কেউ যেন ভুলেও না ভাবেন আমি তাত্ত্বিক। আমি এক আটপৌরে সাধারণ শ্রমিক। কে ভাল বলছে সেই মোহে লিখিনা। আমি জ্ঞান ছড়ানোর জন্যেও লিখছিনা। আমার চিন্তাকেই আমি ব্লগে লিপিবদ্ধ করি।
ছোটবেলা থেকেই আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন সঙ্ঘ সেবক।‘ফ্যাসিও’ বা কাষ্ঠ দন্ড এই দলেরও প্রতীক। ইউনিফর্মের রং কালো বা নীল নয়। ওটা খাঁকি আর সাদা। শপথ নেওয়ার ভঙ্গিমায় জার্মানি আর ইটালির ছাপ স্পষ্ট। সামনে আছে ওই দলের ‘মোদি প্রয়োগ’। ভারতের মানুষ এবার মন ভরে আশীর্বাদ দিয়ে আরএসএস-এর মোদি প্রয়োগের ঝোলা ভরিয়ে দিয়েছে। খুব ছোট বেলায় প্রধানমন্ত্রী আরএসএস-এর অফিসে প্রচারকদের চা বিলি করতেন। তাই তিনি চাওয়ালা বলে নিজেকে প্রচার করে মিথ্যে কিছু বলেননি। যদিও তিনি মিথ্যে ছাড়া কিছুই বলেননা। কিন্তু এমনভাবে বলেন যে বক্তৃতার মেঘে ঢাকা রাডার তাঁর কথা ধরতেই পারেনা। সবাই ভাবে উনিই সত্য বাকি সব মিথ্যা।
বিদেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রের সম্পাদকীয়তে ভারতের মানুষের মোদির প্রতি এই বাঁধভাঙা সমর্থনকে ভালো চোখে দেখছেনা। মোদির জয়ের বিরুদ্ধে অপমানজনক মন্তব্য করেছে সংবাদমাধ্যমগুলি। যদিও প্রায় সব রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে প্রশংসাজনক অভিবাদন জ্ঞাপন করেছেন। আমাদের দেশের সংবাদপত্রগুলির স্বাধীনভাবে চিন্তা করার শক্তি কমে গেছে। তাই নিজেরা কিছু লিখছেনা। অন্যান্য দেশের সংবাদপত্র কি কি লিখেছে তাই নিয়ে পাতা ভরিয়েছে। যেমন নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে “How Narendra Modi seduced India with envy and hate”৷ যেমন ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে "voters endorsed his vision of a muscular, assertive and fundamentally Hindu India". যেমন গার্ডিয়ান লিখেছে, “"The landslide win for Mr Modi will see India's soul lost to a dark politics - one that views almost all 195 million Indian Muslims as second-class citizens," ।
দেশের বেশিসংখ্যক মানুষ স্বাধীনতার আগে থেকেই বঞ্চিত ও শোষিত। এখনো অবস্থার উন্নতি হয়নি। বরং অবনতি হয়ে চলেছে। মানুষ এমন একজনকে পেয়ে গেছে যিনি তাদের সব পাইয়ে দেবেন বলেছিলেন। মোহগ্রস্ত মানুষ দুহাত তুলে তাই আরএসএস-এর ‘মোদি প্রয়োগ’কে ২০১৪ সালে দিল্লির মসনদে বসিয়েছিল। পাওনা গন্ডার হিসেব কেউ চায়নি। দরকার ছিলনা মনে হয়। এবার মানুষের দেশাত্মবোধ জাগিয়ে তোলানো হয়েছে। মানুষ আরও বেশি সমর্থন জানিয়ে পুনরায় বরণ করে নিয়ে এসেছে ‘মোদি প্রয়োগ’।
ইতিহাস সাক্ষী। ফ্যাসিস্টরা এসেছে। মানুষ তাদের অস্তিত্ব ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। নাৎসিরা এসেছে। ধ্বংস করেছে রাষ্ট্র। মানুষই তাদের সরিয়েছে। এবারেও তাই হতে চলেছে। দেশের মানুষের আবেগ একদিন শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু ততদিনে ক্ষত অনেক বেড়ে যাবে। এই ক্ষত যেন না বাড়ে। মানুষে মানুষে যেন হানাহানি না হয়। একজন মানুষ যেন অন্য সাধারণ মানুষকে ঘৃণা না করে। তাই এবার হালের কান্ডারি বামপন্থীদেরই হতে হবে। বামপন্থীদের প্রাসঙ্গিকতা এখানেই বেড়ে যায়। বামপন্থীরা সব হারিয়ে যেন সর্বদা সর্বহারাদের পাশে পাশেই থাকে। আরএসএস-এর ‘মোদি প্রয়োগ’ থেকে দেশের মানুষকে উদ্ধার করতে পারে একমাত্র বামপন্থীরাই।