Flickr Gallery

Friday, December 30, 2011

সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কেন 'বকুনি' খেলেন?


পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিকগুলি লোকপাল বিলে রাজ্যের ক্ষমতার ওপর হস্তক্ষেপ নিয়ে রাজ্যসভায় মমতার দলের জোরালো বিরোধিতাকে গুরুত্ব দিয়ে একটি বিশেষ কথা বেমালুম চেপে গেল। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর মমতা কেন্দ্রে কংগ্রেসের বিরোধিতা করে চলেছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার জলবন্টন চুক্তি দিয়ে শুরু। তারপর হঠাৎ পেট্রোলের দাম বাড়ান নিয়ে বিরোধিতা। তারপর খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা। তারপর পেনশন বিল। তারপর লোকপাল বিল। সবে কলির সন্ধ্যা লগ্ন। রাত হতে বাকি আছে।

শুধু রাজ্যসভাতেই নয়। লোকপাল বিলের মাধ্যমে রাজ্যের ওপর অহেতুক কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের ইচ্ছার কথা লোকসভাতেও জানিয়েছিল মমতার দল। কিন্তু মাঝখানে ‘ফেঁসে’ গেলেন মমতার দলের লোকসভা টিমের মুখ্য আহ্বায়ক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি খবরে প্রকাশ তাঁকে মূখ্য সচেতকের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আড়ালে আবডালে শোনা যাচ্ছে তিনি অপমানিত হয়েছেন এবং দল ছাড়ার জন্যে মনস্থির করে ফেলেছেন।
মমতার দ্বিচারিতার কথা বাংলা দৈনিকগুলি কৌশলে চেপে গেল। মমতার দল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সদস্য। সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটিতেও আছে। সর্ব ঘটে কাঁঠালি কলার মতো উপস্থিত থেকেও বিলটি তৈরি করা থেকে শুরু করে লোকসভাতে আনা পর্যন্ত টুঁ শব্দটুকু করেনি মমতার দল। অর্থাৎ বিলটি নিয়ে তাদের কোন আপত্তি কোনদিন ছিলনা। লোকপাল বিল নাকি জনলোকপাল বিল! এই নিয়ে আন্না হাজারের তুমুল শোরগোলের মধ্যেও বিলের পক্ষে বা বিপক্ষে মমতার দলের একটিও মন্তব্য শোনা যায়নি। কেন্দ্র সরকারের লোকপাল বিল বিষয়ে মৌন থেকে মমতা সম্মতি দিয়েছেন এই কথা না বললেও বোঝা যায়। মৌনেন সম্মতি লক্ষণম্‌।
কিন্তু এই বিষয়ে দ্বিচারিতা শুরু হল শীতকালীন অধিবেশনের শেষের দিনে। লোকসভাতে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিলের বিরোধিতা করেও বিলের পক্ষে ভোট দিলেন। মমতার দলের উপস্থিত বাকি সাংসদরাও বিলের পক্ষে ভোট দিয়ে ফেললেন। ভুল করে কি সাংসদরা এমন কাজ করলেন? রাজনৈতিক মহল এখানে প্রণব মুখার্জির সঙ্গে মমতার গোপন বোঝাপড়ার উল্লেখ করছেন। যাই হোক না কেন, মমতার দলের সাংসদদের নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে কোন সচেতনতা নেই। বিলের বিপক্ষে কথা বলে বিলের পক্ষে দাঁড়িয়ে তাঁরা প্রমাণ করে দিলেন যে তাঁদের কথায় এবং কাজে কোন মিল নেই।
অন্যদিকে মমতার দলের রাজ্যসভার সদস্যরা বিজেপির নেতাদের সঙ্গে আগে ভাগে দেখা করে কেন্দ্র সরকারকে প্যাঁচে ফেলার চাল স্পষ্ট করে এসেছিলেন। তাঁরা রাজ্যসভায় যে বিরোধিতা করবেন এই কথা বিজেপি জানত। এবং রাজ্যসভায় ভোট হলে তাঁরা যে বিপক্ষে ভোট দিয়ে দেবেন একথাও স্পষ্ট ছিল। কংগ্রেস চালটি ধরে ফেলে তাই রাজ্যসভায় আর ভোটাভুটির পথ না মাড়িয়ে কাঁটায় কাঁটায় রাত বারোটায় হৈ হট্টগোলে রাজ্যসভা চালানোর অক্ষমতা জাহির করে সভা মুলতুবি করে ভোট ভন্ডুল করে দিল। লোকসভায় ভোট দেওয়ার পরে ‘বকা’ খেলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপিকে খুশি রাখা এবং দু নৌকায় পা দিয়ে এখন থেকে চলতে শুরু করলে আখেরে লাভ হবে মমতার দলের। মারপ্যাঁচ বুঝতে না পেরে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় রাগ করে দল ছেড়ে দেওয়ার জন্যে তৈরি হয়ে গেলেন। আজ নিশ্চয়ই তিনি দ্বিচারিতা কেন তা বুঝতে পেরে নিজের রাগ কমিয়ে আবার দেবী ভজনায় মন দেবেন।
রাজ্যে মমতা কংগ্রেসকে আগেই হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন। তিনি বেশ কয়েকবার বলেছেন যে ‘ঘর করা’ পছন্দ না হলে কংগ্রেস সরে যেতে পারে। মমতা যে একাই ‘ঘর করতে’ সক্ষম এই কথাটিও বারবার কংগ্রেসকে মনে করিয়ে রাখা হয়েছে। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকে কেন্দ্রে কংগ্রেসকে প্যাঁচে খেলিয়ে মমতা যে বকলমে কংগ্রেসি শরিক থেকে সরে আসতে চাইছেন এই ফন্দি কংগ্রেসেরও অজানা নয়। কিন্তু কেন্দ্রে মমতাকে ছাড়া কংগ্রেসের চলবেনা। তাই লাথি চড় হজম করে কংগ্রেসকে মমতার সঙ্গে ‘ঘর’ করতে হচ্ছে।

নখদন্তহীন লোকপাল বিল নাকি মমতাই রুখে দিলেন। সংবাদপত্রগুলি এমন কথা ফলাও করে চাঊড় করে দিল। মমতা যে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের দিকে চোখ ঠিকরে তাকিয়ে আছেন এই কথাটি গোপন থেকে গেল। ক্ষমতার অলিন্দে থাকতে হলে মমতাকে সুবিধেবাদী রাজনীতি করতে হবেই। ইতিহাস পরম সাক্ষী। আগামী দিনে বিজেপির সঙ্গে ‘গাঁটছড়া’ বাঁধতে হতে পারে।  এখন কংগ্রেসের দায় বেশি। তাই কংগ্রেস বারবার কিল খেয়ে কিল হজম করে নিচ্ছে। এখনও দুবছর তারা লুটেপুটে খেতে পারবে। তাই ঝাঁটা লাথি যাই মারো বাপু, বিচ্ছেদ সম্ভব নয়। ‘কলসীর কানা’র মার খেয়েও ‘প্রেম নিবেদন’ করতে কংগ্রেস বাধ্য থাকবে। এত কথা বাংলা সংবাদপত্রগুলি লিখবে কেন? তাই তারাও দেবী ভজনায় মন দিল।
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM