Flickr Gallery

Thursday, April 19, 2018

ভারত বেদের আমলে ফিরে যাবে বলছে



দেশটাই বদলে গেছে। এখন গোরু অক্সিজেন ছাড়ে। এখন আমরা মনে করি, গণেশের ধড়ে হাতির মাথা কোন প্লাস্টিক সার্জন বসিয়েছিলেন। আমাদের বিশ্বাস, নিউটনের থিয়োরি ব্রহ্মগুপ্তের তত্ত্বের টুকলি! ডারউইনের তত্ত্ব ভুল। প্রসিদ্ধ বিজ্ঞানী হকিং নাকি বলে গেলেন যে বেদের মধ্যেই আইনস্টাইনের শক্তির তত্ত্ব আগেই ব্যাখ্যা করে রেখেছেন আমাদের দেশের মুনিরা। ত্রিপুরার নতুন মুখ্যমন্ত্রী বললেন মহাভারতের যুগে ইন্টারনেট ব্যবস্থা কায়েম ছিল। শাসক দলের বড় বড় মন্ত্রীরা বিজ্ঞানের এই কল্পতরু ব্যাখ্যা দিয়ে গল্পের গোরু গাছে চড়িয়ে দেওয়ার সু্যোগ হাতছাড়া করতে চাইছেন না। 
রাজস্থানের শিক্ষামন্ত্রী বাসুদেব দেবনানী। এক অনুষ্ঠানে গোরুর বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা করতে গিয়েছিলেন। সেখানে গোরুকে গাছে না চড়িয়ে মিডিয়াতে চড়িয়েছিলেন। বেশ কয়েকদিন মিডিয়ায় হইচই। তিনি বিশ্বাস করেন, গোরুই একমাত্র প্রাণি যে কিনা নিশ্বাসে অক্সিজেন নেয় আবার প্রশ্বাসে অক্সিজেন ছেড়ে দেয়। বিজ্ঞান ভ্যাবাচ্যাকা খেল। তাতে কি? সো হোয়াট? দেশের শিক্ষামন্ত্রী যা বলবে তাই সঠিক। রাজাই সঠিক। অতএব পাঠ্যবই চেঞ্জ হোক। গোরুর রচনায় এই কথাটা যোগ হোক। শিক্ষমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কেউ ভাই কাঠি করতে যেওনা। ল্যাং খেয়ে যাবে ভাই। রাজনীতিতে এমনই হয়। এই মাঠে তো আর কেউ গোরুর রচনা লিখতে আসেনি। এখানে গোরুর লেজ ধরে সবাই বৈতরণি পার করতে চাইছে। গোবর মাখতে হচ্ছে। গোরুর চোনা খেতে হচ্ছে। রাজনীতিটাই শালা ক্যাঁচাল হয়ে গেল। বিজ্ঞানিরা সংকটে। শ্যাম রাখতে গেলে কূল রাখা দায়! এই মন্ত্রীমশাইয়ের ধারণা নিউটনের এক হাজার বছর আগেই দ্বিতীয় ব্রহ্মগুপ মাধ্যাকর্যণের তত্ত্ব আবিষ্কার করেছিলেন। তাই বাপু এখানে নিউটন ফলাতে এসো না। 

রাজনৈতিক নেতারা এখন মহাভারত রামায়ণ পুরাণ বেদ আওড়াচ্ছে। পাবলিকের পোয়া বারো। ফ্রি’তে বেদপাঠের পুণ্য কুড়িয়ে পাওয়া। কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী হর্ষবর্ধন এবার আইনস্টাইনের তত্ত্বের চেয়ে উন্নত কোন তত্ত্ব যে বেদে লুকিয়ে আছে তার একটা হদিশ দিতে গিয়ে সদ্য প্রয়াত বিজ্ঞানি হকিংকে ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। হকিং নাকি বলে গিয়েছেন বেদের মধ্যে E=mc2 সূত্রের চেয়েও উন্নততর তত্ত্ব থাকতে পারে বেদে। এই কথাটা আমি যদি পুকুর পাড়ে বসে ছিলিম খেয়ে বলতাম তাহলে মানিয়ে যেত। যুক্তির তোয়াক্কা না করেই একটা তক্ক বাধিয়ে দেওয়া আর তার থেকেই গপ্পো। এই গপ্পোটা তিনি করে ফেললেন গত শুক্রবার (১৬ মার্চ, ২০১৮) ইম্ফলে ১০৫তম জাতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে। তাঁর মতে প্রয়াত বিজ্ঞানি হকিং মানতেন যে আইনস্টাইনের চেয়ে বেদ এগিয়ে। এই সভার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। 

ডারউইনও পাত্তা পায়না আমাদের তত্ত্বের কাছে। বাঁদর থেকে মানুষ হয়নি। আমরা কেউ বাঁদর থেকে মানুষে রূপান্তরিত হতে দেখিনি। আমাদের দাদু দিদারা এমন কোন গল্পই আমাদের শোনাননি যাতে বলা হয়েছে বাঁদর থেকে মানুষ হয়ে যাচ্ছে। মানুষ বরাবর মানুষ ছিল। চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব ভুল। স্কুল কলেজের বইয়ে এর পরিবর্তন দরকার। এই কথাগুলি কোন গুলিখোর বলছেন। কথাগুলি বলছেন, আমাদের দেশের মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সত্যপাল সিং। ঔরঙ্গাবাদের এক বৈদিক সম্মেলনে তিনি বেদ ব্যাপারটা পাবলিকের কাছে ক্লিয়ার করে দিলেন। 

সত্যপাল সিং বিমানের আবিষ্কারক হিসেবে রাইট ভাইয়েদের দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। তাঁর মতে হিন্দু পুরাণে বিমানের উল্লেখ পাওয়া যায় তার থেকেই প্রমাণিত যে সেই আমলে বিমান ছিল। তাছাড়া আধুনিক কালে রাইটদের আট বছর আগেই শিবাকর বাবুজি তালপাঢ়ে বিমান আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন। ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রদের একটি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এমনটাই বলেছেন আমাদের দেশের মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সত্যপাল সিং। তালপাঢ়ে কে? তাঁকে কেউ খুঁজেই পাননি। বিজ্ঞানের খাতায় তাঁর নামটাই নেই। 

জীব বিবর্তনবাদ নিয়ে ইংলিশ বিজ্ঞানি চার্লস ডারউইন যে তত্ত্ব দেন তা ডারউইন তত্ত্ব নামেও পরিচিত। প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে উনিশ শতকে বিবর্তনবাদের ধারণা দেন এই জীববিজ্ঞানী। তিনিই সর্বপ্রথম অনুধাবন করেন যে সকল প্রকার প্রজাতিই কিছু সাধারণ পূর্বপুরুষ হতে উদ্ভূত হয়েছে এবং তার এ পর্যবেক্ষণটি সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন। অনেকের মতে ভারতের ভরদ্বাজ মুনি বিমানের তত্ত্ব আবিষ্কার করেছিলেন সাত হাজার বছর আগে। 

রাজস্থান হাইকোর্টের এক বিচারপতির বিজ্ঞান তত্ত্ব অনেকেই বিশ্বাস করে ফেলেছেন। ময়ূরের চোখের জল খেয়ে ময়ূরী গর্ভবতী হয়। ময়ূর একটি ব্রহ্মচারী পাখি। ময়ূর সঙ্গমে লিপ্ত হয় না। এই পাখি আজীবন কৌমার্য রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও বিজ্ঞানিরা জানিয়েছেন ময়ূরের চোখের জলে খেয়ে ময়ূরীর গর্ভবতী হওয়ার কল্পকাহিনী অনেকদিন......। ইনি ভারতের জাতীয় পশুর মর্যাদা বাঘের বদলে গোরুকে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন। ইনি গরুর শিং এবং গোবর নিয়ে এমন আশ্চর্য বক্তব্য তুলে ধরেছেন। তাঁর নতুন মতবাদ হলো, গরুর শিং শুষে নিতে পারে সব রেডিও-অ্যাকটিভ বা তেজষ্ক্রিয় বিকিরণ। এই বিচারক আরও বলেন, 'গরুর দুই শিংয়ের মাঝে এফএম রেডিও চলবে না। শুধু রেডিও বিকল হওয়ার শব্দ শোনা যাবে।' গোবর সম্পর্কে তিনি বলেন, 'গরুর গোবরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্লুটোনিয়াম। পারমাণবিক বোমা তৈরির অন্যতম উপাদান প্লুটোনিয়াম।' নেই। গো-মূত্র সারিয়ে তুলতে পারে ক্যান্সারের মত কঠিন রোগ। 

বিপ্লব দেব ত্রিপুরার নতুন মুখ্যমন্ত্রী। ত্রিপুরার পাবলিক ভারতের একমাত্র গরীব মুখ্যমন্ত্রী অসহ্য হয়ে ঊঠেছিলেন। এলেন বিপ্লব। তাঁর বিপ্লবী যুক্তির বলিহারি। তিনি জোর গলায় বলছেন মহাভারতের সময়ে ইন্টারনেট ছিল আর ধৃতরাষ্ট্রকে ইন্টারনেটের সাহায্যে সঞ্জয় নাকি যুদ্ধের বর্ণনা দিতেন। তাঁর মতে এই সত্যকে যারা তাচ্ছিল্য করছে তারা নিজেদের দেশকে হেয় করতে চাইছে। মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তিকে সমর্থন করে সুর চড়িয়েছেন ওই রাজ্যের বর্তমান রাজ্যপাল।
যারা বিজেপির এই ধরণের গোরুমার্কা যুক্তি মানতে চাইছেন না এবং সমালোচনা করছেন তারা নাকি ভারতমাতাকেই হেয় করছেন। ভারত বেদের আমলে ফিরে যেতে চাইছে। 
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM