Flickr Gallery

Wednesday, February 22, 2012

মমতা ঢোঁক গিললেন বলেই পুলিশে ঢেকুর তুলল


ধর্ষিতা মহিলা যদি থানায় যান অভিযোগ করতে তবে পুলিশও কি সাহায্য করার বদলে অসহায় ধর্ষিতার উদ্দেশ্যে কুৎসিত মন্তব্য করে এবং তদন্ত না করেই মহিলাকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারে? আইনের রক্ষক যারা তারা আজকাল একরকম চশমা পরেন। তাই দিয়ে তারা নন্দঘোষের দোষ খোঁজেন। মুখ্যমন্ত্রী বেশ কয়েক দিন আগেই বলেছিলেন, ‘এরপর থেকে যা হবে তার দোষ সিপিআইএম-এর। পুলিশও তাই আছে বহাল তবিয়তে। তাদের আইন রক্ষা করার কোন দায়ভার থাকল না। তদন্ত করতে হল না। যা হবে সব নন্দঘোষের মাথার ওপর চাপিয়ে দিলেই হল। তাই ধর্ষিতা মহিলা যখন থানায় গেলেন তখন তাঁকে দুই পুলিশ অফিসার ‘টিজ’ করলেন। দুঃস্থাকে অসহযোগিতা করতে উৎসাহিত করছেন মমতাময়ী মুখ্যমন্ত্রী।

ধর্ষণের পরেও মহিলাটিকে বেশ কয়েক জায়গায় ঠোক্কর খেতে হল। প্রথমে তো তিনি সংকোচ কিংবা সামাজিক কারণে কিংবা ধর্ষণকারীর প্রভাব ও প্রতিপত্তির ভয়ে ভীত হয়ে থানায় গিয়ে পৌঁছোতে পারলেন না। তারপর থানায় এসে পোঁছোলে অকারণে পুলিশ আজেবাজে কথা বলেছে। তারপর মেডিক্যাল টেস্ট নিয়ে আনাকানি। তারপর আরেক ঠোক্কর। ডাক্তারি পরীক্ষা হয়নি কেন? হলেও তা ৪৮ ঘন্টার মধ্যে হয়েছে কি? যদিও সুপ্রিম কোর্ট বলছে ধর্ষণের অপরাধ প্রমাণের ক্ষেত্রে ডাক্তারি প্রমাণ অপরিহার্য বলে গণ্য হবে না।  এরপর আরেক ঠোক্কর। এবার পুলিশের খাতায় কেস তো লেখা হয়ে গেল। কিন্তু ডাক্তারি পরীক্ষা হতে দেরি হয়ে গেল আরও পাঁচদিন। বলা হল সব ডাক্তাররা ছুটিতে আছেন। তাই টেস্ট হওয়া সম্ভব নয়। পুলিশ বলছে ৯ ফেব্রুয়ারি রিপোর্ট লেখা হয়ে গেলে ১০ তারিখেই মহিলাকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া হয়। কিন্তু মেডিকো-ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ নাকি ছুটিতে আছেন। তাই হয়নি। কিন্তু একটি ডাক্তার ছুটিতে ছিলেন। বাকি সবাই কোথায় ছিলেন! এটাও আরেক ঠোক্কর। এরকম হল কেন?
এরকম হওয়ার একটা কারণ আছে। মহিলাটিকে তাঁর বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছোতে সাহায্য করেছিলেন বিধানসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ হাসিম আবদুল হালিমের ছেলে ফারুখ হালিম। তাইতেই গোলযোগ বেধেছিল। এসব শুনে মমতা বলে দিলেন তাঁর কাছে ‘খবর’ আছে ব্যাপারটা ‘সাজানো’ হয়েছে। এবং এটা একটা চক্রান্ত। বলা বাহুল্য এই খামখেয়ালি এবং আনতাবড়ি কথা বলার জন্যে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী অন্যান্য রাজ্যে এখন হাসির খোরাক। একটি ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত দৈনিক তাদের সম্পাদকীয়তে প্রায় এক মাস আগে ‘মমতা পাগল হয়ে গেছে’ বলেছে। একটি ইংরেজি সাপ্তাহিক কয়েকদিন আগেই ‘মমতার পাগলামি’ বলে আরেকটি খবর ছেপেছে। ভূভারতে কোন মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি পাগল বলেছে কোন সংবাদপত্র এমন উদাহরণ বিরল।
ধর্ষিতা মহিলার প্রতি মমতার নেতিবাচক মন্তব্যের পর পুলিশ কমিশনারের সাহস ফিরে এল। ‘ইনসান কে লিয়ে ইশারা হি কাফি হ্যায়’ অর্থাৎ মানুষের জন্যে ইশারাই পর্যাপ্ত। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই তদন্তের মাঝপথে রঞ্জিত কুমার পচনন্দা বলে ফেললেন ধর্ষণের অভিযোগই নাকি মিথ্যে! কিন্তু গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান দময়ন্তী সেন এইবার একটু কঠোর হয়েছিলেন মনে হয়। এর আগে সরকারি গোপন গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছিল বিভিন্ন অঞ্চলে নাকি তৃণমূলীদের দলে সিপিআইএম লোক ঢুকিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বাধিয়ে দিচ্ছে। তারপর আরেকটি পুলিশ রিপোর্ট বলেছিল গ্রামে গ্রামে নাকি ‘হামলাবাজ’রা সিপিআইএম-এর লোক। আর ‘আক্রান্ত’রা নাকি সরকার পক্ষের লোক। সরাসরি রাজনৈতিক দলের নাম দিয়ে এই দুটি গোপন রিপোর্ট খবরের কাগজের মাধ্যমেই জনসমক্ষে এসেছিল। ইশারাই পর্যাপ্ত। পুলিশ তো রাজ্য সরকারের। আর রাজ্য সরকার হীনমন্যতার স্বীকার। খামখেয়ালি তাদের ব্যবহার। পরিকল্পনাহীন তাদের কাজকর্ম। সেই সুযোগে কোন তদন্ত না করেই বাজে কাজের সঙ্গে সিপিআইএমকে জুড়ে দিতে পারলেই পুরস্কার। তাই নন্দঘোষই সব নষ্টের মূলে! অন্যদিকে পুলিশের দুই বিভাগের মধ্যে মন কষাকষি চলছিল। কারণ রাজ্যপুলিশ অধিকর্তা গোপন রিপোর্টে নাকি তখন কোন রাজনৈতিক দলের নাম লেখেননি। গোয়েন্দা বিভাগ নাকি রাজনৈতিক দলের নাম ঢুকিয়ে দিয়েছিল সেই রিপোর্টে!
এইবার পচনন্দা সাহেব তদন্তের মাঝখানেই অভিযোগকে অস্বীকার করার পর মনে হয়ে গোয়েন্দা বিভাগের কাছে পার্কস্ট্রিট ধর্ষণকান্ডটি একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। তার ওপর মহিলা নিপীড়িত হয়েছে বলে তাঁর মানবিক সত্ত্বা হয়ত ক্রমাগত সঠিক অনুসন্ধান করার ইঙ্গিত করছিল। তাই মুখ্যমন্ত্রীর ‘সাজানো’ কেস, পচনন্দার ‘মিথ্যা কেস’কে নাকচ করে তিনি বলে দিলেন মহিলা ধর্ষিতা হয়েছিলেন। এরপর বন্ধ ঘরে সব পুলিশ কর্তাদের ডেকে মুখ্যমন্ত্রী কি বললেন কেউ জানেনা। তবে এইটুকু বুঝতে অসুবিধা হলনা যে ঘর বন্ধ করে মুখ্যমন্ত্রী ঢোঁক গিললেন আর ঘর থেকে বাইরে এসে পুলিশ কর্তারা ঢেকুর তুলে জানিয়ে দিলেন তাদের কথায় আর কাজে কোন মিল নেই। যাকে তাঁরা মিথ্যে বলেছিলেন তাই পরে সত্যি হয়ে গেল। এ যাত্রায় উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানো গেলনা। তাই মুখ্যমন্ত্রী পুনরায় ঢোঁক গিললেন। 
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM