Flickr Gallery

Monday, September 9, 2019

যন্ত্রপুত্র বিক্রম কি কাশ্মীরে নেমেছে?


যন্ত্রপুত্র চন্দ্রযান-২ বিক্রম চাঁদে নেমে পড়েছে। সেই 'ল্যান্ডার' বিক্রম ছেড়ে আরেকটা যন্ত্র চাঁদের মাটিতে চলতে শুরু করেছে। নাম তার 'রোভার' বা প্রজ্ঞান। রোভার-এর ভেতর থেকে একটা থার্মোমিটার বেরিয়ে এসে চাঁদের মাটির ভেতরে ঢুকে ঢুকে ওখানকার তাপমাত্রার তারতম্য মাপার কাজ শুরু করে দিয়েছে। ক্যামেরাগুলো মাটির ভেতরের ফটো নিচ্ছে আর ফটাফট পাঠিয়ে দিচ্ছে ইসরো’র কন্ট্রোল রুমে। তাই থেকে বিজ্ঞানীরা সেই মাটিতে থাকা খনিজ সম্পদের বিশ্লেষণ করছেন। যন্ত্রটা চন্দ্রপৃষ্ঠের ভূকম্পন মেপেই চলেছে। ডাটা পাঠাচ্ছে। এই কাজগুলোই করতে পারত আমাদের যন্ত্রপুত্র বিক্রম। কিন্তু যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। যন্ত্রপুত্র কি করছে বা কেমন আছে আমরা কেউ জানিনা।

বিজ্ঞানীরা বিক্রমের হদিশ দিতে না পারায় আমার মতোই অনেকে হতাশ। সামান্য কান্নাকাটি করে ইসরো’র চেয়ারম্যান নিজেকে সামলে নিয়ে আবার তিরুপতি গিয়ে হয়তো পরের মিশনের সাফল্যের জন্যে কামনা করে আসবেন। আমাদের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা আশা ছাড়েননি। বলছেন বিক্রমকে খুঁজে পাওয়া যেতেই পারে। বিক্রম আবার হয়তো সংকেত পাঠাতে শুরু করতেই পারে। বিক্রম কেমন আছে আর কোথায় আছে তা জানা যেতেই পারে। বিদগ্ধ মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বলছেন যে বিক্রম তাঁদের পরবর্তী মিশনকে ভুলভ্রান্তি থেকে মুক্ত রাখার শিক্ষা দিয়ে গেল। আরও নিখুঁত মিশনের পরিকল্পনা দিয়ে গেল। মহাকাশ গবেষণায় এইরকম ঘটনা ঘটতেই পারে। দেশে বিদেশে ঘটেই চলেছে অনবরত।

এতদূর ঠিক ছিল। কিন্তু বিজ্ঞান আর এখন বিজ্ঞানীদের মধ্যে সীমিত নেই। মিডিয়া বিজ্ঞানকে রাজনীতির আখড়ায় নামিয়ে এনেছে। শোনা যাচ্ছে, বিক্রমের মধ্যে আমাদের দেশজ মিডিয়া একটা ‘ডিজে বক্স’ জুড়ে দিয়েছিল। বিক্রম চাঁদের মাটিতে পা ফেললেই সেই বক্স থেকে তারস্বরে ‘মোদি মোদি’ রব উঠত। সেখানে নাকি ‘ভারতমাতা কি জয়’ বাজানো হত। শোনা যাচ্ছে, একটা ভারতীয় পতাকা চাঁদে মিডিয়ার হাওয়াতে পৎপৎ করে উড়ত। মিডিয়া তীর্থের কাকের মতো বসে ছিল সেইসব দেশপ্রেমের সংকেত ‘ক্যাচ’ করে টিভির মাধ্যমে আমাদের ঘরে ঘরে ঢোকানোর জন্যে। এই কাজটা হতে পারেনি। আমাদের বিজ্ঞানীদের চেয়েও বেশি ব্যথা পেয়েছে মিডিয়া। হতাশ হয়েছে মিডিয়া। এতগুলো মিডিয়া বিক্রমের পেছনে ‘লাইভ’ লেলিয়ে দিয়ে কাজের কাজ কিছুই হলনা। মিডিয়াও বুঝল পাকিস্তানকে শায়েস্তা করা হয়তো এ যাত্রায় গেলনা!

বিক্রম নামের একটা যন্ত্রপুত্রের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে চেয়ারম্যান বিজ্ঞানী কে সিবন কেঁদে ফেললেন। সান্ত্বনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। আর মিডিয়া তার ফোড়ন খুঁজে পেল। সকাল থেকেই দেখছি চেয়ারম্যান কে সিবন-এর পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন তিনি। মিডিয়ায় ভাইরাল। অথচ কি পরিহাস দেখুন। আমাদের দেশেরই একটি রাজ্যে গত একমাস ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বহির্বিশ্বের। সেই রাজ্যের মা বাবার সঙ্গে অন্যান্য জায়গায় থাকা তাঁদের ছেলেমেয়েরা যোগাযোগ করতে পারছেনা। একেবারে বিক্রম নামের যন্ত্রপুত্রের অবস্থার মতোই! সবাই অন্ধকারে। আছে কিন্তু নেই। আদৌ আছে তো! কোথায় আছে! কেউ জানেনা। কান পাতলেই শুনতে পাওয়া যাচ্ছে চারিদিকে দুশ্চিন্তা আর কান্নার চাপা গোঙানি। সান্ত্বনা দেওয়ার লোক কই! পিঠে হাত বুলিয়ে সমবেদনা জানানো তো দূর অস্ত! ওরাও সবাই মনে হয় চাঁদেই আছে। নাকি যন্ত্রপুত্র চাঁদের বদলে কাশ্মীরে গিয়ে নেমেছে?
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM