বাংলায় এখন রামচর্চা চলছে। এখন বাংলায় ভূতের মুখেও রামনাম শোনা যাচ্ছে। অনেকে বলছে বাংলায় নাকি রামচর্চা ছিলনা। এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে নাকি বাংলায়। আমি বলছি বাংলায় রামচর্চা ছিল। আদ্দিকাল থেকেই অনেকের ঘরে ঘরে রামায়ণ পাঠ হয়। রামচন্দ্র মানে ভগবান। রামকৃষ্ণ পরমহংসের জন্ম কর্ম সব বাংলায়। বাংলার ঘরে ঘরে হরে রাম হরে কৃষ্ণ কীর্তন শোনা যায়। অজস্র গ্রামগঞ্জের নাম রাম দিয়ে শুরু বা রাম দিয়ে শেষ। কয়েকটা শহরের নামের মধ্যেও রাম ঢুকে আছে। রামপুরহাট, শ্রীরামপুর, সীতারামপুর, রামরাজাতলা ইত্যাদি।
রাম আমাদের বাংলার রন্ধ্রে রন্ধ্রে। টাকা গুনতে গেলে আমরা অনেকেই এক-এর বদলে রাম দিয়ে গণনা শুরু করি। আমাদের ঘাটে মাঠে রামশালিক আর রামঘুঘু চরতে দেখি। রামপটল আর রামঝিঙে আমাদের চাষিদের হাতে ফলতে দেখি। রামকলা বাজারে বিক্রি হতেও দেখি। একমাত্র আমাদের বাংলার আকাশেই রামধনু ওঠে। রামছাগল একমাত্র বাংলাতেই পাওয়া যায়। ছাগলের সঙ্গে রামের এই সহাবস্থান ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের আর কোন রাজ্য স্বীকার করেনি।
কুঁড়েকে আরও বেশি কুঁড়ে বোঝাতে আমরা রামকুঁড়ে বলি। বোকার চেয়েও বেশি বোকা মানে রামবোকা। রামকিপটে বদনাম আমার বন্ধুদের কাছ থেকে আমার পাওনা। এইসব এখন আর রামঢাক বাজিয়ে বলা যায়না। বাংলায় অনেকের এখন রামনামে অ্যালার্জি হচ্ছে। কাউকে জয়শ্রীরাম বললে তেতে উঠছে। কাউকে রামপাঁঠা বললে তেড়ে আসছে। কেউ আবার জয়শ্রীরাম না বলে রামপ্যাঁদানি খাচ্ছে। কেউ বা জয়শ্রীরাম বলে রামক্যালানি খাচ্ছে।
বেচারাম, হাঁদারাম, বোকারাম, গঙ্গারাম, ক্যাবলারাম। এদের মধ্যেও রাম বিদ্যমান। ঈশ্বর তো সর্বত্র বিদ্যমান থাকবেনই। রামকে আমরা পাঁচফোড়ণ ভেবে যেখানে সেখানে জুড়ে দিই। তবে রাম পদবীধারীরা কোনদিন ভগবানের মর্যাদা পেলনা। উচ্চবর্ণ লোকেরা রাম পদবীধারী লোকেদের নিম্নবর্ণের মানুষ ভাবে। উচ্চবর্ণের লোকেরা আবার এই ধরণের ‘রাম’দের অস্পৃশ্য ভাবে। এইসব বলছি বলে কেউ আবার আমাকে রামখচ্চর ভাবতেই পারে। কেউ রামধোলাই দেওয়ার ভয় দেখাতে পারে।
আমাদের দেশের ‘আয়ারাম গয়ারাম’ নেতারা রামচালাকি করে রামরাজ্য আসবে বলে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। এখন থেকেই রামভক্ত হনুমানের হুপহাপ শব্দ শুনতে পাচ্ছি। রামরাজত্বে ঢোকা এখন সময়ের অপেক্ষা। তবে আমরা সবাই এখন রামগরুড়ের ছানা। আমাদের সবাইয়ের কিন্তু হাসতে মানা। এইসব শুনে হাসতে গেলে জয়শ্রীরাম হাঁক পেড়ে যে কেউ রামদা নিয়ে তেড়ে আসতে পারে। রামকে ধরে রামটান না দিয়ে বরং একটু রাম খেয়ে গলা ভিজিয়ে শুয়ে পড়ি।