Flickr Gallery

Monday, October 24, 2016

বাছাই করা মোল্লার সাত গল্প

মোল্লাকে ধার দেয়না কেউ

একদিন অন্য এক শহরে নাসিরুদ্দিন মোল্লা এক অজানা পথচারীর সঙ্গে আড্ডা জমিয়ে ছি্লেন। গল্প করতে করতে মোল্লা তাকে জিজ্ঞেস করল, “আপনার ধান্দাপানি ভাল চলছে তো।”

লোকটা খুশি হয়ে উত্তর দিল, “তা আপনাদের দোয়ায় ভালই চলছে।”

“ঠিক আছে। ঠিক আছে। আরো দোয়া দেওয়া যাবে। আপনার কাছে কি একশো মোহর ধার পাওয়া যাবে?”

লোকটা এবার গম্ভীর হয়ে বলল, “আপনাকে তো আমি চিনিই না। আপনাকে ধার আমি দিই কি করে?”

“এইটাই তো জ্বালা,” নাসিরুদ্দিন উত্তর দিলেন, “আমাদের শহরে আমাকে কেউ ধার দিতে চায়না কারণ তারা সবাই আমাকে চেনে। আর তোমাদের শহরে তোমরা আমাকে ধার দিতে পারছনা কারণ তোমরা আমাকে চেনোনা।”



নাসিরুদ্দিনের বন্ধুবিরহ

নাসিরুদ্দিনের এক বন্ধু আকশেহর থেকে উঠে অন্য এক শহরে যাওয়ার আগে মোল্লার সঙ্গে দেখা করতে এসে বলল, “মোল্লা, আমি চিরকালের জন্যে এই শহর ছেড়ে চললাম। যাওয়ার আগে তোমার একটা স্মৃতি নিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। তুমি যদি তোমার আঙুলের ওই আংটিটা আমাকে দাও, তবে চিরকাল তুমি আমার চোখের সামনেই থাকবে!”

“হুম,” নাসিরুদ্দিন জবাব দিলেন, “তোমার কাছ থেকে আংটিটা হারিয়ে গেলে বা চুরি হয়ে গেলে তাহলে তুমি আমাকে ভুলে যেতে পার। তার চেয়ে বরং আমি তোমাকে এই আংটিটা দিচ্ছিনা। এর ফলে তুমি যতবার তোমার শূন্য আঙুলের দিকে চাইবে ততবার আমাকে মনে রাখতে পারবে। হারিয়ে যাওয়ার আর চুরি হওয়ার ভয় থাকলনা। তাই তোমার কাছে আমি চিরকাল স্মৃতি হয়ে থাকতে পারব।”



মোল্লা ঘুমোচ্ছে

নাসিরুদ্দিন মোল্লা খুঁটিতে গাধাটাকে বেঁধে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম করছে। ঠান্ডা হাওয়ায় ক্লান্ত চোখ বুজে এসেছে। এমন সময়ে তার ভাইপো এসে মোল্লাকে জিজ্ঞাসা করল, “চাচা, তুমি কি ঘুমোচ্ছ?”

মোল্লা আধবোজা চোখেই জবাব দিলেন, “কেন জিজ্ঞাসা করছিস রে?”

“চাচা, আমি তোমার কাছ থেকে তোমার গাধাটা দুঘন্টার জন্যে ধার নিতাম।”

“ঠিক আছে, বুঝলাম, বুঝলাম। তোর প্রথম প্রশ্নটা কি যেন ছিল?”

ভাইপো বলল, “প্রথমে আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তুমি ঘুমোচ্ছ কিনা!”

মোল্লা বললেন। তুই ঠিকই ধরেছিস। তখন আমি ঘুমোচ্ছিলাম। আর এখনও আমি ঘুমোচ্ছি।”



গাছের ডাল থেকে মোল্লার লোক নামানো

একবার একটা লোক একটা উঁচু গাছের মগডালে চেপে আর নামতে পারছেনা। যেভাবে উঠেছিল সেইভাবে নামতে গিয়ে দেখে পা হড়কাচ্ছে। লোকটা ভয় পেয়ে আর নামতেই পারছেনা। যতবারই নামতে যায় ততবারই পা হড়কায়। লোকটা গাছের মগডাল থেকেই চেঁচাচ্ছে সাহায্যের জন্যে। গাছের নিচে সাহায্য করার জন্যে অনেক লোক জড়ো হলেও কেউ বুঝতে পারছেনা যে লোকটাকে কিভাবে মগডাল থেকে নামিয়ে আনা যায়। কিছু না করতে পেরে সবাই হাঁ করে মগডালে আটকে থাকা লোকটার দিকে চেয়ে আছে।

এমন সময়ে সেই গাছের তলা দিয়ে মোল্লা যাচ্ছিলেন। ভিড় দেখে দাঁড়িয়ে পড়লেন। মোল্লাকে এবার সবাই সাহায্যের জন্যে ধরল। মোল্লা শান্ত মাথায় বললেন, “ঠিক আছে, আমাকে বিশ্বাস করতে বল ওই আটকে থাকা লোককে। আমি ওকে নামিয়ে আনছি।

নাসিরুদ্দিন লম্বা একটা মোটা দড়ি আনিয়ে সেটা মগডালে আটকে থাকা লোকটার কোমরে বেঁধে নিতে বলল। গাছের ডালে বসা লোকটা মোল্লাকে বিশ্বাস করে মোটা দড়িটা নিজের কোমরে কষে বেঁধে নিল। আশেপাশের লোক কৌতূহলী হয়ে মোল্লাকে দেখছিল। মোল্লা বলল, “আমার ওপর বিশ্বাস রাখো। এইরকম ভাবে আমি একটা লোককে আগেও বাঁচিয়েছি।

লোকটার কোমরে দড়ি বাঁধা হয়ে গেলে নাসিরুদ্দিন নিচের দড়িটা ধরে হ্যাঁচকা টান মারতেই লোকটা মগডাল থেকে একেবারে ধপ করে মাটিতে এসে পড়ল। বেশ খানিকটা চোট পেল। এইসব কান্ড দেখে দাঁড়িয়ে থাকা লোকেরা বলল, “মোল্লা, এর চেয়ে ভাল কোন উপায় ছিলনা নাকি!”

নাসিরুদ্দিন বললেন, “হুম, এর আগে কোমরে দড়ি বাঁধিয়ে লোক উদ্ধার করেছিলাম তবে আমার ঠিক খেয়ালে আসছেনা সেবার মানুষটা কুয়োর মধ্যে আটকেছিল না গাছের ডালে।”



মোল্লার উপকারী বন্ধু

মোল্লা একবার রাস্তার ধারের এক জল ধরে রাখার গর্তে পড়ে গেলেন। গর্ত থেকে নাসিরুদ্দিনকে টেনে তুলে উদ্ধার করেছিলেন তাঁরই এক বিশেষ বন্ধু। তারপর থেকে সেই বন্ধু কথায় কথায় নাসিরুদ্দিনকে তার উপকারের কথা মনে করাতে থাকে। দেখা হলেই সেদিনকার গল্প ফেঁদে কিভাবে মোল্লাকে টেনে তুলল আর না তুললেই বা কি হত সেই নিয়ে মোল্লাকে রোজ একই কথা শুনতে হত বলে মোল্লা রীতিমতো বিরক্ত হচ্ছিল।

এইরকম ভাবে কয়েকমাস কাটার পর নাসিরুদ্দিন সেদিনকার মতোই জামাকাপড় পরে তাঁর সেই উপকারী বন্ধুকে নিয়ে আবার সেই জল রাখার গর্তের ধারে গিয়ে ইচ্ছে করেই জলে পড়ে গিয়ে বললেন, “ভায়া সেদিন তুমি যদি আমাকে না তুলতে তাহলে এই যে আজ এখন আমি যেমন আছি সেদিন আমি তেমনি থাকতাম। এবার দয়া করে আর সেই দিনটার কথা মনে করাবেন না। আমার ঠিক মনে আছে।”



গাধার চাঁটি

একদিন রুটির দোকানে দাঁড়িয়ে মোল্লা রুটি কিনছেন। এমন সময়ে পেছন থেকে একটা গাধা মোল্লার পাছায় এক লাথি কষিয়ে পালিয়ে গেল। মোল্লা মুখ থুবড়ে পড়ে হাত ভেঙে দুমাস বাড়িতে বসেই কাটালেন।

ভাল হয়ে ওঠার পর মোল্লা সেই গাধাটাকে খুঁজতে শুরু করলেন। একদিন পেয়েও গেলেন। গাধার মালিক গাছের তলায় ঘুমোচ্ছে আর সেই বজ্জাত গাধাটা ঘাস খেয়ে বেড়াচ্ছে। মোল্লা তো তক্কে তক্কেই ছিলেন। ডান্ডা দিয়ে গাধাটাকে পেটাতে শুরু করলেন। গাধাটা ডেকে উঠল। গাধার ডাক শুনে মালিকের ঘুম গেল চটকে। মালিক মোল্লার দিকে তেড়ে এসে বলল্ম “কি ব্যাপার মোল্লা, তুমি আমার গাধার গায়ে হাত দিলে কেন?”

মোল্লা পেটাতে পেটাতেই বলল, “কেন পেটাচ্ছি তা একমাত্র ও জানে আর আমি জানি। এটা আমার আর ওর ব্যাপার। এর মধ্যে তুমি ঢুকতে যেওনা।”



এবার দার্শনিকই গাধার বাচ্চা

একবার এক দার্শনিকের সঙ্গে মোল্লার রাস্তায় পরিচয় হয়ে গেল। মোল্লার সঙ্গে দর্শনশাস্ত্র চর্চা করার জন্যে দার্শনিক দিনক্ষণ ঠিক করে ফেললেন। এরপর পূর্ব পরিকল্পিত দিন অনুযায়ী দার্শনিক মোল্লার বাড়ি পৌঁছে গেলেন। মোল্লার বাড়ি তালা ঝুলতে দেখে দার্শনিক বেজায় খাপ্পা হয়ে দরজাতে লিখে এলেন – গাধার বাচ্চা।

মোল্লা বাড়ি এসে দরজায় এই লেখা দেখে দৌড়োলেন সেই দার্শনিকের আস্তানায়। দার্শনিককে বাড়িতে পেয়ে মোল্লা বললেন, “আমি দুঃখিত যে আপনি আমার বাড়ি গিয়ে ফিরে চলে এসেছেন। এর জন্যে আমি ক্ষমা চাইছি।”

দার্শনিক খুশি হয়ে বললেন, “ঠিক আছে, ঠিক আছে, আমি তোমাকে এ যাত্রায় ক্ষমা করে দিলাম। কিন্তু তুমি জানলে কি করে আমি তোমার বাড়ি গিয়েছিলাম। তুমি তো বাড়িতেই ছিলেনা!”

মোল্লা বললেন, “আমি বাড়ি ফিরে দেখলাম দরজায় আপনার নাম লেখা আছে, সেই দেখে বুঝলাম আপনি আপনার নাম লিখে আমাকে জানিয়ে গেছেন যে আপনি এসেছিলেন।”
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM