“হে সর্বলোকগামী হুতোম পন্ডিত, আমরা আপনার নিকট জ্ঞাত হইতে ইচ্ছুক যে আনন্দবাজার কে ছিল এবং কি ছিল তাহার অভিপ্রায়? জাগরীকান্ড দ্বারা আনন্দবাজার কি কি প্রমাণ করিতে উৎসাহী ছিল?” রাজা জনার্দন হুটাহুট শব্দ সহযোগে এইরূপ প্রশ্নবাণ নিক্ষেপ করিলে তৎক্ষণাত পন্ডিত হুতোম আবির্ভূত হইলেন।
“পুরাকালে বঙ্গবর্ষে আনন্দবাজার বলিয়া এক ব্যবসায়ী বিরাজ করিত। কথিত আছে আনন্দবাজার বহুকাল জীবিত ছিল। ধনীবর্গের ভজনা করিয়া ব্যক্তি জীবিকানির্বাহ করিত। একদা বঙ্গবর্ষে মিথ্যাচারী রাণী মমতার উদয় হইলে তাঁহার মিথ্যা প্রচার করিয়া জনৈক ব্যবসায়ী প্রজাগণের অভিশাপে সারমেয়কূলাভিষিক্ত হইয়াছিল তবুও মিথ্যাভজনা দ্বারা ওই ব্যবসায়ী রাণীকে সর্বদা প্রসন্ন রাখিয়া স্বর্গসুখ লাভ করিয়াছিল। রাণী তাঁহার ভজনায় প্রসন্ন হইয়া কিঞ্চিত বস্ত্রাদি ও উপঢৌকনাদি আনন্দবাজারের উপর বর্ষণ করিলে ব্যবসায়ীটি আহ্লাদিত হইয়া স্বপুচ্ছহেলনের দ্বারা মহানন্দে সেইসব ধনরাশি গ্রহণ করিয়া পরমসুখে কালযাপন করিত এবং সারমেয়স্বভাব জ্ঞাপন করিত। আনন্দবাজার নাম্নী ব্যবসায়ীর সারমেয়স্বভাব সঘন পরিলক্ষিত হইতে থাকিলেও বঙ্গবর্ষের জনতা ইহা বুঝিতে ক্ষণিক বিলম্ব করিয়াছিল। তবে যে সকল জনতা সারমেয়স্বভাবাপন্ন এই ব্যবসায়ীর জীবিকানির্বাহপদ্ধতি সম্বন্ধে অবগত হইয়াছিলেন তাঁহারা ইহার মুখদর্শন করিতেন না।”
“একদা বঙ্গবর্ষে মাওবাদী নাম্নী একটি প্রজাতির প্রকোপ বৃদ্ধি পাইয়াছিল। ইহারা বিভিন্ন রাজ্যের প্রজাগণকে ভীতসন্ত্রস্ত করিয়া বর্চস্ব স্থাপনায় প্রচেষ্টারত থাকিত। কথিত আছে যে মিথ্যাচারী রাণীর সঙ্গে মাওবাদীদের সুগভীর আত্মীয়তা ছিল। বহু বন্দী মওবাদীকে তিনি ছলের সাহায্য লইয়া মুক্ত করিবার জন্য সর্বদা আগ্রহ প্রকাশ করিতেন। তাঁহার এইরূপ কার্যনিমিত্ত উক্ত ব্যবসায়ী যথাসম্ভব মিথ্যা গল্পবিন্যাস করিয়া জনতাকে বশীভূত করিত। জাগরী নাম্নী এক মহিলা মাওবাদীকে মুক্তি দেওয়ার ছল করিয়া তাহাকে রাজসভায় আনয়ন করিয়া নাট্যসহযোগে মিথ্যাচারী রাণী কহিয়াছিলেন যে জাগরী অসামাজিক কার্যাদি হইতে বিমুখ হইয়াছে এবং তাহার হৃদয়ে সামাজিক প্রাণীরূপে বাস করিবার ইচ্ছা উদয় হইয়াছে। সুতরাং যে ব্যক্তি এইরূপ মনস্থির করিয়া সামাজিক জীবে রূপান্তরিত হইতে আগ্রহ প্রকাশ করিয়াছে তাহাকে সমাজের মূলস্রোতে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করা রাণীর একান্ত কাম্য এবং রাণী তাঁহার কোমল হৃদয়ের প্রলেপ সহযোগে সমগ্র মাওবাদী প্রজাতিটিকে সমাজের মূলস্রোতে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করিবেন। এই বলিয়া ব্যবসায়ী পুচ্ছ আন্দোলিত করিয়া রাণীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হইয়াছিল। রাণীর এইরূপ মিথ্যাবাদ প্রচার করিবার নিমিত্ত আনন্দবাজার নামক ব্যবসায়ীটি যথাশক্তি প্রয়োগ করিয়াছিল। রাণী ও ব্যবসায়ী ষড়যন্ত্র করিয়া বন্দী মাওবাদীদিগকে বিনা বিচারে মুক্তিপ্রদান করিবার নিমিত্ত এইরূপ ছলের ও কৌশলের অধীনস্থ হইয়াছিল।”
এইরূপ বর্ণনা করিয়া হুতোম পন্ডিত পক্ষবিস্তারপূর্বক মহাকাশে বিলীন হইলেন। রাজা জনার্দন মন্ত্রমুগ্ধ হইয়া সভাস্থিত সভাসদ ও প্রজাদিগকে প্রণাম করিয়া কালবিলম্ব না করিয়া উক্ত ব্যবসায়ীকে ভর্ৎসনা করিলেন।