Flickr Gallery

Sunday, May 17, 2020

বিশ্ব ক্ষুধা সূচক ও আমরা

আমরা এখন ১০২ নম্বর. আমাদের নিচে আর পনেরোটা দেশ আছে। ওপরে ১০১. হ্যাঁ। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের কথাই বলছি। ২০১৯ সালের রিপোর্ট। ওদের পোর্টালে পেয়ে যাবেন। এর মধ্যেই করোনার কাশি। আমাদের পৃথিবীর জন্যে এক হাড়হিম করা ভবিতব্য অপেক্ষা করে নেই তো!

‘মেরা ভারত মহান’ মানে যদি আমি বলি কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন! ভুল হবে কি? ‘ক্ষিধে ক্ষিধে’ করছি বলে আমাকে হ্যাংলা ভাবলে কোন আপত্তি নেই। যার ক্ষিধে পায় সেই বোঝে ক্ষিদের কি জ্বালা! আমি একবার পচা শসা কুচি দিয়ে ঝালমুড়ি খেয়ে ক্ষিধে মিটিয়েছি। এখনো অনেক মানুষ আছে যারা রাস্তার ধারে ফেলে দেওয়া খাবার কুড়িয়ে খায়।

মহান শুধু ভারত নয়। এই দৃশ্য পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে দস্তুর। কোথাও ক্ষিদে নেই। মোট সতেরোটা দেশে ক্ষিদে পাওয়া সমস্যা নয়। যেমন বুলগেরিয়া, কিউবা, চিলি, কুয়েত, উরুগুয়ে, লিথুয়ানিয়া, এস্তোনিয়া ও অনেকে। এরা এক নম্বর। অর্থাৎ সব ঠিকঠাক। মানে সবাই খাবার পায়। সবাই পুষ্টি পায়। কোথাও খুব কম। যেমন ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, রাশিয়া, চীন, মরিশাস, থাইল্যান্ড, জর্ডন, সৌদি আরব ও অনেকে। কোথাও একটু বেশি। মানে কিছু মানুষ ঠিকঠাক খাবার পায় না। যেমন, ভিয়েতনাম, ইরাক, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া ও অনেকে। কোথাও অনেকটা বেশি। মানে বহু মানুষ খাবার পায় না। যেমন, বটসোয়ানা, নামিবিয়া, কেনিয়া, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও অনেকে।

গম্ভীর সমস্যা ভারতে।এখানে ক্ষিদের চোটে মানুষ মরে। ভারত ১০২ নম্বর। অনেক দেশ এর মধ্যে অবস্থার উন্নতি করেছে। আমাদের মহান ভারত অন্যদের জন্যে জায়গা ছেড়ে নিজে নিচের দিকে নেমে এসেছে। ক্ষিদের জ্বালায় বেশি বেশি মানুষ মরছে! অপুষ্টিতে মানুষ মরছে। সবই সাধারণ মৃত্যুর মতোই আমরা গ্রহণ করতে শিখে গেছি। এসব নিয়ে আর দুশ্চিন্তা হয় না। ভারতের নিচেও কয়েকটা দেশের অস্তিত্ব আছে। তারাও ভারতের মতোই মহান। যেমন, আফগানিস্তান, জাম্বিয়া, জিম্বাবোয়ে, সুদান, কঙ্গো ইত্যাদি। এটাই আমাদের মহান ভারতের কাছে একটা স্বস্তি। আমাদের পায়ের তলায় এখনো মাটি আছে! তাই আরেকটু নিচে নেমে সব ব্যাটাকে মাচায় তুলে নিচে দাঁড়িয়ে মজা দেখাটা মন্দ নয়। তবে কিছু দেশ আছে যারা এই ধরণের ছোটলোকি হ্যাংলা ধরণের গণনা থেকে নিজেদের দূরে রেখেছে। যেমন ইউরোপের বহু বড়লোক দেশ ও আমেরিকা।

তার সঙ্গে আছে অপুষ্টি। ভারত এখানেও অনেকের চেয়ে অনেক নম্বর বেশি পেয়েছে ক্ষিধের সূচকের মতোই। এক বেলা খেয়ে পরের বেলার জন্যে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। খাঁজে খাঁজে ঘাম। এগুলো সব করোনার আগের বিশ্ব। এই গল্প করোনার আগের বিশ্বের। এবার করোনা। এখন তো প্রভাবশালী দেশগুলোই আক্রান্ত! গরীব দেশগুলোর জন্যে ভাববে কে? কারা দেবে টাকা! কোথা থেকে দেবে। করোনায় যত লোক মারা যাবেন তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন অপুষ্টিতে। কাজ হারাতে চলেছেন ১৩ কোটি ভারতীয়। অর্থাৎ করোনার আরেক কোপ। এই মন্বন্তরে কি গরীব আর তস্য গরীব ধ্বংস হতে চলেছে!

বিশ্বময় কর্মহীনতার চালচিত্র আসতে দেরি আছে। ভারতের অবস্থা শোচনীয়। মালিক তাড়িয়ে দিয়েছে। কর্মহীন মানব সম্পদ হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরছে। ক্লান্ত শরীরগুলো বাড়ি ফেরার জন্যে ভীড় করছে বাস স্ট্যান্ডে আর রেল স্টেশনে। এই দৃশ্য টিভিতে দেখে গা শিরশির করে উঠেছে অনেকের। ওরা শ্রমিক। ওরাই কিন্তু ভারত গড়ার ভিত। ওরা না থাকলে দেশের জিডিপি ভ্যানিশ! করোনা ওদেরকেই ফিনিশ করতে কাজ করছে। ওরা মরবে না তো। ওরা কর্মহীন হয়ে বেঁচে থাকবে না তো! বাকি সব তাহলে কি ঠিকঠাক চলবে!

আমাদের দেশে সেলিব্রিটিদের মতো ভাইরাস করোনার আবির্ভাব মানুষের সঙ্গে মানুষের সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং বা সামাজিক দূরত্ব আরো বাড়িয়ে দিতে চলেছে। ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া, যক্ষ্মা, ডেঙ্গু ইত্যাদির মতোই সরকারি খাতায় স্থায়ী ভাবে জায়গা নিতে চলেছে। যত মানুষকে করোনা মারতে পারবে তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি মানুষকে কাঁদিয়ে ছাড়বে। উপোস করিয়ে মারবে।
১ মে, ২০২০
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM