রাজ্যে এখন ধর্ষণের ‘রেট’ বিতর্ক চলছে। কিছুদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী সাবালিকা ধর্ষিতাদের কুড়ি হাজার ও নাবালিকা ধর্ষিতাদের তিরিশ হাজার টাকা মূল্য ঘোষণা করেছিলেন। অনুমান করা হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী ধর্ষকদের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দেননি বলেই এই রাজ্যে নারী ধর্ষণও বাড়ছে। NCRB-র রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১১ সালে নারী নির্যাতনে পশ্চিমবঙ্গ ২৯,১৩৩ নম্বর পেয়ে অনায়াসেই দেশে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। ২,৩৬৩ নম্বর পেয়ে ধর্ষণে এই রাজ্য দ্বিতীয় স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ধর্ষিতাদের কুড়ি-তিরিশ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ ‘পুরস্কার’ দিয়ে রাজ্য সরকার ধর্ষকদের সরকারি ষাঁড় বানিয়ে রাখতে চাইছেন। বাংলার মেয়েদের ‘রেট’ ঠিক হয়ে যাওয়ার পর তাই অনেকেই আতঙ্কে ভুগছেন।
এই হিসেবটা বিরোধীপক্ষের কিছু মানুষের বোধগম্য হয়নি। তাই সিপিএম-এর বিধায়ক এবং প্রাক্তন মন্ত্রী আনিসুর রহমান নিতান্তই কৌতূহলবশত মুখ্যমন্ত্রীর ‘রেট’ জিজ্ঞাসা করে বেজায় ফাঁপরে পড়লেন। তড়িঘড়ি সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে তিনি প্রায়শ্চিত্তও করে ফেলেছেন। সরকার বাংলার মেয়েদের রেট ঠিক করে মেয়েদের সম্মান করেছে নাকি অসম্মান করেছে? প্রসঙ্গটাতে এক বাটি ঝোলাগুড় মাখিয়ে দিলেন আনিসুর রহমান। পাকেচক্রে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে যাওয়া এই বাংলারই এক মেয়ের চরম ‘অসম্মান’ করে তিনি বাংলার মেয়েদের অপমান করে দিলেন।
রেটের কারেন্ট খেয়ে সরকার বেজায় ক্ষেপে যাওয়ার বদলে খুশি হয়েছে। যতরকম অশ্লীল এবং অসামাজিক কাজকর্ম সরকারপক্ষ করছে তার ভেতর রেটের আন্ডারকারেন্ট ঢুকিয়ে দিতে পেরে সরকার এবার হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে। এখন আর উন্নয়ন নিয়ে কেউ কথা বলবেনা। এখন চলবে রেট বিতর্ক। তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া যায় উন্নয়নের কথা কেউ বলতে পারেন, তবে তার মাঝখানে রেটের ‘স্যাম্পল’ এনে তর্ক-বিতর্ক সব গুবলেট করে ফেলা যাবে। তাই সরকারপক্ষ যতই ‘মুখেন মারিতং জগৎ’ করুক না কেন, উন্নয়নের প্রশ্নে ‘রেট’ এসে গিয়ে সরকারপক্ষের খানিকটা সুবিধা হয়ে গেল।
যে সব বিদ্দ্বজনেরা ‘খোরাক’ না পেয়ে ভিজে বেড়াল হয়ে বসেছিলেন, তাঁরা আবার হুলো বেড়াল হতে চেষ্টা করবেন। মন্ত্রী হুমায়ুনের মানুষ খুনের হুমকি চেপে যাবে। মন্ত্রী বেচারামের বিচারক বেচার কথা মানুষ ভুলে যাবে। মহাকরণে বিরোধীদের মারধোর আর মানুষ খাবেনা। ত্রিফলার খোঁচাতে আর সরকারপক্ষকে বিব্রত হতে হবেনা। উন্নয়নের মাঝে রেট ফেলে বিতর্ক উল্টো পথে নিয়ে যাওয়ার সুবিধা হবে। পরিবহণ মন্ত্রীর ‘জনরোষ’, পঞ্চায়েতমন্ত্রীর ‘থুতু’ স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর ‘ঘুঙুর’ সাংসদ শুভেন্দু'র 'বিষতত্ত্ব' খাদ্যমন্ত্রীর 'ঘেণ্ণা' শিল্পমন্ত্রীর ‘সুয্যিমামা’ সব ধামাচাপা পড়ে যাবে। কথায় আছে স্যাকরার ঠুকঠাক, কামারের এক ঘা। আনিসুর রহমানের এক ঘা’এ এবার সরকারপক্ষের সব ঠুকঠাক শব্দ চাপা পড়ে যাবে।