Flickr Gallery

Friday, August 2, 2019

শ্রমিকের কোন ধর্ম হয়না, শ্রম নিজেই একটা ধর্ম


জোম্যাটো নিয়ে আমরা এখন জল ঘোলা করতে শুরু করেছি। গত দুদিনে জোম্যাটোকে এত লোক সেলাম জানিয়েছি যে কোম্পানির মালিককে বিশাল এক বিপ্লবী বানিয়ে ফেলেছি অনেকে। একজন গোঁড়া হিন্দু ভদ্রলোক অ্যাপ-এর মাধ্যমে খাবার চেয়েছিলেন জোম্যাটো’র কাছে। সেই হিন্দু ভদ্রলোককে খাবার দিতে আসেন একজন মুসলমান ‘ডেলিভারি বয়’ বা ‘জোম্যাটো ড্রাইভার’। গোঁড়ামির তেজে হিন্দু ভদ্রলোক সেই খাবার নিতে অস্বীকার করেন। গোঁড়া হিন্দু ভদ্রলোকটি নিজেও হয়তো শ্রমিক। কিন্তু তিনি হিন্দু শ্রমিক আর মুসলমান শ্রমিকের মধ্যে বিভেদ টেনে নিজের শ্রেণিচেতনা হারিয়েছেন। ধর্মের ধোঁয়া চোখে লেগে তিনি অন্ধ হয়েছেন। এবং এর প্রত্যুত্তরে জোম্যাটো ট্যুইট করে, ‘খাবারের কোন ধর্ম হয়না, খাবার নিজেই ধর্ম’।

অনেকের জোম্যাটোর এই পাঞ্চ লাইনটা মনে গেঁথে যায়। তারপর থেকে সেলামের হিড়িক। জোম্যাটো কর্তা যে কত মহান তাই বোঝাতে আপামর সোশ্যাল মিডিয়ান জনতা ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর তারপর জল ঘোলা হতে শুরু হয়। হালাল-ঝটকা প্রসঙ্গ এসে যায়। নবরাত্রি থালি, জৈন ফুড এইসব প্রসঙ্গ এসে পুরো ঘেঁটে ফেলে ব্যাপারটাকে। মাঝখান থেকে শ্রমিকের অপমান উধাও হয়ে যায়। 

জানা আছে কি, জোম্যাটোর ‘ডেলিভারি বয়’দের দৈন্যদশা? জানা আছে কি তাদের ওয়ার্কিং কন্ডিশান? অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন গবেষক ‘ফেয়ার ওয়ার্ক’এর ওপর একটি সমীক্ষা চালাচ্ছেন। তাতে বলা হচ্ছে, অ্যাপ নির্ভর যে সব সার্ভিস প্রোভাইডার ভারতে কাজ করছে তাদের মধ্যে ‘জোম্যাটো ড্রাইভার’দের ওয়ার্কিং কন্ডিশান নিকৃষ্টতমদের মধ্যে একটি। এরা সপ্তাহের কোনদিন ছুটি পায়না। এমনকি শরীর খারাপ হলেও কোন ছুটি পায়না। অর্থাৎ ‘সার্ভিস’ দিতে না পারলে সেইসব দিন কোন রোজগার করতে পারেনা। এদের কোন নির্দিষ্ট বেতন নেই। রাস্তায় দিনরাত গাড়ি নিয়ে পাঁইপাঁই করে দৌড়ে দৌড়ে খাবার বিলি করতে হয়। তাড়াহুড়ো করে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হলেও চিকিৎসার খরচ নিজেকেই বহন করতে হবে। অথচ চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকাকালীন কোন বেতন পাবেনা। এই ধরণের শ্রমিকরা তাদের ন্যূনতম অধিকার থেকে বঞ্চিত।

অথচ আমরা জোম্যাটো’র মালিকের ট্যুইটবার্তা পড়েই নিজের ‘হ্যাটস অফ’ করে দিচ্ছি। হাঁটু মুড়ে বসে প্রণাম ঠুকছি যেন জোম্যাটো'র মালিকের পায়ে! ব্যাবসাদার যারা তারা নানারকম মুখরোচক কথা বলে ব্যাবসা বাড়ায়। তারা ব্যাবসার মন্দা দেখলে কখন যে ‘পালটি’ খেয়ে উলটো গান গাইবে তা কেউ আগাম আন্দাজ করতে পারেনা। কিন্তু আমরা সেকুলার সোশ্যাল মিডিয়ানরা জোম্যাটো’র মালিকের ট্যুইট বার্তায় গর্বিত ভাবছি নিজেদের। নিজেদের শ্রেণির কথা চিন্তা না করে অন্য এক শ্রেণির বাহাদুরির কথা ফলাও করে বলার মধ্যে শ্রেণিচেতনা কোথাও হালাল হচ্ছে। কোথাও আবার ঝটকা হচ্ছে। আমরা মানে শ্রমিকরাই হালাল মাংস আর ঝটকা মাংস হয়ে বাজারে বিক্রি হয়ে যাচ্ছি। মনে করিয়ে দিচ্ছি আবার, শ্রমিকের কোন ধর্ম নেই। শ্রম নিজেই একটা ধর্ম।।
02 July, 2019
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM