বিধায়ক পরেশ পাল একটি অতি সাধারণ অটোচালককে মেরে বসলেন আজ। অন্য আরেকজনকে মাঝরাস্তায় কান ধরে 'ওঠবোস' করিয়ে নিলেন। কোন এক কাউন্সিলর দোলা সরকার মেরে বসলেন আরেক অটোচালককে। বিধায়ক সুলতান সিংহ তাঁদের জোট সরকারের শরিক কংগ্রেসের এক নেতাকে পিটিয়ে দিলেন। কিছুদিন আগে মমতার শ্রমিকদের নেতা দোলা সেন ট্রাফিক পুলিশকে চড় মেরেছিলেন। তারও কিছুদিন আগে হঠাৎ নিজের গাড়ি থেকে নেমে চিল চিৎকার করতে করতে মুখ্যমন্ত্রী হকারদের তাড়া করেছিলেন। মমতার দলের সাধারণ সদস্যরাও কম যাবেন কেন? তাঁরা সাংবাদিক পেটাচ্ছেন। তাঁরাও অটোচালককে পেটাচ্ছেন। তাঁরা বামপন্থী কর্মী ও নেতাদের পিটিয়ে খুন করছেন। তাঁরা শিক্ষক পেটাচ্ছেন। তাঁরা ছাত্র পেটাচ্ছেন। বাংলায় গুন্ডাদের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গেছে। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের একাংশ এখন গোপালভাঁড়ের ভূমিকা নিয়েছে।
গ্রন্থাগার কান্ডের আগে পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে গেলেও সংবাদমাধ্যমে তেমন করে পাত্তা পায়নি। অনেক জায়গায় মমতার দলের গুন্ডারা লোক পিটিয়ে খুন করে ফেললেও ধামাচাপা দিয়েছে সংবাদমাধ্যম। মমতার দলের গুন্ডাদের দৌরাত্ম্যকে সাধারণ মানুষের জনরোষ বলে সুকৌশলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কয়েকটি শক্তিশালী সংবাদমাধ্যমের ওপর ‘নিষেধাজ্ঞা’ জারি হওয়ার পর থেকেই ‘জনরোষ’এর শিকার হওয়া কমে গিয়ে মমতার দলের গুন্ডাদের শিকার হতে শুরু করে দিল মানুষ। স্বীকার করতে হচ্ছে মমতার দলের কেউ সুস্থ নয়। সবাই উন্মাদ। মমতাও সুস্থ নয়। যারা মমতাকে আর তাঁর সাধের দলকে উন্মাদ বলছেন তাঁদের উক্তি ফলাও করে প্রচার করছে সংবাদমাধ্যম।
হট্টগোলের বাজারে আবার বুদ্ধিজীবিরা নেমেছেন। নাটকীয় সব ব্যক্তিত্বরা আবার মুখ খুলছেন। মুখ খুললেই পচা গন্ধ। তাও মুখ খুলতে হবে। মুখশুদ্ধি খেয়ে মঞ্চস্থ হচ্ছেন তাঁরা। এবার খবরের কাগজ বলছে মুখ খুলতে। বেশ কিছু নাটকীয় ব্যক্তিত্ব, গায়কীয় ব্যক্তিত্ব, বাদকীয় ব্যক্তিত্ব, লেখকীয় ব্যক্তিত্ব কিছু উচ্ছিষ্ট এঁটোকাটা না পেয়ে গোঁসা করে অনেকদিন মুখ বুজে ভাগাড়ে পড়েছিলেন। কিছু না পাওয়ার রাগে এবার ঝাল মেটাতে নেমেছেন। এবার যখন মঞ্চে প্রলয় নৃত্যের পালা চলছে তখন মুখশুদ্ধিজীবিরা দিশেহারা। এক গায়ক তো গিটার বাজানোই ছেড়ে দিলেন। দিনরাত মমতার বিরুদ্ধে কথা বলে চলেছেন। আবার মমতার প্রশংসা করতেও তিনি ভুলছেন না। একে বলে ভয়ে ভক্তি করা। তিনি বলেন, আমি তো আমার মমতার নামে এত কথা বলছি, অন্য কোন দল হলে আমাকে লাথি মেরে তাড়িয়ে দিত। কিন্তু ধন্যি আমার মমতা। দেখুন আমি এখনো দিব্যি দলের মধ্যেই আছি। আমি রাজনীতি জানিনা। তাও আমি একটি রাজনৈতিক দলের সাংসদ হয়ে বসে আছি।
কয়েকটি বড় সংবাদমাধ্যম নিজেদের শক্তি প্রদর্শনে নেমেছে। তবে মাধ্যমগুলি তাদের ভুল স্বীকার করছেনা এখনো। করবেও না। মমতাকে বাংলার ক্ষমতা পাওয়াতে যতটা মমতা চেষ্টা করেছিলেন তার চেয়েও বেশি শক্তি খরচ করতে হয়েছিল শক্তিশালী সংবাদমাধ্যমগুলিকে। তিলকে তাল বানিয়ে আর তালের তিল বানিয়ে দিনরাত ভুরিভুরি মিথ্যে কথা লিখে মানুষের মনে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি করতে সাহায্য করেছিল। নন্দীগ্রামের ফন্দিতে সংবাদমাধ্যমের একাংশ শরিক ছিল। এখন তার খেশারত দিতে হচ্ছে মানুষকে। সংবাদমাধ্যমের কিছুই যায় আসেনা। সরকার বিরোধী খবর ছাপলে কাগজ বেশি বিক্রি হয়। চ্যানেলের টি আর পি বাড়ে। ব্যাবসা বাড়ে। আলুর গোদাম পুড়লে যেমন গোপালভাঁড় পোড়া আলু খেতে পেয়ে খুশি হত তেমনি বাংলা পুড়লে সবচেয়ে বেশি খুশি হবে সংবাদমাধ্যমগুলি। তাদের টি আর পি আকাশ ছোঁয়া হয়ে উঠবে।
সংবাদমাধ্যমগুলির এখন অদ্ভুত অবস্থান লক্ষ্যণীয়। নিজেদের ভুল ঢাকতে তারা প্রাক্তন সরকারের সমালোচনা করতে ছাড়ছেনা। বর্তমান সরকারের তৈরি নৈরাজ্যও নাকি প্রাক্তন সরকারের কর্মফল! উন্মাদের সংখ্যা দিনের দিন বেড়ে চলেছে। এখন সবে মাত্র নয় মাস কেটেছে। এখন তো সবে সকালবেলা। বেলা গড়িয়ে দুপুর এলে পাগলামি আরও বাড়বে। গরমে পাগলামি বাড়ে বলেই জানি। প্রাক্তন সরকারে আশঙ্কা ছিল নৈরাজ্য আসবে। তাদের অনুমান বা আশঙ্কা সঠিক ছিল এখন তা রোজ প্রমাণিত হয়ে চলেছে। কিন্তু সংবাদমাধ্যম এই কথাটি এখনো স্বীকার করতে নারাজ। মাধ্যমগুলি ভুলে গেছে প্রাক্তন সরকারের ভবিষ্যৎবাণী। ফল ভোগ করতে হচ্ছে মাধ্যমগুলিকেও। খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের পিটুনি খেতে হচ্ছে এখন। এরকম আগে কোনদিন হত না বলেই জানি।
কিন্তু সংবাদমাধ্যমের মালিকপক্ষ মানুষের চিন্তায় আবার বিষ ঢোকানোর জন্যে এক নাগাড়ে বলে চলেছে সংবাদপত্রকে হুমকি দিত আগের সরকার। বর্তমান সরকারও দিচ্ছে। এ আর নতুন কথা কি! সংবাদমাধ্যম যদি নিজেদের দায়িত্ব বিষয় সচেতন না থাকে তবে যে কোন রাজ্যেই এত তাড়াতাড়ি নৈরাজ্য ডেকে আনা যেতে পারে। শক্তিশালী মাধ্যমগুলি যদি সচেতন না হয় তবে বাংলা আরও তাড়াতাড়ি পুড়বে। বাংলার গোপালভাঁড়রা পোড়া আলু খেয়ে খুশি হবে।