বলা হয়, মোল্লা ছিলেন তুরস্কের আকশেহরের বাসিন্দা। বিভিন্ন ধরণের মজার গল্পের সঙ্গে নাসিরুদ্দিন মোল্লার নাম জড়িয়ে আছে বহুকাল ধরেই। এখনো সেই ধারা চলে আসছে। নাসিরুদ্দিনের প্রতিটি গল্পই দুর্দান্ত বুদ্ধিদীপ্ত। গল্পের কোথাও নাসিরুদ্দিন অত্যন্ত বোকা। আবার কোথাও প্রচন্ড চালাক। চালাক বোকা যাই হোন না কেন নাসিরুদ্দিনের প্রতিটা গল্পেই কোন না কোন সামাজিক বার্তা থাকে। প্রতিটি গল্পই নাসিরুদ্দিনের ব্যাঙ্গাত্মক মন্তব্যের মাধ্যমেই শেষ হয়। পৃথিবীতে নাসিরুদ্দিন মোল্লার মজার গল্পগুলো ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছে। এমনকি ইউরোপ ও আমেরিকাতেও নাসিরুদ্দিন মোল্লার গল্প জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। আফ্রিকাতে নাসিরুদ্দিনের গল্পের জনপ্রিয়তা আছে। আমার এই ব্লগে পাঠকরা তারও কিছু প্রতিচ্ছবি দেখতে পারবেন। আগেই বলেছি নাসিরুদ্দিনের গল্পগুলো বুদ্ধিমত্তার পরিচয় বহন করে। এছাড়াও গল্পগুলোতে মজার ছলে দার্শনিক বার্তাও থাকে।
অনুমান করা হয় নাসিরুদ্দিনের গল্পগুলি তৈরি হয়েছিল প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ বছর আগে। এর থেকেই আন্দাজ করা হয় মোল্লার চরিত্রটিও প্রায় ৮০০ বছরের পুরোন। অনেকে বলেন তুর্কি পন্ডিত বা হোজা বা হোজ্জাদের নানারকম ছোটোখাট গল্প বা ঘটনাগুলোকে সম্মিলিত ভাবে মোল্লার গল্প বলে চালানো হয়েছে। আদৌ মোল্লা নাসিরুদ্দিন নামের কোন লোকের অস্তিত্বই ছিলনা! কিন্তু এই ‘অস্তিত্বহীন’ মোল্লাকে নানা দেশে নানা নামে ডাকা হয়। আজারবাইজানি, আফগানি, ইরানি, পাকিস্তানি, ভারতীয় এবং মধ্য এশিয়ার অনেক দেশেই ‘মোল্লা নাসিরুদ্দিন’ নামে তিনি খ্যাত। ‘খোজা নাসিরুদ্দিন’ বলেন কাজাখাস্তানিরা। গ্রিসে ‘হোজা নাসিরুদ্দিন’ নামে তাঁকে ডাকা হয়। তুরস্কে ডাকা হয় ‘নাসিরুদ্দিন হোকা’ বলে। আরবে, মধ্য প্রাচ্যে উত্তর আফ্রিকায় তাঁকে ‘জুহা’ বলা হয়। তাঁর নামের বানানের অপভ্রংশ অনেকটা এই ধরণের – ‘নাসরুদ্দিন’, ‘নাসের উদ দিন’, ‘নাস্র আল দিন’, ‘নাসরেদ দিন’ ইত্যাদি। তাঁর জনপ্রিয়তা উর্ধগামী। ১৯৯৬ সালে বিশ্বময় নাসিরুদ্দিন বৎসর পালন করা হয়েছে। এই ‘অস্তিত্বহীন’ মোল্লার সমাধিও আছে আকশেহরে।
মোল্লার চরিত্র বর্ণময়। বিভিন্ন সময়ে তাঁকে বিভিন্ন পেশায় দেখা গেছে। অনেক ছোট ছোট দু লাইনের জোকসও মোল্লার নামে আছে। সেগুলোকে সংগ্রহে রাখার চেষ্টা করব। মোল্লার গল্পের সঙ্গে অনেক সময়ে বীরবল বা গোপাল ভাঁড়ের গল্পের মিল পাওয়া যায়। এই বিষয়ে বিশদের অন্য কোন দিন আলোচনা করা যাবে।