Flickr Gallery

Thursday, May 2, 2013

সারদা সত্য জগৎ মিথ্যা


সারদার কর্ণধারের কান টানলেই মাথা আসতে পারত। কিন্তু কর্ণধারের কর্ণাকর্ষণের পরামর্শতে কর্ণপাত না করেই ফ্যাসাদ বাধিয়ে রাখলেন শ্রীমতি। নিন্দুকেরা কানে কানে বলাবলি করছে নাকি তাঁর মতিভ্রম হয়েছে। সারদার সঙ্গে দেদার লেনদেন এবং উদার মেলামেশা। নেশা। এ যেন নেশায় পাগল অবস্থা। সবেতেই সারদা। অ্যম্বুলেন্স থেকে শুরু করে, সাইকেল থেকে শুরু করে, ক্যারম বোর্ড থেকে শুরু করে, ফুটবল থেকে শুরু করে, খেলার জার্সি থেকে শুরু করে, চাকরি থেকে শুরু করে, অনুষ্ঠানের প্রদীপ আর মোমবাতি জ্বালানো থেকে শুরু করে সবেতেই সারদা। সারদা এখন সর্বঘটে কাঁঠালি কলা। সারদার সরকার। সারদার মন্ত্রী। সারদার কল্যাণমূলক পরিষেবা। সারদার পুরস্কারপ্রদান যজ্ঞ। সারদার চার্টার্ড ফ্লাইট। সারদার সেলিব্রিটি নাইট। সারদার ব্র্যান্ড। সারদার বন্ধু। সারদার সংবাদ। সারদার সাংবাদিক। রাজ্যের পরিবেশ সারদাময় হয়ে যাওয়ার পেছনে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের ভক্তগণের অবদান তো নস্যি।

লোকের টাকার লুটপাট। দু’বছরে টাকা দ্বিগুণ। সাত বছর পাঁচ হাজার রাখলে সেই টাকা কড়কড়ে কুড়ি হাজার টাকা হয়ে ফেরত। প্রতি মাসে তিনশ টাকা করে পাঁচ বছর রাখতে থাকুন। দশ বছর পর থেকে প্রতি মাসে পনের হাজার টাকা বাঁধা। পঁচিশ বছরের জন্যে রাখুন কুড়ি হাজার টাকা। দশ বছর পর থেকে ওই টাকা ডিম পাড়বে। বছরে বছরে এক লক্ষ টাকা। আসল টাকাটা ভুলে যান। খালি সুদ খেয়ে যান। তবে কত টাকা পেলেন আপনি? দুঃখ আর কষ্ট দু’টোই দূর হল। এই সরকার আমাদের সরকার। এই সরকার মানুষের সরকার। এই সরকার সারদার সরকার। তার সঙ্গে লক্ষ লক্ষ লোকের চাকরি। সরকারেরও কোন রাখঢাক নেই। সবাই মিলে সারদার ঢাক পেটাতে ব্যস্ত ছিল। শুধু ঢাকই নয়। ঢাকের সঙ্গে তাল তাল কাদা। বিরোধী পক্ষের তাবড় নেতাদের সাদা ধুতি পাঞ্জাবিতে কাদা ছিটিয়ে আনন্দ। হাতের মুঠোয় কাগজের কাটিং। এই দেখুন সেটিং ছিল। এসব কারা? এরা কে? দেখছেন তো। চোরের মায়ের বড় গলা। আমরা তো চোর তা বাপু সবাই জানে। কিন্তু তোমরা কেন চুরি করতে? এখন সবাই সাধু! ভাজা মাছটি উলটে খেতে জানেনা কেউ! আমি সব বুঝি। 

এ হেন সারদার কর্ণধার পালাবার আগেও মন্ত্রীদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে ফেললেন। এবার প্যাঁচের পালা। সারদা সর্দার এখন আসামী। পালাতে হবে এবার। তুমি পালাও। আমি তোমাকে পালাতে পালাতেই ধরব। একেবারে নাটকীয়ভাবে ধরব। বুক দিয়ে আগলানোর কথা দিয়েছি ভায়া। কিন্তু এখন আমার বুকটাই দু’হাত দিয়ে আগলে রাখতে হচ্ছে। তোমার জন্যে আমার বুক ধুকধুক করছে। তুমি এ যাত্রায় পালাও। 

সরকারি সারদার বেসরকারি খবরের কাগজগুলোর শ্মশান যাত্রা সম্পন্ন। বৈদ্যুতিন মাধ্যমগুলোও ঘাটে উঠেছে। ষোল লক্ষ টাকা মাইনে করা চাকর সাংবাদিক সাংসদ এখন আদ্ধেক বেকার। তাও দশ নম্বরি চ্যানেলটা চলে বেড়াচ্ছে। পাবলিক বলছে কোন দু’নম্বরি নিশ্চয়ই হয়েছে। নয়তো ঠ্যাং ভেঙে চ্যানেল কি করে চলতে পারে! পাবলিকও বলিহারি! আপনি দু’শ টাকা চাইলে সোমবারে দেবে বলে পালিয়ে যায়। আর সারদাকে দু’লক্ষ টাকা দিয়ে নাকে সরষের তেল দিয়ে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখে। পাবলিকই আহাম্মক। ন্যাড়া বেলতলায় একবারই যায়। কিন্তু পাবলিক বেলতলায় রোজ রোজ যায়। পাবলিক তো ন্যাড়ার মতো চালাক চতুর না। পাবলিক একেবারে সাদাসিধে। যাকে বিশ্বাস করবে বলে তাকেই বিশ্বাস করে। ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু’ বলে হাঁক পেড়ে জমিজমা, ঘটিবাটি বেচে সারদাকেই বিশ্বাস করে। 

সারদাময় জগৎ। সারদা সত্য জগৎ মিথ্যে। সারদাই ধর্ম। সারদাই ব্রহ্ম। রামকৃষ্ণ ফোকলা দাঁতে হাসছেন। টাকা কি করে মাটি হয় তা তিনি সারদা দিয়েই বুঝিয়ে দিলেন। রামকৃষ্ণ এমনই ছিলেন। অনেক কঠিন সত্য তিনি এইরকম ভাবেই বুঝিয়ে দিতেন।
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM