Flickr Gallery

Monday, January 27, 2014

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও 'খাসসি' টুর্নামেন্ট


প্রায় সাত বছর হল। তখন আমি ঝাড়খন্ডের বনেবাদাড়ে ঘুরতাম। এইরকমই একদিন নিজের কাজে গিয়েছি সিমডেগা। রাঁচী থেকে প্রায় দু’শো কিলোমিটার দূরে উড়িষ্যার সীমান্তের কাছে একটা ছোট্ট জেলার নাম সিমডেগা। সেখানে সেদিন চলছিল ‘জোড়া খাসসি টুর্নামেন্ট।’ এর মানে হল, চলছে একটা ফুটবল প্রতিযোগিতার ফাইনাল পর্ব। যে দল চ্যাম্পিয়ান হবে সেই দল দু’টো বড় মাপের খাসি ছাগল পাবে। আর সেই খাসি কেটে পিকনিক সারা হবে সেখানেই। যেখানে অনেক গণ্যমান্যরা থাকবেন এবং খাসি প্রসাদ খাবেন। আমিও মজা দেখার জন্যে বিশেষ একজনের আমন্ত্রণে সেই খাসির মাংসের ওপর ভাগ বসাতে সেইদিন বিকেলে আর ফিরে আসিনি। রাতের আস্তানা এক ধর্মশালায় ঠিক করে এসেছিলাম। দিনটা ছিল ২রা অক্টোবর। মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন।

সেখানে উপস্থিত ছিলেন ঝাড়খন্ডের মধু কোড়ার সরকারের গ্রামীণ বিকাশ মন্ত্রী আইনুস এক্কা। সিমডেগাই ছিল তাঁর বিধানসভা ক্ষেত্র। তিনিই সেই অনুষ্ঠানের সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষ ছিলেন। যদিও সরকার পড়ে যাওয়ার পরে বারকয়েক তিনি জেলের গন্ডির মধ্যে ঢুকেছেন। আবার বেরিয়েছেন। এখন উনি নির্ভয়ে থাকেন। জেলে যেতে হলে উনি ডাক্তার দেখিয়ে অসুস্থ হয়ে গিয়ে সরাসরি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যান। রাঁচীর মেডিক্যাল কলেজে আছে ‘ভিআইপি’ কটেজ। সেখানে অসুস্থ ‘ভিআইপি’রা এসে বাসা বাঁধেন। যাই হোক সেদিন, অর্থাৎ ওই খাসসি টুর্নামেন্টের দিন তিনিও সন্ধ্যেবেলায় খাসির মাংস খেয়েছিলেন সবাইয়ের সঙ্গে বসে।

গোলযোগ বাঁধল তারপরের দিন সকালের খবরের কাগজে। বড় বড় করে ছবি বেরোল একটা কাগজে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে মন্ত্রী আইনুস এক্কা মাংস খাচ্ছেন। মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনে নিয়ম না মেনে তিনি মাংস খেয়েছেন। একজন সরকারী মন্ত্রী আদৌ কি এমন করতে পারেন। যদি করে থাকেন তবে তিনি কিভাবে প্রায়শ্চিত্ত করবেন। এইসব সাতপাঁচ কথায় খবরের কাগজের পাতা ভর্তি। আমিও শুনে থ। সত্যিই তো। ওইদিন খাসি টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ খেলাই উচিত হয়নি। যদিও খেলার দিন আমারও মনে ছিলনা ব্যাপারটা। তারপরের দিন, অর্থাৎ ৪ঠা অক্টোবর মন্ত্রীমশাইয়ের এক প্রেস বিবৃতি বেরোল। তাতে উনি লিখে দিলেন, আসলে তিনি সেদিন মাংস খাননি। ওটা ছিল কলার কোপতা। দেখতে মাংসের মতো মনে হয়েছিল। খবরের কাগজকেও একহাত নিলেন। কলার কোপতাকে মাংসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে কেন? আদিবাসীদের অসম্মান করার জন্যেই এসব করা হয়েছে। আরও অনেক কিছু।

এবার আসি আসল কথায়। ২৪ ঘন্টা চ্যানেলে টেট পরীক্ষার ফলাফল ও তার দুর্নীতি সংক্রান্ত একটি অডিও টেপ নিয়ে ব্রাত্য বসু ঠিক এমন কথাই বললেন। উনি বললেন ওই অডিও টেপে যে কন্ঠস্বর আছে সেটা যার নাম করা হচ্ছে তাঁর নয়। অর্থাৎ সরকারি আধিকারিক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারপার্সন সুরঞ্জনা চক্রবর্তীর নয়। আর যেহেতু সেই মহিলা সরকারী আধিকারিক, তাই মন্ত্রীমশাইকে নিয়ম অনুযায়ী তাঁর কথাই বিশ্বাস করতে হবে। অর্থাৎ টেট দুর্নীতির তদন্ত হবেনা।

সেদিন আইনুস এক্কাও মন্ত্রী ছিলেন। তাই তিনি হয়কে নয় করে বিবৃতি দিয়েছিলেন। আজ ব্রাত্য বসুও মন্ত্রী। তিনিও হয়কে নয় করে দিলেন। মন্ত্রীত্ব খোয়ানোর পর আইনুসবাবু জেলের ঘানি টেনেছেন। হতে পারে মন্ত্রীত্ব খোয়ানোর পর ব্রাত্যবাবুও জেলে যাবেন। তবে আইনুসবাবু কোনদিন নাটক করেননি। তিনি যদি মিথ্যে কথাটা অবলীলায় বলতে পেরেছিলেন তবে ব্রাত্যবাবুতো নাটুকে লোক। তিনি মিথ্যে কথাটা কেন অবলীলায় বলতে পারবেন না!
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM