ছিলাম আছি থাকব। নিজের সত্ত্বা নিয়েই বাঁচব।
আমি নিজেকে একজন বামবাজ বলি। বামবাজি আমার রক্তে মিশে আছে। বামবাজ শব্দটা শুনতে একটু উদ্ভট। কি আর করা যাবে আজকাল বাম শব্দটাকেই লোকে উদ্ভট ভাবছে। গুলবাজ গুল ঝেড়ে গুলবাজি করে। রংবাজ রং চড়িয়ে রংবাজি করে। রকবাজ কানাগলির রকে বসে রকবাজি করে। আর আমার মতো বামবাজ ফেসবুকের দেওয়ালে বামবাজি করে। গতকাল ইভিএম ওলোটপালট নিয়ে বামবাজি করেছি। তার আগের দিন এক্সিট পোল-এর। তার আগের দিন মোদিজির প্রেস কনফারেন্স-এর। তার আগের দিন শেষ ভোটের। আমার মতো জনগণ ফেসবুকে অনেকেই আছেন। অন্যে যে কাজ করলে আমরা ট্রোলিং বলি নিজে করলে তাকেই বলি বিপ্লব। বিপ্লবের পরিভাষা আমরা বদলে ফেলেছি। ফেসবুকের পাড়ায় আমাদের বিপ্লব এখন চরম পর্যায়ে।
ফেসবুকে ঢুকলেই শুধু চোখে পড়ে আমার মতো বামবাজদের গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ। ফেসবুকে মুখ্যমন্ত্রীকে আমরা পিসি বলি। আজকাল পিসির দিল্লি দেখা নিয়ে খিল্লি করি। প্রধানমন্ত্রীকে ফেকু বলি। রাতে শুতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত ফেকুর নামে ঢেকুর তুলি। রাহুলকে আগে পাপ্পু বলতাম। কিন্তু বেচারাকে দুর্বল দেখে আর ঘাঁটাচ্ছিনা। আমাদের লড়াইটা সবলের বিরুদ্ধে। আমরা লড়াই করি দুর্বলদের নিয়ে। রাহুল তাই এখন আমাদের লড়াইয়ের কমরেড। যদিও তাকে কমরেড বলতে পারিনা। কারণ যাকে তাকে কমরেড বলা যাবেনা। পন্ডিতেরা বলেন যখন তখন গায়ত্রী মন্ত জপ করা যায়না। আমরা ফেসবুকে তুমুল প্রতিবাদে মুখরিত হই। মিডিয়া আমাদের খবর চেপে রাখে। তাই আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতে আমাদের খবর ছেপে রাখি।
আমি বামবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী। মাঠে বসে মার্ক্স-এর দ্বান্দিক বস্তুবাদ বইটা পড়ে বোঝার আগে লঘুশঙ্কার কোপে পড়ে ঝোপের ধারে ঘুরে আসার ফাঁকে রমেশের লাঙল বওয়া গেরুয়া বলদটা বইটার কটা পাতা খেয়ে ফেলেছিল। রাগে টান মেরে বইটা দিয়ে বলদটাকে মারতে গিয়ে হাত ফস্কে বইটা বলদটার গোবরের ওপর ছপাৎ করে পড়ল। তারপর থেকে আমার বামবাদী মতাদর্শেই গোবর লেপটে আছে।
তবুও আধখাওয়া গোবরমাখা বইটা থেকে আমি বামবাদ বলতে অনেককিছু বুঝে ফেলেছি। ঘন্টায় ঘন্টায় ফেসবুকে ঘুঁটে মেরে আমি সেইসব অন্য সবাইকে বোঝাতে চেষ্টা করি। ফেসবুকে বামবাজির বোমাবাজি চালাই। লোকে কি বুঝল তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। লোকে একদিন না একদিন ঠিক বুঝতে পারবে। সেদিন আবার সবাই লাল হয়ে উঠবে। কি কান্ড দেখুন! আজ বামবাজির কাব্য লিখতে লিখতে আমি নিজেই লজ্জায় লাল হয়ে গেছি।