“হে হুতোম পন্ডিত আপনি আমাদিগের আমন্ত্রণ স্বীকার করুন। আমরা আপনার নিকট শ্রুত হইতে ইচ্ছুক যে কি কারণে অশীতিপর বৃদ্ধা মহাশ্বেতার নিকট রাণী মমতা কুপিত হইয়াছিলেন ও কি প্রয়োজনে বৃদ্ধা ক্রোধাণ্বিত হইয়া বাক্যাগ্নি বর্ষণ করিলেও ক্ষণকাল পরেই মমতার সুখ্যাতিতে পঞ্চমুখ হইয়াছিলেন?” এই বলিয়া রাজা জনার্দন করদ্বয় একত্রিত করিয়া মুখগহ্বরে প্রবিষ্ট করিলে সুতীক্ষ্ণ হুটাহুট শব্দবাণ নিক্ষেপিত হইল। সেই তীক্ষ্ণ শব্দ শ্রুতিগোচর করিয়া তৎক্ষণাত হুতোম আবির্ভূত হইলেন।
“পুরাকালে মিথ্যাচারী রাণী মমতার রাজত্বকালে তাঁহার সভায় নবরত্নরূপে স্বল্পবুদ্ধি ও কুটিল হীনমনা বিদ্দ্বজনসমূহ বিরাজ করিত। উহারা রাণী মমতার প্রসাদধন্য হইয়া কিঞ্চিত খাদ্যাদি ও বস্ত্রাদির লালসায় কদাচারী রাণীর গুণগান করিয়া জীবনযাপন করিত। কথিত আছে ইহারা মাওবাদী প্রজাতির আত্মীয়স্থানীয় ছিল। তাঁহারা মাওবাদী প্রজাতিকে লেখনীদ্বারা সাহায্য করিত এবং সিপিএম জনগোষ্ঠীকে বঙ্গবর্ষ হইতে নির্মূল করিতে সর্বদা প্রচেষ্টারত থাকিত। কদাচারী মমতার বঙ্গবর্ষে রাজ্যাভিষেকের পরবর্তী কালে রাণী কুটিল ছল অনুলম্বন করিয়া তাঁহার নিকটাত্মীয় মাওবাদী প্রজাতিকে উদ্দেশ্য করিয়া ক্ষণে ক্ষণে বিষবাক্য নিক্ষেপ করিতেন ও সমস্ত প্রজাবর্গের নিকট তিনি ইহা প্রমাণ করিতে তৎপর হইয়াছিলেন যে তিনি রাজধর্ম পালন করিবার নিমিত্ত আত্মীয়বিচ্ছেদ করিয়াছেন।”
“বৃদ্ধাজন মহাশ্বেতাও রাণীর সভা আলোকিত করিতেন ও সর্বদা তিনি মাওবাদীস্বার্থ চরিতার্থ করিবার নিমিত্ত ক্রন্দনরতা থাকিতেন। একদা বৃদ্ধাজন মহাশ্বেতা মাওবাদী প্রজাতির স্বার্থে ক্রন্দনরতা হইবার জন্য জনৈক মানবাধিকার হরণ নিবারক গোষ্ঠীর উচ্চপদাসীন হইয়া একটি সভার আয়োজন করিয়াছিলেন। মমতার সেনাপতিবৃন্দ রাণীর আদেশে উক্ত সভার নিমিত্ত সভাস্থলের অনুমতি নাকচ করিয়াছিল। ইহাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন হইয়াছে এইরূপ অনুভব করিয়া বৃদ্ধাজনসহ বিদ্দ্বজনসমূহ মমতার নিন্দায় মুখর হইয়া শঙ্খধ্বনি ও ঢক্কানিনাদ সহযোগে দশদিক বিদীর্ণ করিয়াছিল। তাহারা রাণী মমতাকে স্বৈরাচারী উপাধিভূষিত করিয়াছিল। ঘৃণ্যকার্যের ফলস্বরূপ মমতা তাঁহার প্রিয় বৃদ্ধাজন মহাশ্বেতার কোপভাজন হইয়াছিলেন। রাণী মমতা বৃদ্ধাজন হইতে স্বৈরাচারী আখ্যায়িত হইয়া ক্ষণকাল মনোকষ্টে জীবনযাপন করিয়াছিলেন এবং ক্রোধাণ্বিত হইয়া অশীতিপর বৃদ্ধার উদ্দেশ্যে কটুবাক্যবাণ নিক্ষেপ করিয়াছিলেন।”
“সুর্যাস্তের পর সমগ্র বিশ্বে যেমন অন্ধকার প্রকট হইত তেমনি রাণীর নিকটাত্মীয় বৃদ্ধাজনের উক্ত বাক্য শ্রবণ করিয়া বিশ্ব অন্ধকারাচ্ছন্ন হইল। রাণীর স্বৈরাচারের সম্ভাবনা প্রকট হইলে প্রজাগণের সমক্ষে অশনিসংকেত অনুভূত হইল। ইহারও ক্ষণকাল পরে বৃদ্ধাজনের মতিস্থির হইলে এবং কিঞ্চিত খাদ্যাদি ও বস্ত্রাদি উপহারস্বরূপ পাইবার লোভ সংবরণে অপারগ হইয়া স্বৈরাচারী রাণীই বঙ্গবর্ষকে স্বর্ণবঙ্গে রূপান্তরিত করিবেন এইরূপ স্বপ্নদ্রষ্টা হইয়াছিলেন। তিনি স্বৈরাচারী রাণীর ক্ষমাপ্রার্থী হইয়া পত্রদ্বারা তাহা জনসমক্ষে প্রচার করিয়াছিলেন। হে বৎস্য জনার্দন, যাহারা স্বীয়স্বার্থের বশীভূত হইয়া রাণী মমতার নিকটভাজন হইয়াছিল তাহাদের সামান্য স্বার্থচ্যূত হইলে স্বৈরাচারী রাণীকে কটুবাক্যবাণে জর্জরিত করিয়া পরক্ষণেই ক্ষমাপ্রার্থী হইয়া রাণীর ভজনায় ব্রতী হইত”
এই বলিয়া পন্ডিত হুতোম পক্ষবিস্তারপূর্বক মহাকাশে বিলীন হইলেন। হুতোমের নিকট এইরূপ পরিশ্রুত হইয়া যথারীতি রাজা জনার্দন সভাভঙ্গ করিয়া রাজনীতিশাস্ত্র অধ্যয়নে মনোনিবেশ করিলেন।