একটা ফটো ভাইরাল হতে চেষ্টা করছে। এই ফটোতে দেখা যাচ্ছে ইন্ডিয়া গেটের ছবির ওপর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সংখ্যা দেওয়া আছে। তাঁদের মধ্যে কে কোন জাতের তাও দেওয়া আছে। এই ফটোটাই খুব প্রশংসা কুড়োচ্ছে ফেসবুক দুনিয়ায়। ঠকাঠক স্যালুট সেলাম পড়ছে কমেন্ট বক্সে। এই বোকাহাবার জগতে মুসলমানরা যে কত অমূল্য তার জন্যে একদল ফেসবুকোদের এই বালখিল্য আচরণ হাস্যকর। এই অদক্ষিণপন্থী ফেসবুকোদের দক্ষিণপন্থীদের মতোই মিথ্যে প্রোপাগান্ডা করার প্রবণতা বিরক্তিকর ও বিপজ্জনক।
ইন্ডিয়া গেট দিল্লিতে অবস্থিত। ১৯২১ সাসে, বিখ্যাত ইংরেজ আর্কিটেক্ট এডউইন লুটিয়েন্স ইন্ডিয়া গেটের ডিজাইন করেছিলেন। জেনে রাখা যাক, ইনি রাষ্ট্রপতি ভবন ও হায়দারাবাদ হাউসের মতো বিখ্যাত স্থাপত্য ডিজাইন করেছিলেন। সৌধটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনা করেন ইংরেজ রাজবংশের রাণী ভিক্টোরিয়ার তৃতীয় সন্তান ও এককালীন কানাডার গভর্নর জেনারেল প্রিন্স আর্থার। এই সৌধ নির্মাণের কাজ শেষ হয় ১৯৩১ সালে। এই বছরেই ভাইসরয় লর্ড আরউইন সৌধটির উদ্বোধন করেন। এই স্মৃতিসৌধে আদৌ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম খোদাই করা নেই। কিন্তু আজকাল যা খুশি লিখে হামবড়া ভাব দেখানোর সোসাইটি। সোশ্যাল সাইটের এই সোসাইটিতে আপনি যদি এসব পোস্ট না করেন তবে আপনাকে সমাজ মেনে নেবে না।
তাহলে কাদের নাম খোদাই করা আছে? ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মির বিভিন্ন যুদ্ধে হত ৭০০০০ সৈনিকের স্মরণে এই স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৯১৪-২১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন যুদ্ধে, যেমন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ফ্রান্সে হত সৈনিকদের নাম, এছাড়া ইস্ট আফ্রিকা, মেসোপটেমিয়া অঞ্চলের যুদ্ধে নিহত সৈনিকদের নামও এত খোদাই করা আছে। তৃতীয় এংলো-আফগান যুদ্ধে নিহতদের নামও আছে। ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মির মোট ১৩২১৮ জন যুদ্ধে নিহত সৈন্যরা ছাড়া ইন্ডিয়া গেটে আছে চাকরিরত অবস্থায় যুদ্ধে নিহত ইংরেজ সৈন্য, অন্যান্য কর্মচারী ও বিভিন্ন পদাসীন সামরিক ও অসামরিক অফিসারদের নাম। তাহলে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রসঙ্গ আসছে কি করে।
জাত অনু্যায়ী নিহতদের কোন হিসেবই ওই স্মৃতিসৌধ থেকে বের সম্ভব নয়। কোথাও এইরকম জাতবিন্যাস করে নিহতদের নাম কেউ দেখতে পাবেন না। মুসলমান থাকলেও এতে সামগ্রিক ভাবে হিন্দুদের সংখ্যা দেখানো হয়নি। শিখ, দলিত, পিছড়া ও সবর্ণদের সংখ্যা দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত বলে রাখি, কেউ যদি চান যে ১৩২১৮ জন সৈনিকের নাম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে লিপিবদ্ধ করবেন নিজের ডাইরিতে, তার অনুমতি পাবেন না। এবং শেষে আছে সঙ্ঘীর সংখ্যা শূন্য। বোঝাই যাচ্ছে এই পোস্ট নিতান্তই মূর্খ লোকের কাঁচা হাতের রাজনৈতিক খৈনি। ঠোঁটের নিচে একচিলতে দিয়ে রাখুন। বেশ একটা ঝিমঝিম ঘোর থাকবে। উল্টোপাল্টা জাতবিন্যাস করে সর্বোপরি মুসলমান জাতটার ভারতপ্রীতি প্রমাণ করার লক্ষ্যই আসল উদ্দেশ্য। এবং একটি দক্ষিণপন্থী দলকে নিয়ে ঠাট্টা করতেই এই পোস্টটা করা হয়েছে।
এই পোস্টটি প্রথম দেখা যায় মহম্মদ ইয়াহিয়া আনসারির টুইটার একাউন্টে। তারপর দেখা যায় আম আদমি পার্টির অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপে। পরে হইচই হতে এই পোস্ট ওই গ্রুপের এডমিন ডিলিট করে দেন। ইয়াহিয়ার টুইটার একাউন্টে এখনো পোস্টটি দেখতে পারেন। আবার এই পোস্টটি বারবার সোশ্যাল সাইটে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। ভাইরাল হওয়াতে চেষ্টা করানো হচ্ছে। কিছু অত্যুৎসাহী মানুষ এই মিথ্যে প্রচারের ঢলে বুঝে না বুঝে এই পোস্ট শেয়ার করে যাচ্ছেন।
মুসলমানরা কতটা দেশপ্রেমিক তা প্রমাণ করার কোন দরকার পড়তনা। যদি না দক্কিণপন্থী দলগুলো মুসলমানদের দেশদ্রোহী তকমা দিত। দক্ষিণপন্থী ও অদক্ষিণপন্থী ফেসবুকোদের এই যুদ্ধে ভুরিভুরি মিথ্যে প্রচার নিয়মিত চলছে। অবশ্য যুদ্ধে কোন কিছুই করা অনৈতিক নয়।