Flickr Gallery

Friday, February 24, 2012

সংবাদমাধ্যম গোরুর রচনা কেন লেখে?


আজ দুপুরে পশ্চিমবঙ্গের বহুল প্রচারিত একটি বাংলা বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের জনৈক সাংবাদিক হঠাৎ সিপিআইএম-এর রাজনৈতিক-সাংগঠনিক দলিল হাতে নিয়ে একই কথা প্রায় পঁচিশবার করে বলে বোঝাতে চাইছিলেন নেতাইকান্ডকে গণপ্রতিরোধ আখ্যা দেওয়ার ‘চেষ্টা’ করেছিল সিপিআইএম। 'ননস্টপ' আধঘন্টা সময় খরচ করে সংবাদমাধ্যমটি আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিল, বর্ধমানের প্রাক্তন বিধায়ক সহ জেলাস্তরীয় দুই সিপিআইএম নেতার হত্যাকান্ডকেও তারা গণপ্রতিরোধ বলবে। বৈদ্যুতিন মাধ্যমটি বহুল প্রচারিত। তাই তাদের কথা মানুষের কাছে ছুটে ছুটে পৌঁছে যায়। মানুষ তাতেই জনমত তৈরি করে নেয়। নেতাইতে ঠিক কি হয়েছিল, সেই কথাই চাপা পড়ে যায়। এবং সিপিআইএম নামক দলটি মানুষের কাছে হত্যাকারীর দল হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যায়। সেই কারণেই বর্ধমানের বর্বর হত্যাকান্ড মানুষের মনে দাগ কাটে না। অন্যদিকে আমাদের মতো এই সব দুঃস্থ লোকেদের ব্লগ বেশি লোকের কাছে পৌঁছোয়না। সুবিধে হয়ে যায় বাণিজ্যিক সংবাদমাধ্যমের। তারা নিজেদের স্বার্থ অনুযায়ী মিথ্যা প্রচার করে মানুষের মনে বামপন্থীদের বিরুদ্ধে অবিশ্বাসের বিষ ঢুকিয়ে দেয়।

দলিলের মধ্যে সাংবাদিকটি শুধুমাত্র দুটি লাইনের ‘জট’ ছাড়ালেন প্রায় আধঘন্টা ধরে। বাহান্ন পৃষ্ঠার সেই পুরো দলিলের জট যদি তাঁকে ছাড়াতে বলা হত তবে তাঁকে অন্তত পাঁচশো বছর বাঁচতে হত। ‘ঘটা’ করে অমিতাভ নন্দী, অনিল বসু, লক্ষ্মণ শেঠদের রাজ্য কমিটি থেকে বাদ দিলেও নেতাইকাণ্ডের চার্জশিটে নাম থাকা সিপিআইএম নেতা অনুজ পাণ্ডে, ফুল্লরা মণ্ডল, চণ্ডী করনরা এ বারও জেলা কমিটিতে ঠাঁই পান কী করে? দীপক সরকার, সুশান্ত ঘোষই বা কী করে পদে বহাল থাকেন? বৈদ্যুতিন মাধ্যমটির সাংবাদিকের শারীরিক ভাষা দেখে মনে হচ্ছিল তাঁর মালিক তাঁকে অনেকটা সময় নিয়ে ‘সন্ত্রাস মোকাবিলায় গণপ্রতিরোধের রূপ কী হবে?’ তাই নিয়ে গোরুর রচনা মুখস্থ বলতে বলেছেন। তাই তিনি এক নাগাড়ে গোরুর রচনা বলে গেলেন। 

সাংবাদিকটি বললেন নেতাইয়ে যারা মারা গেছে তারা সিপিআইএম-এর জন্য বন্দুকবাজি করার কাজ অস্বীকার করেছে বলে ‘হার্মাদ’রা তাদের গুলি করে মেরেছে। অথচ যারা সেদিন মারা গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে দু’জন ছিলেন সিপিআইএম-এর সক্রিয় কর্মী। যারা সেদিন মারা গিয়েছিলেন তাঁরা প্রায় সবাই তার সাতদিন আগে লালগড়ের সিপিআইএম-এর সমাবেশে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। অথচ সাংবাদিকটি বললেন এইসব লোকেরা নাকি সিপিআইএম-এর দুষ্কর্মের সঙ্গী হয়নি বলে সিপিআইএম-এর লোকের তাদের গুলি করে মেরেছে। এখন আবার পুরোন কাসুন্দি ঘাঁটতে হচ্ছে। কারণ এই রাজ্যে নৈরাজ্যকে প্রশ্রয় দিতে গেলে এবং বামপন্থী আন্দোলনকে নির্মূল করতে গেলে একটা নেতাই যথেষ্ট নয়। নেতাইয়ের মিথ্যা সংবাদও যথেষ্ট নয়। চাই অনেক নেতাই। তাই মুখস্থ গোরুর রচনা এরপর আবার অনেকবার শোনা যেতে পারে। 

লালগড়ের জঙ্গলমহল স্বাভাবিক হতে গিয়েছিল। ঘরে ফিরতে শুরু করেছিলেন ঘরছাড়া গ্রামবাসীরা। লালগড়ে লক্ষ মানুষের জমায়েত তাঁদের ঘরে ফিরতে সাহস জুগিয়েছিল। কিন্তু শঙ্কিত হয়ে পড়ল তৃণমূল-মাওবাদী জোট। পরিকল্পনা অনুযায়ী সশস্ত্র হামলা চালালো। কিন্তু পরিকল্পনার সাগরেদ ছিল একটি সংবাদমাধ্যম আর তাদের ঘনিষ্ঠ মমতাপন্থী কিছু নির্বুদ্ধিজীবির দল। শুরু হয়ে গেল মিথ্যা প্রচার। যারা খুনী, তারাই প্রচার করে দিল সিপিআইএম এই গ্রামে এসে সব শেষ করে দিয়েছে। প্রচুর লোক মেরেছে। প্রচুর লোককে গায়েব করে দিয়েছে। নন্দীগ্রামের ধাঁচে প্রচার চালিয়ে মানুষকে আসল সত্য থেকে বঞ্চিত রেখে সংবাদমাধ্যমটি নৈরাজ্য ডেকে এনেছে।

তাই বর্ধমানের দুই সিপিআইএম নেতার বর্বর হত্যাকান্ডকে তারা তত্ত্বগতভাবে সঠিক প্রমাণ করতে চাইছে। ‘গণপ্রতিরোধ’-এর তত্ত্ব খাড়া করেছে। তাই সিপিআইএম-এর রাজনৈতিক-সাংগঠনিক দলিল হাতে নিয়ে একটি বাক্যকে পঁচিশবার পড়ে, গোরুর রচনা শুনিয়ে মাধ্যমটি বলতে চাইছে যেহেতু নেতাইয়ে সিপিআইএম গণপ্রতিরোধের নাম দিয়ে ‘গণহত্যা’ করেছে তাই বর্ধমানে ওই একই তত্ত্বে গণহত্যা হতেই পারে। দুটিই মিথ্যা এবং হলুদ সংবাদ। কিন্তু সংবাদমাধ্যমটি বহুল প্রচারিত বলে প্রচুর মানুষ একসঙ্গে বিশ্বাস করে নেবে সিপিআইএম নেতাইয়ে লোক খুন করেছিল। তাই তার প্রতিবাদে বর্ধমানে তাদের নেতারা খুন হয়ে গেল। এরকম তো হতেই পারে। এতে আর নৈরাজ্য কোথায়! ওসব বুজরুকি। বামপন্থী আন্দোলন শক্তিশালী হলে সংবাদমাধ্যমের এইরূপ মিথ্যা প্রচার বাড়বে। যখনই তারা সিপিআইএম-এর শক্তিবৃদ্ধি দেখে আশঙ্কিত হবে তখনই তারা ঝুলি থেকে নেতাই নন্দীগ্রাম বের করে গোরুর রচনা লিখবে। তখন ছিল কৃষকের জন্যে দরদ। এখন কৃষক দরদ না দেখালেও চলবে। এখন গোরুর রচনা লিখলেই কাজ হবে।
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM