Flickr Gallery

Friday, March 1, 2019

দায়িত্বহীন মিডিয়ায় ভিডিও গেম দেখিয়ে দেশাত্মবোধ


পুলওয়ামায় সন্ত্রাসবাদী আক্রমণে ৪২ জন আধাসামরিক বাহিনীর জওয়ানের শহিদ হওয়ার প্রেক্ষিতে যেদিন ভারতীয় বায়ুসেনা বোমারু বিমান উড়িয়ে পাকিস্তানের বায়ুসীমা অতিক্রম করে বালাকোটে গিয়ে সন্ত্রাসবাদীদের আখাড়ায় বোম ফেলে এসেছিল সেদিন প্রায় সব মিডিয়ায় এই ছবিটা ভাইরাল হয়েছিল ।সেদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন মিডিয়ায় এই ছবিটা বারবার দেখানো হয়েছে। তার সঙ্গে ধারাবিবরণী দেওয়া হয়েছে কি ভাবে পাকিস্তানের ভেতরে ঢুকে ভারতীয় বিমান বাহিনী দুঃসাহসিক কাজ সফল ভাবে করে এসেছে। কোন কোন অত্যুৎসাহী মিডিয়া বলাবলি করছিল আমাদের দেশের এইসব বোমারু বিমান মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে গাছের মাথার ওপর দিয়ে ঊড়ে গিয়ে জৈশ-এ-মহম্মদের সন্ত্রাসবাদী তৈরির কারখানায় কিভাবে বোমাবাজি করতে সফল হয়েছে।

আমাদের সেনাবাহিনী অসাধারণ মেধা ও সাহস রাখে। সাহসী উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান পাকিস্তানের মাটিতে তার প্রমাণ রেখে এসেছে। তার সঙ্গে সেনাবাহিনী প্রযুক্তিগত দিক দিয়েও অনেক উন্নত। তারা আজ হয়তো ৩৫০জন সন্ত্রাসবাদীকে মেরে দিতে পেরেছে। যদিও আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো এর সত্যাসত্য বিচার্য বলে মন্তব্য করছে এবং তার সঙ্গে পাকিস্তানের ওই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে কথা বলে সত্য সামনে আনার চেষ্টা করছে। এসব নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। শোনা যাচ্ছে পাকিস্তানে মাত্র একজন আহত হয়েছেন। অনেকেই বলছে জৈশ-এর মাদ্রাসাতে নাকি বোম মারা যায়নি। তার বদলে জঙ্গলে বোম পড়েছে। গোটা পনের পাইন গাছ নষ্ট হয়েছে। পাকিস্তানের পরিবেশ ধ্বংস হয়েছে বলে ওই দেশের পরিবেশবিদরা আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকিও দিয়েছে। এসব প্রসঙ্গ নিয়ে বিতর্ক চলুক। সত্য সামনে আসুক। ভারতের কথাই যেন সত্য বলে প্রমাণিত হয়। 
কিন্তু এই যে ভিডিওটা প্রায় সব মিডিয়া দেখাচ্ছে, সেটা আসলে কি?
জেনে রাখা ভাল এই ভিডিওটা আর্মা-২ বলে একটা ভিডিও গেম থেকে নেওয়া। ৯ জুলাই ২০১৫ সালে এই ভিডিওটা ইউটিউবে প্রথম আসে। শুধু তাই নয়। আজ সকালে "গ্রাউন্ড জিরো"র যেসব বোম বারুদের ভিডিও দেখানো হয়েছে সেগুলো সব পুরোন ভিডিও। এইসব ভিডিও দেখিয়ে আমাদের দেশের মিডিয়া বলতে চেয়েছে কিভাবে ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ানের প্রাণহানির বদলা নেওয়া গেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও কোন তথ্য ছাড়াই তাঁর নির্বাচন ভাষণে নিরাপদ হাতের গন্ধ শুঁকিয়ে চলেছেন। তবে এইসব ভিডিওর সত্যতার প্রমাণ সংগ্রহ করতে আপনাকে ফেসবুক, ইউ টিউব, ইন্সটাগ্রাম, টুইটার গুগল ইত্যাদিতে অবশ্যই পারদর্শী হতে হবে। খুঁজতে থাকুন। পেয়ে যাবেন। 
এই ভিডিও বারবার দেখানোর কেন দরকার পড়ছে? তার কারণ ঐসব মিডিয়ার দর্শকরা অতিমূর্খ, উন্মাদ এবং অতিজাতীয়তাবাদী। মানুষকে হিংসাত্মক করে তুলতে এইসব মিডিয়ার অবদান ছোট করে দেখা যায়না। এইরকম উন্মাদ জনতা মিডিয়ার তালে নেচে মোদী অন্ত প্রাণ। আর মিডিয়ার একমাত্র কর্তব্য তাদের নেতা মোদীর ভাষ্যের সত্যতা প্রমাণ করা। এবং মোদী যে কত মহান তা প্রচার করাই তাদের লক্ষ্য। জনতাকে উন্মাদ আর অতিমূর্খ বানিয়ে রাখা যাচ্ছে বলেই এইসব খাওয়ানো যাচ্ছে।
আমার উদ্দেশ্য দেশদ্রোহিতা নয়। আমার উদ্দেশ্য পাকিস্তানের পক্ষে খবর ওড়ানো নয়। আমার উদ্দেশ্য আমাদের সেনাবাহিনীর কর্মদক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন করা নয়। আমার উদ্দেশ্য যুদ্ধোন্মাদ মিডিয়া ও শাসকের বিপক্ষে কথা বলা। আমি বলি যুদ্ধ নয় শান্তি চাই।
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM