের এলেম আলাদা। উত্তমরা যা করে গেছে তার উল্টো কাজ না করলে নিজেদের অধম বলা যাবে কি করে! তাই রাজ্য সরকার জমির দায় নিতে পারবেনা। কারখানা করতে হলে কর। নইলে বাড়ি যাও। রাজারহাটে সামান্য ৩৫ একর জমি না পেয়ে ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড নাম্নী সংস্থাটি নিজেদের আঞ্চলিক কেন্দ্র স্থাপনা করতে পারল না। রাজ্যের জন্যে এই অঘটনগুলি ক্রমশ প্রকাশ্য। লম্বা লাইন পড়ে আছে শিল্পের। কিন্তু জমি নেই। বেঙ্গল লিডস-২০১২ বলে একটি অনুষ্টান হল। তেমন কোন সাড়া নেই। তোলাবাজি বেড়েছে। ছোটখাট শিল্পপতিরা এইসব প্রসঙ্গ টেনে বড় শিল্পপতিদের ‘ভড়কে’ দিচ্ছে। বড় শিল্পপতিরা অনুষ্ঠানে বসে দু হাত দিয়ে তালি পিটে জানিয়ে দিচ্ছে শিল্পের ‘তালি’ এক হাতে বাজে না।
এছাড়া রয়েছে কৃষি ও কৃষক সংক্রান্ত বিষয়ে অদূরদর্শিতা, স্বাস্থ্যের সম্বন্ধে অবজ্ঞা, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামলানোয় অক্ষমতা, গুন্ডামি ও তোলাবাজিকে প্রশ্রয় দেওয়া, শ্রমিক ও কর্মচারীদের অবহেলা, দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ এবং শাসনের নামে ভন্ডামি। এইসব দেখে চুপ করে না থাকতে পারলে জোর করে মুখ বন্ধ করার ওষুধ দেওয়া হবে। রাজ্য বিধানসভায় একটি নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা জারি করে অধম রাজ্য সরকার নিজেদের পরিচয় দিল। অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় একটি চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছেন, বিধানসভায় অধিবেশন বন্ধ থাকাকালীন কোনও সাংবাদিক বৈঠক করতে পারবেন না বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। কিন্তু রীতি অনুযায়ী বিধানসভা হল বিরোধী পরিষদীয় দলের কার্যালয়। বিধানসভায় অধিবেশন না চললেও সেখান থেকেই কাজ করেন বিরোধীরা। সরকার পক্ষের দফতর রাজ্য সচিবালয়। সেখান থেকে কাজ করেন তাঁরা।
রাজনৈতিক পালাবদলের পর বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী পরিষদীয় রাজনীতিতে বিরোধী পক্ষের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু কাজ হল ঠিক তার উল্টো। সূর্যকান্ত মিশ্রকে সাংবাদিক সম্মেলন করতে যে সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল তার থেকে বেশি সময় লেগেছে বলে বিধানসভা অধ্যক্ষের ফরমানের জেরে বিধানসভা না চলাকালীন বিধানসভার মিডিয়া সেন্টারে কোন সাংবাদিক সম্মেলন করা যাবে না। এরকম ফরমান আগে কেউ কোনদিন জারি করেননি। এরপর হয়তো শুনতে পাব বিধানসভা চলাকালীন বিরোধী পক্ষ মিডিয়া সেন্টার থেকে কোন সাংবাদিক সম্মেলন করতে পারবে না। গণতান্ত্রিক দেশে এইরকম ফরমান স্বৈরাচারের ইঙ্গিত বহন করে। তাই বলি, তুমি উত্তম বলিয়া আমি অধম হইব না কেন?
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM