Flickr Gallery

Monday, September 9, 2019

আমরা কি বৈদিক যুগের খুব কাছাকাছি?


গোরুর গাড়ির গাড়োয়ানকে দেশ চালাতে বলা হল। তারপর কি কি হল! একটু ধৈর্য্য ধরুন। আপনিও বুঝতে পারবেন কেমন দশা হল। প্রথমেই দুটো গোরুকে দেশের আগায় বেঁধে দেওয়া হল। একদিকে একটা চতুষ্পদ গোরু। যার লেজ আছে। আরেকদিকে রাখা হল ভক্তিরসে ডুব দিয়ে শুদ্ধ হওয়া শিং গজানো ভক্তকূল। যার লেজ নেই। গোরু না বাঁচালে দেশ কেমন করে চলবে? এই ধারণা সকলের মনের মধ্যে গেঁথে দেওয়া হল। দেশের এই দুই মহান চালিকাশক্তিকে রক্ষা করার জন্যে গোরক্ষক তৈরি হল। আর তৈরি হল অসংখ্য গোশালা বা খাটাল। গোরুই আমাদের ভবিষ্যতের কর্ণধার। এইরকম একটা ধারণা তৈরি হয়ে গেল। সবাই বুঝতে শুরু করলাম গোরু না থাকলে দেশ চলতে পারেনা।

গাড়োয়ান এবার ভাবল দেশের দুটো চাকা লাগবে। নইলে দেশ চলবে কি করে! একদিকে রামমন্দিরকে চাকা হিসেবে জুড়ে দেওয়া হল। আর একদিকের চাকা কাশ্মীর। ক্যাঁচকোঁচ শব্দ উঠল। আমরা সবাই বুঝলাম চাকা নড়তে শুরু করেছে। বিরক্তি দেখানোর জায়গা নেই। দেশ যখন চলে তখন এমন শব্দ হতেই পারে। এখন দেশ চলতে শুরু করেছে। এই শব্দ আপনার অপছন্দ হওয়া মানে আপনি চাইছেন না যে দেশটা চলুক। আপনি তার মানে দেশপ্রেমিক না। আপনি তার মানে দেশদ্রোহী।

গোরু এবার দেশ টানতে শুরু করল। গাড়োয়ান বুঝল দেশ বেশ দুলকি চালে চলছে। গোরুর বদলে পঞ্চাশ অশ্বশক্তির দুটো ইঞ্জিন বসালেও দেশ চলতে পারত। কিন্তু বৈদিক আমলের গোশক্তিকে অবহেলা করে অশ্বশক্তি দিয়ে দেশ চালালে ব্যাপারটা বিদেশের অনুকরণ মনে হত। ঘোড়া ভারতে এসেছে সব বাইরের দেশ থেকে। তার চেয়ে দেশোয়ালি গাধার কথা চিন্তা করা ভাল। এই গোরু দুটো বুড়ো হয়ে গেলে দুটো গাধা জুড়ে দেশ চালানোর আগাম চিন্তা করে রেখেছে গাড়োয়ান। তাই শুনে আমি নিশ্চিন্ত আছি। দেশটা আমাদের আর থমকে দাঁড়িয়ে যাবেনা কোনদিন।

যদিও গোরুর গাড়ি অর্থনীতির তোয়াক্কা করেনা। কিন্তু দেশ বলে কথা। অর্থনীতি নিয়ে ভাবতেই হবে। গোরুর ল্যাজে মোচড় দিলেই দেখা গেল গোবর ঝরছে। গাড়োয়ান গোবর অর্থনীতির আবিষ্কারক হয়ে গেল। এই গোবর দেশের অর্থনীতিতে বিশাল জায়গা করে নিল। গাড়োয়ান ঘনঘন ল্যাজে মোচড় দিয়ে গোবর ঝরিয়ে দেশে অর্থনৈতিক বিপ্লব এনে দিল। গোবর আমাদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করল। গাড়োয়ান বুঝল গোবরময় দেশ ভাল মতই চলছে। তবে গোরুর গাড়ির চাকা চলার মতো রাস্তা নেই। গাড়োয়ান এবার রাস্তার দিকে নজর দিল। পাকা আর মসৃণ রাস্তা দিয়ে গোরুর গাড়ি চললে গোরুদের ওপর দিয়ে বিশাল ধকল যায়। এর একটা উপায় বের করল গাড়োয়ান।

গোরুর গাড়ি চলার জন্যে নরম রাস্তা চাই। যেমন ভাবা তেমন কাজ। সিমেন্টের কারখানাগুলো বন্ধ করে দিল। লোহা স্টিলের ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দিল। এগুলো রাস্তা তৈরি করতে কাজে লাগত। এগুলো না থাকলে রাস্তা করার বালাই থাকেনা। এরপর গাড়ি কারখানাও বন্ধ করে দিল। রাস্তাই থাকবেনা তো গাড়ি চলবে কি করে? গাড়োয়ানের এই দূরদর্শী পদক্ষেপ দেশকে আলোকবর্ষের গতিতে বৈদিক আমলের মাত্র দেড়শো মাইল দূরে গিয়ে দাঁড় করাল। এখান থেকে এখন আমি রামরাজ্য থেকে ভেসে আসা জয়শ্রীরাম ধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। আপনি যদি এখনও শোনেননি তবে কানের ডাক্তার দেখান।
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM