Flickr Gallery

Wednesday, October 31, 2012

ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী পদ্যময়!



পশ্চিমবঙ্গে এখন গেল গেল রব ঊঠছে। গিয়েছিল টাটা। তারপর জিন্দাল। তারপর উইপ্রো। তারপর লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো। তারপর অনেক কেউ। এইবার গেল এবিজি। এবিজি কোন কারখানা কোম্পানি নয়। তারা বন্দরে বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজের পণ্য খালাস করার একটি বড়সড় কোম্পানি। দলের সাংসদদের ‘আতিথেয়তা’য় পঙ্গু অবস্থা হয়েছিল এদের। হাইকোর্ট দেখাল এবিজি। কিন্তু কথায় আছে বাঙালকে হাইকোর্ট দেখিয়ে কি হবে! তেমনি তাঁদের হাইকোর্ট দেখিয়ে কিছু হয়না। হাইকোর্ট বলল, পুলিশ পাহারায় পণ্য খালাস করা হবে। তাঁর পুলিশ বলল, পুলিশের পাহারা বসাতে পয়সা লাগবে। সাড়ে সতের লক্ষ টাকা! এবিজি বলল, ঠিক আছে, তবে তাই দিলাম।

ওমা! পুলিশ যখন রাতের বেলা ঘুমিয়ে পড়েছে, ঠিক তখনই কারা যেন জনা পঞ্চাশ লোক পাঠিয়ে এবিজির বড়কর্তাদের আর তাদের বৌ বাচ্চাদের বাড়ি থেকেই তুলে একেবারে মেচেদা লোকালে বসিয়ে এল। পুলিশ সকালে ঘুম থেকে উঠে বলল, সব কিছু নর্মাল। কোথাও কিচ্ছু হয়নি। সব ঠিকঠাক আছে। এবিজির বড়কর্তারা রাতদুপুরে মেচেদা লোকাল ধরে বিশাখাপত্তনম চলে গেছেন। যাওয়ার আগে এসএমএস করে গেছেন। এই দেখুন। ব্যাস। এবিজি ফিনিশ! সরকার যে কি জিনিস তা এবার সবাই চাক্ষুষ হল। হাইকোর্ট দেখিয়ে কি হবে! পশ্চিমবঙ্গে এখন হাইকোর্টের চেয়ে বড় তাঁর দলের সাংসদরা। তাদের চেয়ে বড় তিনি। তিনি মমতাময়ী। তিনি ক্ষমতাময়ী। তিনি শিল্পবান্ধব। তিনি সর্বজ্ঞানী। তিনিই মমতা!

তিনি যে অনেক বড় তা লোকে জানে। তিনি মুখ্যমন্ত্রী। নিন্দুকের নিন্দা করার জন্যে তাঁকে মূর্খমন্ত্রী বলেও ডাকাডাকি করতে শুরু করেছেন। তিনি ডেঙ্গুর ওষুধ বাতলে দিতে পারেন। তিনি ভূমিকম্পের মাপকাঠি ঠিক করে দিতে পারেন। তিনি ডহরবাবুর জন্মদাত্রী। তিনি রবীন্দ্রনাথকে লেবুজলে গুলে খেয়েছেন। কথায় কথায় রবীন্দ্রনাথ। রাস্তার মোড়ে মোড়ে রবীন্দ্রনাথ। বক্তৃতায় রবীন্দ্রনাথ। জন্মদিন আর মৃত্যুদিনের কুচকাওয়াজ রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে। মহাপুরুষদের জন্মদিন যে কোন দিন পালন করা যেতে পারে। পশ্চিমবঙ্গটাই এখন রবীন্দ্রময়। ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী পদ্যময়!

দেড় বছরে সাড়ে তিপ্পান্নবার সংবাদপ্ত্রকে আর সাংবাদিকদের চোখ রাঙিয়েছেন। তার ভক্তরা বেশ কয়েকবার সাংবাদিকদের পিটিয়ে দিয়েছেন। যুগটা ভালই চলছে। সংবাদপত্রের তাঁকে নিয়ে হ্যাংলামি খানিকটা হলেও বন্ধ হয়েছে। নিন্দুকেরা আগে থেকেই বলাবলি করতেন গণতন্ত্র পথে বসতে চলেছে। সংবাদপত্রগুলি সে কথা বিশ্বাস করতে চাইত না। কিন্তু কথায় আছে, গরীবের কথা বাসি হলে মিষ্টি লাগে। সেই কথাগুলি এখন মিষ্টি লাগলেও ‘গরীব’কে সবাই ভুলে মেরে দিয়েছে।

তিনি খুব একটা সাজগোজ করেন না। কিন্তু বাদবাকি সব কিছুই সাজানো। পার্কস্ট্রিট কান্ড থেকে শুরু করে এবিজির পলায়ন সব কিছুই একেবারে সাজানো গোছানো। কলকাতার ‘ঝাঁ চকচক’ রাস্তার ধারে ধারে তেঠ্যাঙা বাতি সেজেগুজে টিমটিম করে জ্বলছে। কলিকাতা তিলোত্তমা হয়ে উঠেছে। নিন্দুকেরা এসব আর সহ্য করতে পারছেন না। তেঠ্যাঙার সৌন্দর্য্যের প্রশংসা না করে ঐ তেঠ্যাঙা বাতি কেনার জালিয়াতির প্রসঙ্গ টেনে হুজ্জুতি শুরু করেছে। ফ্যাকাসে নীল রঙের টানে কলকাতা লন্ডন হয়ে গেলেও সেদিকে নিন্দুকরা আর তাকাচ্ছেন না। রঙ কেনায় নাকি জালিয়াতি হয়েছে। এইসব সাত সতের নিয়ে মেতে আছে সবাই। তেঠ্যাঙা বাতিই যেন ত্যাবড়ানো রুটি!

সবাই এখন আনন্দে আছে। চোর, ছিঁচকে, গুন্ডা, বদমাইশ এরাও আনন্দে আছে। নিন্দুকদের কথায় পাবলিক নাকি বলাবলি করছে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। আমি তো বলছি, ছাড়িস না মা। আমাদের আরও খানিকটা আনন্দ দিয়ে যা। আমরা এখন বেশ আছি।
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM