Flickr Gallery

Wednesday, January 18, 2012

ঘর করতে হলে কর, নইলে কেটে পড়


বিবি, তুমি আমায় লাথি মারো বা ঝ্যাঁটা মারো, আমি তোমায় ছাড়ছিনা। মেরেছো কলসীর কানা তা বলে কি প্রেম দেবনা? তা হয় নাকি গো! যতদিন রস আছে ততদিন রসিক থাকবে। কত্তা গিন্নির দাম্পত্য কলহ ছিল এতদিন ঘরের মধ্যে। ঘরের মধ্যেই চুপচাপ গোমাজি করত সবাই। কেউ টের পেতনা। কেউ গুমড়ে থাকত। কেউ দুমড়ে থাকত। কেউ এই সব দেখে পা দুলিয়ে বাদামভাজা খেত আর ভাবত বুঝি ‘এসব ঘরোয়া কোন্দল’ ওতে কান দিয়ে লাভ নেই। কিন্তু ঘর থেকে এল বারান্দায়। পাঁচ কান হল। বারান্দা থেকে রাস্তায়। দশ কান হল। রাস্তা ধরে সোজা গড়গড়িয়ে বর কনের কোন্দল পৌঁছে গেল দিল্লি। মানে শ্বশুরবাড়ি!

শ্বশুরবাড়ির লোকজন বাড়ির নতুন ‘গিন্নি’কেই মাথায় তুলে নাচছে। গিন্নির মোটা মাইনে। গিন্নির লোকজন এখন দিল্লির শ্বশুরবাড়ির পাহারাদার। নইলে কবেই যে বাড়ি ভেঙে সবাইকে পথে বসতে হত! তাই বাড়ি সামলাতে শ্বশুরবাড়ির লোক গিন্নির পক্ষ নিয়ে নিজের ছেলেকেই দুষে চলেছে। গিন্নির শ্বাশুড়ি বললেন, অ্যাই ছেলে, কিচ্ছু বলবিনি, যেমন বলছি তেমন থাক। ঝামেলা বাড়াসনি। লাথি খা, ঝ্যাঁটা খা, সব খা। কিন্তু একদম বেশি কথা বলবিনি গিন্নির বাড়িতে। তুই একটা কুলাঙ্গার পুত্র। আটমাসেই গিন্নির সঙ্গে ঝামেলা বাধিয়ে দিলি! কি রে তুই! আমি বলছি, তুই চুপ থাক। সাত চড়েও রা কাড়বিনি। সংসার করা বড় জ্বালা রে। অনেক কিছু মুখ বুজে সহ্য করতে হয়। আর আমার কথা যদি না শুনিস তবে তোকেই ত্যাজ্যপুত্র করে দেব। আমি আমার গিন্নিকে ছাড়তে পারবনা। তুই বুঝে নে এবার।
গিন্নির পক্ষ নিয়ে পুত্রকে কুলাঙ্গার বলে দিল দিল্লির বাড়ি। এদিকে গিন্নির বাড়িও কম যায়না। পাগল বলল। ছাগল বলল। এসব তো সবার সামনেই বলল। পেছনে আর কি কি বলল তা একমাত্র জামাইরাজাই জানে। জামাই জামার কলার উঁচু করে হাতার আস্তিন গুটিয়ে বলল, দেখে নেব। এ অপমান আর সহ্য করা যায়না। এই গিন্নি দিনের দিন আমার সঙ্গে হিটলারি করছে। আমাকে পাত্তা দিচ্ছেনা। আমিও যে কত বড় বীর তা আমি দেখিয়ে ছাড়ব। একেবারে ‘ডিভোর্স’ দিয়ে ঘোল খাইয়ে ছাড়ব। আমি যেমন তেমন লোক না।
রণাঙ্গনে এবার ভাসুর আর দেওরের আগমন। সবাই মিলে ছেঁকে ধরল তাদের ভাইকে। তোর দোষ। তুই কি বীরত্ব দেখাবি! এই গিন্নির সঙ্গেই ঘর কর। নইলে চল ফোট। আমরা গিন্নিকে ছাড়বনা। তুই পালা। তুই জাহান্নামে যা। তুই একটা ছাগল। তুই নির্ঘাত পাগল। ঘরজামাই হয়ে বসে থাকতে যদি তোর লজ্জা করে তবে যমের দক্ষিণ দুয়োরে যা। আমি ঘরভাসুর হয়ে থাকব। আমিও ঘরদেওর হয়ে থাকব। এখানে ঝামেলা পাকিয়ে লাভ নেই ভায়া। গিন্নির কদর দিনের দিন বেড়েই যাচ্ছে। দিল্লির বাড়ির গিন্নির শ্বাশুড়ির কাছ থেকে কুলাঙ্গার পুত্রের কাছে ফরমান এসে গেছে। পাঁচ বছর একদম চুপ থাক। না পারলে তুই আমার ত্যাজ্যপুত্র হয়ে যাবি। পই পই করে বলছি গিন্নিকে চটাসনা। কথা শুনছিস না কেন?
গিন্নির পোয়াবারো। ধিং ধিং করে নাচতে নাচতে পাড়া মাত করে বেড়াচ্ছে। আমি তো চাইছিনা ওর সঙ্গে ঘর করতে। পারলে পালিয়ে যাক। আমি একাই ঘর সামলে নেব। ঘরজামাইয়ের হম্বিতম্বি জামার আস্তিনের মধ্যেই থেকে গেল। ঘরজামাইয়ের গা জোয়ারি বেয়াড়া গিন্নির পাল্লায় পড়ে দুমড়ে মুচড়ে একাকার। অন্যদিকে শ্যালকের দল প্যাঁক দিচ্ছে। জামাইবাবু কি হল? দিদিকে ফালতু কথা বলেও ঘর করছ। পালিয়ে কেন যাচ্ছনা জামাইবাবু? তুমি একটা ছাগল। তুমি একটা পাগল। আর কি কি বললে তুমি ঘর ছাড়বে বল তো। আমরা তবে তাই বলব।
এত শুনেও ঘরজামাইয়ের লজ্জা নেই। ঘরজামাইদের লজ্জা নেই। তাই বারে বারে নিতাইয়ের সেলুনে ঢুকে চুল কাটতে বসে ওই গানটা শুনতে ইচ্ছে করছে। মেরেছো কলসীর কানা, তা বলে কি প্রেম দেব না! নিতাই গান চালা। দু দন্ড বসে জিরিয়ে নিই। ওসব পারিবারিক ঝামেলায় নিজেকে জড়াবনা। বুঝলি নিতাই। তাই গানটা শুনে নিই। তুই গান চালা। 
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM