Flickr Gallery

Sunday, March 4, 2012

সংবাদমাধ্যম ব্যাবসার পথ প্রশস্ত করছে



রাজ্যের দৈন্যদশা শুরু হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমের একাংশের ফ্যাসাদ বেড়েছে। সাপের ছুঁচো গেলার অবস্থা। না পারছে পুরোপুরি গিলে ফেলতে। না পারছে উগরে দিতে। ‘প্রাক্তন সরকার দলতন্ত্র কায়েম করেছিল’ এই কথাটা বর্তমান সরকারের দলতান্ত্রিক অভিসন্ধি চাপা দিতে বারবার ব্যবহার করা হচ্ছে। একটি নতুন নাম নজরে এল। যীশু সরকার। শিশু সরকার। প্রাক্তন সরকারের নাম রাখা হয়েছে যীশু সরকার। হঠাৎ নাকি ঘুম ভেঙে যীশু সরকার দেখতে পেল রাজ্যে নৈরাজ্য। এসব কিছুই নাকি যীশু সরকারের কাছে নতুন মনে হচ্ছে। নৈরাজ্য আগে থেকেই ছিল - এই ‘সত্য’ প্রমাণ করতে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এখন প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে।

আরেকটা তত্ত্ব নিয়ে কিছু তাত্ত্বিক নেতা এবং বিশ্লেষক আলোচনা করছেন। তাঁদের কথা হল, নৈরাজ্যের মূলে বেনোজল। অর্থাৎ এক নৌকা ছেড়ে বেশ কিছু লোক এখন নাকি অন্য নৌকায় চেপে বসেছে। তাই নৈরাজ্য। এই কথাটিও অদ্ভূত। যখন সবাই দেখতে পাচ্ছে বেনোজল নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে, তখন তাদের দুধকলা খাইয়ে পুষে রাখা হচ্ছে কেন! বিশ্লেষণ যতই বাড়ছে ততই প্রাক্তন সরকারের দিকে আঙুল উঠছে। দলতন্ত্র কায়েম হয়েছে। কিন্তু ‘নয়া দলতন্ত্র’ বলে তাকে ডাকা হচ্ছে। অর্থাৎ প্রমাণ করার চেষ্টা হচ্ছে, পুরোন সরকারের আমলে ‘দলতন্ত্র’ ছিল। পরিবর্তনের ফলে নাকি ‘নয়া দলতন্ত্র’ হয়েছে। বলা হচ্ছে দলতন্ত্রের প্রভাব থেকে নিস্তার পাওয়া দুষ্কর। 

মুখ্যমন্ত্রী আগ বাড়িয়ে তদন্ত প্রক্রিয়ায় নিজের প্রভাব বিস্তার করতে এবং তাঁর দলের দুষ্কৃতীদের আগলে রাখতে কিছু না বুঝেই এমন মন্তব্য করছেন যেন মনে হচ্ছে উনি গল্পের শার্লক হোমস। এমন কিন্তু আগে হতনা। বিষমদ কান্ড, শিশুমৃত্যু, পার্কস্ট্রিট ধর্ষণকান্ড, বর্ধমান হত্যাকান্ড, সাংবাদিক নিগ্রহ, কাটোয়া ধর্ষণকান্ড ইত্যাদির সবকিছুতেই আলটপকা আনতাবড়ি মন্তব্য করার মতো প্রশাসক আগে ছিলেননা কেউ। অনেক ঘটনা নিশ্চয় ঘটেছে। আনতাবড়ি কথা বলার লোক কম ছিল তখন। কাগজে ফলাও করে লেখার সু্যোগ থাকতনা। তাই অনেক মানুষ এবং বিদ্বজনের বলাবলি করছেন রাজ্য এখন নিরাপদ নেই। অর্থাৎ আগে যত অশান্তি থাকুক না কেন রাজ্য নিরাপদ ছিল। কিন্তু সংবাদমাধ্যম ছুঁচো গিলেছে। তাই গিলতেও পারছেনা। উগলাতেও পারছেনা। এখন কয়েকটি মাধ্যম নয়া দলতন্ত্রের তত্ত্ব প্রচার করে যাচ্ছে। 

আমার তো মনে হচ্ছে ভুল করে ফেলেছে সংবাদমাধ্যমের একাংশ। এইরকম হবে জানতে পারলে তারা নিজেদের মাধ্যমে নয় মাস আগে ভুরিভুরি ধর্ষণ, হত্যা, চুরি ডাকাতির ঘটনা ছেপে রাখতে পারলে এখন তাদের বলার সুযোগ থাকত আগেও এইসব কান্ড ঘটেছে। ধনঞ্জয় আগেও ছিল। এখনো আছে। ‘ধরা পড়লে ধনঞ্জয়, নইলে এনজয়’ এই কথাটি তখন চালু হয়েছিল। এখনকার ‘ধনঞ্জয়’রা ধরা পড়ছেনা। সরকারি দলটার দুষ্কৃতীরা বুক ফুলিয়ে সবরকম অসামাজিক কাজ করে বেড়াচ্ছে। কিছু সংবাদমাধ্যম অনেক কিছু লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করলেও টুকটাক ঘটনাগুলি ফাঁকফোকর দিয়ে নজরে পড়ে যাচ্ছে। তাই মনে হচ্ছে সাপে ছুঁচো গিলে ভুল করে ফেলেছে। 

নিজেদের সমালোচনা শুনে অধৈর্য্য হয়ে পড়ছে বর্তমান সরকার। প্রতিটি সমালোচক সরকারের চোখে চক্রান্তকারী হয়ে যাচ্ছেন। আর তার জবাব কিভাবে দিতে হবে তার ইশারা দলনেত্রী বহুদিন আগেই করে রেখেছেন। সমালোচকরা জবাব পাচ্ছে।

একটি সংবাদমাধ্যম তাদের জনৈক সাংবাদিক মার খেয়েছে বলে দুষ্কৃতী আটক করার দাবিতে ছেলেমানুষি করে যাচ্ছে। অথচ এই মাধ্যমটি নিজেদের পোষ্য বুদ্ধিজীবিদের দিয়ে রোজ রোজ মিথ্যে কথা বলিয়ে, আর তার ঘনঘন প্রচার করে রাজ্যের জনমানসে শূন্যতা তৈরি করতে সাহায্য করেছে। মিথ্যে খবর ছেপেছে। সঠিক খবর ছাপতে চায়নি। কিছুদিন আগে অনেকেই বলাবলি করত পশ্চিমবঙ্গের জনৈক বহুল প্রচারিত একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যম বর্তমান সরকারপক্ষের দলীয় প্রচার মাধ্যম হয়ে উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রী অন্যরাজ্যে গিয়ে অন্যান্য সংবাদমাধ্যমকে বলে এসেছিলেন, তিনি সবাইকে ব্যাবসা দিতে পারেননা তাই যারা ব্যাবসা পায়না তারা সরকারবিরোধী প্রচার করে। তখন এই আলোচ্য সংবাদমাধ্যমটি মুখ্যমন্ত্রীর জন্যে সকাল সন্ধ্যে ঢাক পেটাত। হয়তো এসব ওরা টাকাপয়সার লেনদেন করেই করত। এখন মনে হয় ব্যাবসা বন্ধ। তাই সমালোচক হয়ে গিয়ে চাপ সৃষ্টি করা যাক। যেন এরপরে আরও বেশি করে ‘ব্যাবসা’ আদায় করে নেওয়া যায়। 

সংবাদমাধ্যমগুলির একাংশের কথনে সেই ইঙ্গিতই ফুটে উঠছে। তাই কেউ ‘নয়া দলতন্ত্র’ নামক শব্দ উত্থাপন করে পুরোন দলতন্ত্রের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। কেউ আবার আমলারা যে ‘দলদাস’ এই কথাটা অকপটে স্বীকার করে নতুন সরকারের দোষ ঢাকছে। অথচ প্রাক্তন আমলাদের নিয়ে এতবেশি খোলাখুলি আলোচনা করার সুযোগ মাধ্যমগুলির কাছে ছিলনা। নয় মাসে আমলাদের দিকে যতগুলি আঙুল উঠেছে নয় বছরে ততগুলি আঙুল উঠেছে কিনা সন্দেহ। ৩৪ বছরের দলদাসত্ব ঘুচিয়ে মাত্র নয় মাসেই বর্তমান সরকার আমলাদের ‘পোষ’ মানিয়ে নিয়েছে। সংবাদমাধ্যমের একাংশ পশ্চিমবঙ্গে শক্তিশালী সরকারি জোটের অঙ্গ। ব্যাবসা পেলেই আবার পোষ্য হয়ে যাবে।
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM