বাদশাহ একবার একটা গাধা কিনেছেন। গাধাটার যত্নের ত্রুটি নেই। মোল্লা নাসিরুদ্দিনকে ডাকা হল গাধা দেখবার জন্য। যথারীতি বাদশাহকে খুশী করবার জন্য মোল্লা গাধার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। গাধার জয়গান গাইতে গাইতে মোল্লা বাদশাহকে পরামর্শ দিল, "হুজুর, গাধাটি কিন্তু খুবই মেধাবী হবে বলে মনে হচ্ছে। লেখাপড়া শেখাতে পারলে এই গাধাই একদিন আপনার সভা আলোকিত করতে পারবে।"
এতটা বলার দরকার ছিলনা। মোল্লা মশকরা করার লোভ সামলাতে পারতনা। বাদশাহ তাঁর সভায় গাধা পারিষদের আগমনী বার্তা শুনে মনে মনে বেজায় চটলেন। কিন্তু প্রকাশ করলেন না। বাদশাহ আবার মোল্লাকে অপদস্থ করতে পারলে বেজায় খুশি হতেন। বাদশাহ বললেন, “ভালই হল মোল্লা, তোমাকে দুমাস সময় দিলাম। তুমি ওকে লেখাপড়া শিখিয়ে দাও।” মোল্লাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই তিনি সিপাই পাঠিয়ে মোল্লার উঠোনে গাধাটাকে বেঁধে দিতে বললেন।
দু’মাস পরে মোল্লা নাসিরুদ্দিন গাধার পিঠে চেপে বাদশাহের দরবারে হাজির। গাধার পিঠে নাসিরুদ্দিন আর নাসিরুদ্দিনের মাথায় ঢাউশ একটা বই। নগরবাসী হাজির। ভিড় উপচে পড়ছে। মোল্লা আর গাধা কথা বলবে। অজব বাত। গজব বাত। বাদশাহ আদেশ দিলেন, “মোল্লা, এইবার দেখাও আমার গাধা কেমন লেখাপড়া শিখল!”
মোল্লা বাদশাহের সামনে এসে মাথা থেকে ধপ করে বইটা মাটিতে ফেলে গাধার পিঠ থেকে নেমে বাদশাহকে সেলাম ঠুকে বাধশাহের সামনে বইটাকে রেখে গাধার লেজে একটা মোচড় দিতেই গাধাটা টুকটুক করে হেঁটে বাদশাহের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জিভ দিয়ে বইয়ের একটা পাতা ওল্টালো। তারপর আরেকটা পাতা। তারপর আরেকটা। এইভাবে পরের পর সব পাতা ঊল্টে দিয়ে গাধাটা বাদশাহের দিকে চেয়ে বিশাল এক হাঁক পাড়ল। মোল্লা বলল, “হুজুর গাধাটা বই পড়ে আপনাকে সেলাম করতে শিখেছে।”
গাধার এইসব কান্ডকারখানা দেখে সভার লোকেরা অবাক। গাধাটা পড়তে শিখে গেছে! গড়গড় করে হাততালি পড়তে শুরু করল। বাদশাহও অবাক হয়ে মোল্লাকে সাবাশি দিয়ে বললেন। “মোল্লা, এই অসম্ভব কাজ কি করে করলে?”
মোল্লা নাসিরুদ্দিন বলল, “হুজুর, এটা আপনার কেনা গাধা বলেই সম্ভব হল। তাহলে কিভাবে লেখাপড়া শেখালাম শুনুন। প্রথম দিন বইয়ের ওপরে খড় রেখে গাধাটার লেজ টানলাম। গাধাটা সুড়সুড় করে এসে খড় খেয়ে ফেলল। গাধাটা বই দেখে আগ্রহ পেল। পরের দিন বইয়ের প্রথম পাতায় খড় রাখলাম। গাধাটা মলাট উলটে খড় খেল। তারপরের দিন তারপরের পাতায়। গাধাটা তারপরের পাতা জিভ দিয়ে উলটে খড় খেল। এইভাবে দিন বদলাল। খড়ের পাতাও বদলাল। গাধাটা জিভ দিয়ে এইভাবে পাতার পর পাতা উলটে খড় খেতে শুরু করল। এইভাবে খড় খেতে খেতে বই পড়া শিখে গেল। শেষের পাতায় খড় রাখলেই গাধাটা প্রথম পাতা থেকে পাতা উলটে খড় খোঁজা শুরু করত। বইয়ের সব কটা পাতা উল্টে একেবারে শেষের পাতায় রাখা খড় খেত। এইভাবেই চলতে লাগল। একমাস পরেই ব্যাপারটা সড়গড় করে ফেলল গাধাটা। মেধাবী গাধা তো। আজ আর কোথাও খড় দিইনি। তাই বই পড়া শেষ করে খড় না পেয়ে গাধার স্বরে আপনাকে সেলাম করে বলল খানিকটা খড় দিতে।”