জনৈক গোচিন্তককে চিনতেই আমার আজকের এই প্রতিবেদন। গোরু এখন রাজনীতির অভিনব হাতিয়ার। গোরুই আমাদের ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক। গোবর আমাদের উন্নয়নের হাতিয়ার। কেন্দ্র সরকার ও বেশ কতকগুলি রাজ্য বর্তমানে বুড়ো গোরুর পুনর্বাসন নিয়ে নিজেদের সুচিন্তিত মতামত আদান প্রদান করছেন। সংসদেও গোধ্বনি শোনা যাচ্ছে। সমস্যার সমাধানের উপায় এবং তার জন্যে অর্থব্যয় কত হতে পারে সেই সম্বন্ধে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হংসরাজ গঙ্গারাম আহির কেন্দ্র সরকারের কাছে একটি প্রোজেক্ট জমা দিয়েছেন। গোরু পুনর্বাসনের জন্যে জঙ্গলের শরণাপন্ন হতে পারে কেন্দ্র।
গোহিংসারোধ করতে ও বুড়ো গোরুদের জন্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নতুন একটি প্রকল্পের কথা বলছেন। মন্ত্রী হংসরাজ গঙ্গারাম আহির বলেছেন বন বিভাগের কাছ থেকে ১০০০ করে হেক্টর জমি নিয়ে জেলায় জেলায় গোরু অভয়ারণ্য খোলা যেতে পারে যে সব জেলায় গোহত্যা নিষিদ্ধ। আহির এই মাসেই কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রী হর্ষবর্ধনের সংগে তাঁর পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করবেন। গঙ্গারাম আহির মহারাষ্ট্রের চন্দ্রপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত সাংসদ এবং তাঁর জেলায় গোহত্যা নিষিদ্ধ।
মন্ত্রী গঙ্গারাম আহির বলেছেন, “জেলাভিত্তিক দুধহীন গোরু অভয়ারণ্য খুলে দিলে গোহত্যার হার কমবে। গোহত্যাজনিত বিবাদের জেরে আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি জটিল হয়ে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে সংসদে এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে।”
এই গো উন্নয়ন প্রকল্পে সরকারের খরচ কত হবে জিজ্ঞাসা করাতে মন্ত্রী গঙ্গারাম বলেন, “১০০ দিনের কাজের প্রকল্পকে কাজে লাগিয়ে দুধহীন গোরুদের জন্যে খাবার সংগ্রহ করা যেতে পারে যার ফলে কোন খরচই করতে হবেনা সরকারকে।” তার মানে রথ দেখা আর কলা বেচা দুটোই হল। ১০০ দিনের কাজের জোগাড় দেওয়া গেল আবার নিষ্পাপ প্রাণীগুলো খেয়ে বাঁচল। তিনি আরও বলেছেন, “সারা দেশের ক্ষেত্রেই এই পরিকল্পনা লাগু করা যেতে পারে। গোশালা থেকে দুধহীন গোরুদের সরিয়ে নিয়ে গিয়ে অভয়ারণ্যে রাখা যেতে পারে। এর ফলে কষাইখানা বন্ধ করা যাবে এবং তার সংগে হিংসাও কমবে।”
তাঁর এই অভিনব প্রকল্পের আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, “গো অভয়ারণ্য প্রকল্প গোজনিত হিংসারোধে একটা সমাধান সূত্র। প্রতিটি জেলায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের অফিস আছে, মানুষ সেই সব অফিসে গিয়ে নিজেদের বুড়ো গোরু, দুধ বন্ধ হয়ে যাওয়া গোরু জমা দিতে পারবে। এই প্রকল্পের সফলতার জন্যে বন মন্ত্রক ও কৃষি মন্ত্রককে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”
১৬ই আগস্ট মন্ত্রী গঙ্গারাম আহির তাঁর লিখিত প্রতিবেদন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দিয়েছেন, “দেশের ৭ কোটি হেক্টর বনভূমি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। তার থেকে মাত্র ১০০০ হেক্টর জমি চাই সব জেলায় গো অভয়ারণ্য খুলতে। চাষীরা তাদের বুড়ো অকেজো গোরু অভয়ারণ্যে পাঠালে গোরুদের জন্যে খাদ্যের কোন অভাব হবেনা।” তিনি আরও লিখেছেন, “তাঁর অঞ্চলের ১৬টি জেলায় গোহত্যা নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে গোরুর চোরাবাজারি বেড়েছে এবং রাজ্য প্রশাসন চোরবাজারিদের কাছ থেকে গোরু গ্রেফতার করে তাদের পুনর্বাসনের সমস্যায় ভুগছে। তাই গোরুদের অভয়ারণ্য করলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”
অনেকে আশায় আছেন যে, মন্ত্রী গঙ্গারামের পরিকল্পনা যদি সফল হয়ে যায় তবে ভারতে গোরুজনিত রাজনীতি পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।