বাড়ি থেকে বেরিয়ে মোড় মাথায় ঊঠতেই পুলিশ এসে ঘটির মতো কি যেন একটা বাড়িয়ে দিল। ওই ঘটিটা একটা আধুনিক যন্ত্র। বাড়ি থেকে বেরোলে সুরক্ষার স্বার্থে পুলিশ এখন জনতার কাছ থেকে পাঁচ টাকা ঘন্টা নিচ্ছে। পুলিশ তো বেসরকারি হয়ে গেছে। বেসরকারি হওয়ার পর থেকে এই দৌরাত্ম্য বেড়েছে। তা বাড়ুক। সুরক্ষা তো দিচ্ছে। এর ফলে পাঁচ টাকা দেওয়া জনতাকে পুলিশ জিপিএস দিয়ে ট্র্যাক করে তার ডাটা সরাসরি নিজেদের থানাগুলোতে জানিয়ে দিচ্ছে। কেউ আপনার পকেটমারি করতে গেলেও থানায় সাইরেন বেজে উঠবে।
আমার হাতে ঘড়ির মতো এক যন্ত্র আছে। ওইটা কথা বলে আমাকে সাবধান করে দেবে। এ এক আজব যন্ত্র। ঘড়ি না। কিন্তু সময় জানতে পারা যাবে। মোবাইল না। কিন্তু অন্যের সঙ্গে কথা বলতে পারব। কমপিউটার না। কিন্তু চাইলেই ইন্টারনেট খুঁচিয়ে দিন দুনিয়া দেখে নিতে পারব। বোতাম টিপে খাবারে অর্ডার করতে পারব। ট্রেন আর প্লেনের টিকিট কাটতে পারব। ওইটা দিয়ে অ্ছুি সব কিছু করতে পারব। শুধু ঘন্টায় পাঁচ টাকা পুলিশ নেবে। পাঁচ টাকার টপ আপ-এ আমি নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াব। চোর ডাকাত, পকেটমার, ঠগ জোচ্চোর কেউ ঘেঁষতে পারবেনা।
আমি পুলিশটাকে জিজ্ঞাসা করলাম, “আচ্ছা বলুন তো, যারা অপরাধী তারাও তো ঘন্টায় পাঁচ টাকা দিয়ে রাস্তায় বেরোচ্ছে।” পুলিশটা বলল, “তাদের কাছ থেকে ঘন্টায় পঞ্চাশ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। তাই তারা বেরোচ্ছে কম।” আমি আরও আশ্চর্য হয়ে বললাম, “অ্যাঁ, বলেন কি! তাহলে তো তাহলে তো ওদের খরচ পোষাতে বেশি করে অপরাধ করতে হচ্ছে। তার মানে অপরাধ তো বাড়ছে! তাই না!” পুলিশ বিরক্ত হয়ে বলল, “ওটা সরকার নিজের অধীনে রেখেছে। এই নিয়ে কথা বাড়ালে আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে ঘ্যাঁচ করে দুহাজার টাকা কেটে নেওয়া হবে আর আজকের মতো আর পাঁচ টাকার টপ আপ নেওয়া যাবেনা। আর আপনার সুরক্ষা আপনার নিজের হাতে চলে যাবে। কিছু ঘটে গেলে আমাদের কোন দায়িত্ব থাকবেনা।”
আমি বুঝলাম আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। পাঁচ টাকা না দিলে আমার আজকের সব কাজ আটকে যাবে। চুরি ছিনতাই হয়ে যেতে পারে। আমাকে কেউ কিডন্যাপ করলেও কিছু করার থাকবেনা। আমি চুপচাপ হাঁটা দিলাম। যাই হোক, সরকার সব কিছু বেচে দিয়েও কিছু ব্যাপার নিজের আওতায় রেখেছে। তার মানে পুরোপুরি বেসরকারিকরণ হয়নি। এইটাই আনন্দের ব্যাপার।
আমি জল কিনতে বেরিয়েছিলাম। আগে বাড়িতে একটা কুয়ো ছিল। শুকিয়ে গেল। তারপর হাতে টেপা কল বসিয়েছিলাম। জল দেওয়া বন্ধ করে দিল। মোটর পাম্প বসালাম। জল কমে আসছিল। মাঝে মাঝেই জল কিনতে হচ্ছিল। তারপর সরকার জলের ওপর কড়া নজরদারি শুরু করল। বলে দিল যেমন তেমন করে জল ব্যাবহার করা যাবেনা। জল ব্যাবহার করার জন্যে লাইসেন্স চাই। লাইসেন্স রিনিউ করাতে না পারায় তিন দিন সরকারি জল পাবনা। এখন তাই জল কিনতে পাঁচ টাকার টপ আপ ভরিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছি।
বাড়িতেই থাকি সব সময়ে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর দৌলতে কাজের লোক কমিয়ে উৎপাদন বেশি করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আমাকেও ফ্যাক্টরিতে যেতে হচ্ছেনা। বাড়িতে বসে সেই ঘড়িতে মোচড় দিয়ে আমি কানাডার একটা বিস্কুট ফ্যাক্টরির আটা মাখার কাজ পেয়েছি। কিছু দিন আগে রাস্তা তৈরির কাজ করতাম। তাও ঘরে বসে। ভিডিও গেমসের জয়স্টিকের মতো একটা যন্ত্র ছিল। তাই দিয়ে আমি ভাগলপুরে বসে কটকের রাস্তা মেরামত করতাম। আজ আটা মাখা শেষ করে এক বোতল জল কিনতে বেরিয়েছি। দূর্মূল্য। ওই জল দিয়ে দু’দিন নাওয়া খাওয়া করব। তাও সপরিবার। আশ্চর্য হচ্ছেন কি! ভাবছেন গুলবাজি করছি! ভাবুন।
ফেস অ্যাপ-এ নাক গলিয়ে নিজের বয়স বাড়িয়ে দেওয়ার পর পুরো দেশটাই আমার জন্যে বয়স বাড়িয়ে নিল। আজ থাক ভাই। পাঁচ টাকার টপ আপ ভরিয়ে এক বোতল জল কিনে তাড়াতাড়ি বাড়ি গিয়ে দুচামচ জল খেয়ে আবার বিস্কুট কোম্পানির আটা মাখতে বসতে হবে।