গতকাল কংগ্রেসের নেতা এবং পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সভাপতি ওমপ্রকাশ মিশ্র এবিপি আনন্দের একটি সান্ধ্য অনুষ্ঠানে বিধায়ক আনিসুর রহমানের ‘কটুক্তি’ এবং তার সঙ্গে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া নিয়ে সিপিআই(এম)-কে ‘ক্ষমা পার্টি’ বলে কটাক্ষ করেছেন। সিপিআই(এম)-এর কোন নেতা ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকার জন্যে উক্ত চ্যানেল নেতা উপযুক্ত জবাব পাননি। ফেসবুকে পদার্পণের পর থেকে তাঁর বালখিল্য আচরণ লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠছে। আজকাল অযৌক্তিক কথা উনি বেশি বলেন। এটা ফেসবুকের প্রভাব। অথচ ঠিক তার একটু আগে হরিয়াণার এক কংগ্রেস মন্ত্রী শিবচরণ শর্মা বিমান সেবিকা গীতিকা শর্মার আত্মহত্যায় প্রধান অভিযুক্ত কংগ্রেসের সমর্থনপুষ্ট আরেক গুণধর গোপাল কান্দা’র সমর্থনে ও গীতিকার বিপক্ষে মতপ্রকাশ করার জন্যে ক্ষমা চাইলেন।
এর কয়েকদিন আগেই পৈত্তৃক সূত্রে সাংসদ হয়ে যাওয়া জঙ্গিপুরের সাংসদ অভিজিত মুখার্জিকে সম্প্রতি দিল্লি গণধর্ষণ কান্ডের প্রেক্ষিতে আন্দোলনকারী মহিলাদের নিয়ে কু-মন্তব্য করার জন্যে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল। তারও কিছুদিন আগে হিমাচল প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহ'র বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি একটি সাংবাদিকের ক্যামেরা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়ে কয়েকদিন পর ক্ষমা চেয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার সিন্ধে রাজ্যসভার সাংসদ জয়া বচ্চনের প্রতি কটুক্তি করে ক্ষমা চেয়েছিলেন। এই ঘটনার কয়েকমাস আগে সরকারি পাঠ্যপুস্তকে ডাঃ বি আর আম্বেদকরের কুরুচিকর কার্টুনচিত্র ছাপানোর অপরাধে্র প্রতিবাদ হলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কপিল সিবল লোকসভাতে ক্ষমা চেয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি পাঞ্জাবের বাসিন্দাদের সম্পর্কে রাহুল গান্ধী বিতর্কিত মন্তব্য করেও ক্ষমা চাননি। তিনি বলেছিলেন, পাঞ্জাব প্রদেশের প্রতি দশজনের মধ্যে সাতজন যুবকই নেশাখোর! এই পরিসংখ্যান তাঁকে কে দিয়েছেন জানিনা। তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শশী থারুর সাধারণ মানুষের বিমান যাত্রার শ্রেণিকে 'ক্যাটল ক্লাস' বলে কটাক্ষ করার পর ক্ষমা চেয়েছিলেন।
কংগ্রেসের চ্যানেল নেতার কাছে সিপিআই(এম)-এর বিরোধিতা করার শব্দাবলীর অভাব আছে। তাই তিনি ‘ক্ষমাপার্টি’ বলে নিজেই একটু বিজ্ঞের মতো হেসে নিয়ে আবার সোজা হয়ে ক্যামেরা তাক করে বসলেন। চ্যানেল নেতাটির স্বদলীয় রাজনৈতিক জ্ঞানভান্ডার সীমিত। তিনি তাঁর দলের উচ্চস্থানীয় নেতা দিগবিজয় সিং-এর ক্ষমা চাওয়ার ইতিহাস সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল নন। কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী ওসামা বিন লাদেনকে সম্মানের স্বরে ‘ওসামাজি’ বলার পরে তাঁকে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল। কিছুদিন আগে বাল ঠ্যাকারের মৃত্যুর আগেই মৃত্যুর খবর সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ইচ্ছাকৃতভাবেই প্রকাশ করার পরও তিনি ক্ষমা চেয়েছিলেন। তিনি নিজের দলেরই আরেক নেতা পি চিদাম্বরমের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ করে পরে আবার সোনিয়া গান্ধীর কাছে ধমক খেয়ে চিদাম্বরমের কাছেই ক্ষমা চেয়েছিলেন। তিনি প্রাক্তন বিচারপতি সন্তোষ হেগড়ের বিরুদ্ধে কটুক্তি করে ক্ষমা চেয়েছিলেন। বিনোদন জগতের রাখী সামন্ত তাঁর কটুক্তির জন্যে তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য কংগ্রেসের আরেক নেতা সলমান খুর্শিদের নাম। গত বছরের শুরুর দিকে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভার ভোটের আগে তিনি পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের জন্যে সংরক্ষণের ‘হাওলা’ জারি করলে বিধিভঙ্গের অপরাধে নির্বাচন কমিশনের কোপভাজন হয়েছিলেন। এরপর আইনমন্ত্রী সলমান নির্বাচন কমিশন সম্পর্কেই বিরূপ মন্তব্য করে বেকায়দায় পড়ে ক্ষমা চেয়েছিলেন। তৎকালীন কংগ্রেস প্রবক্তা মনীষ তিওয়ারি আন্না হাজারেকে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং সেনা বাহিনীর ‘পলাতক’ বলে ফেললে মানুষ হইচই বাধিয়ে দেয়। বেগতিক দেখে তিনি আন্নার কাছে লিখিত ক্ষমাভিক্ষা চেয়েছিলেন। সম্প্রতি কংগ্রেসেরই রাজ্যসভা সাংসদ রাজীব শুক্লা তাঁদের দলের আরেক নেতা মণিশঙ্কর আয়ারের বিরোধী দলের সাংসদদের প্রতি কুরুচিকর মন্তব্যের জন্যে রাজ্যসভাতেই ক্ষমা চাইতে হল। অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে অপারেশন ব্লু স্টারের জন্যে সোনিয়া গান্ধী ক্ষমা চেয়েছিলেন। কংগ্রেসের এক প্রবীন নেতা এবং ইন্দিরা গান্ধীর ঘনিষ্ঠ নেতা আর কে ধাওয়ান বলেছিলেন, ইন্দিরা গান্ধী নিজেও অপারেশন ব্লু স্টার ও ‘এমার্জেন্সি’র জন্যে মানুষের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হয়েছিলেন।
একবার লোকসভায় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি বাভলি বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে তেলেগু দেশম পার্টির এক সাংসদের প্রতিবাদের জেরে রেগেমেগে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। পরক্ষণেই তিনি স্পিকারে কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন। সাত বছর আগে লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ সমগ্র শিখ সমুদায়ের কাছে অপারেশন ব্লু স্টারের জন্যে ক্ষমা চেয়েছিলেন। অথচ আনিসুর রহমান ক্ষমা চাইলে বর্তমান রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরি বলেন, ‘জুতো মেরে গোরু দন’ হল। ওমপ্রকাশ মিশ্র তো ‘ক্ষমাপার্টি’ বলে এক নতুন পার্টি তৈরি করে ফেলেন। আরও উদাহরণ দেওয়া যেত। কংগ্রেসের ক্ষমা চাওয়ার উদাহরণের শেষ নেই। ১৯৪৮ সালে ইংরেজদের ভারতবিরোধী কার্যকলাপ নিয়ে মন্তব্য করার পরেও নেহরু ইংরেজদের চাপে পড়ে ক্ষমা চেয়েছিলেন। এরপর গোটা কংগ্রেস দলটাই দেশের সম্পদ বিক্রি করে দেওয়ার অপরাধে কয়েক বছরের মধ্যেই সমগ্র জনসাধারণের কাছে ক্ষমা চাইবে।