Flickr Gallery

Saturday, June 16, 2012

মুলায়মের রাজনীতির প্যাঁচে মমতা কুপোকাৎ



কর্মসূত্রে পাটনার এক বিশ্বপ্রসিদ্ধ চিকিৎসককে বিশেষ কোন কারণে একটি ধন্যবাদপত্র দিতে গিয়ে আমার একটি শিক্ষা হয়েছিল। চিকিৎসক খামের ওপর নিজের পদবীর ভুল বানান লেখা রয়েছে দেখে আমাকে বলেছিলেন, ইংল্যান্ডে কারোর নামের ভুল বানান লিখলে গালাগালি দেওয়ার সমান অপরাধ বলে গণ্য করা হয়। আর আমাদের দেশে এই কাজ অহরহ হয়ে চলেছে। অর্থাৎ গালাগালি বয়ে চলেছে। দিল্লিতে গতকালের সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা ব্যানার্জি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামকে প্রতিবার ‘এ পি জে কালাম’ বলে সম্বোধন করছেন দেখে আমার মনে হল তিনি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিকে গালাগালি দিচ্ছেন। সেই চিকিৎসক আজ বেঁচে থাকলে জিজ্ঞাসা করতাম।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে হাওয়া গরম হওয়ার আগে নিজের পালে হাওয়া ভরে নিয়েছিলেন কংগ্রেসের নেতারা। দিন পনের আগেই মুলায়ম সিংহ কংগ্রেসের ডাকা নৈশভোজে মধ্যমণি ছিলেন। সেদিন মমতা ব্যানার্জি ভোজে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি তখন বাংলা নিয়ে ব্যস্ত। মুলায়ম রাজনীতির আখড়ায় ঢোকার আগে কুস্তির আখাড়ায় ব্যস্ত থাকতেন। মনে হচ্ছে এখানেও মুলায়ম সিংহ কংগ্রেসের জন্যে বিপত্তারিণী হয়ে কাজ করেছেন। এর আগে একবার পরমাণু সন্ধি প্রসঙ্গে কংগ্রেসকে তিনি ভরাডুবি থেকে বাঁচিয়ে ছিলেন। অমর সিংহ অমর রহে। অমরের হাত ধরে সাংসদদের বেচাকেনা করে কেন্দ্রে কংগ্রেসের সরকার টিকিয়ে রাখতে হয়েছিল তাঁকে। কংগ্রেসের বিপদে আপদে মুলায়ম হাল ধরেন। এবার হাল ধরে পাল তুলে তার মধ্যে হাওয়া ভরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বৈতরণী সড়সড় করে পার করানোর জন্যে তৈরি ছিল কংগ্রেস। মুলায়ম তাঁর কুস্তির প্যাঁচ তৈরি রেখেছিলেন। নৈশভোজের নিশিতেই হিসেব করে রেখেছিলেন তিনি। মমতা সেই কুস্তির প্যাঁচে কুপোকাৎ হলেন।

এরপর মঞ্চে ধুমকেতুর মতো মমতার আবির্ভাব। দৌড়োলেন মুলায়মের বাড়ি। বেশ কয়েকবার। দৌড়োচ্ছেন মমতা। পেছনে তাঁর ক্যামেরা। যেখানে সেখানে থেমে তাঁকে প্রেসের সঙ্গে কথা বলতে হচ্ছে। মমতা মুলায়মকে দিয়ে বলিয়ে নিলেন তাঁরা রাষ্ট্রপতি পদের জন্যে কাকে সমর্থন করতে চলেছেন। প্রথমজন এ পি জে আব্দুল কালাম। দ্বিতীয়জন মনমোহন সিংহ। তৃতীয়জন সোমনাথ চ্যাটার্জি। আবার বৈঠক। আবার মুলায়মের আখাড়ায় মমতার আনাগোনা। শেষে এ পি জে আব্দুল কালামের নাম চূড়ান্ত হয়ে গেল। ততক্ষণে মুলায়মের প্যাঁচ কাজ করে গেছে। মুলায়ম এবার মুখে কুলুপ এঁটে বসলেন। মমতার মাতব্বরি করে ততক্ষণে গাছে চেপে বসেছেন। মমতা ক্যামেরার সামনে এসে বেশ কয়েকবার বলে দিলেন ‘কালামজি’ তাঁদের প্রার্থী। মমতাকে গাছে চাপিয়ে নিচে থেকে মই সরিয়ে নিলেন মুলায়ম।। নামতে পারছেন না। তবে প্রণববাবু তাঁকে নিজের ছোট বোন ভেবে গাছ থেকে নেমে আসতে অনুরোধ করেছেন। হতে পারে মমতা প্রণববাবুর অনুরোধ রক্ষা করে ফেলবেন। মুলায়মের চেয়ে তিনি প্যাঁচপয়জার কম জানেন নাকি!

ইউপিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসাই ভাল এখন মমতার। এরকম আগেও হয়েছে। এনডিএ নিজের পাল্লা ভারি করতে তৃণমূলকে কাছে টেনে নেবে বলে মমতাকে আশ্বস্ত করেছে। তাছাড়া নিজের জেদে তাঁকে অনড় থাকতেই হবে। এটা তাঁর স্বভাব। কথায় আছে স্বভাব যায়না ধুলে। তবে মুলায়মের কাছে ল্যাং খেয়ে মমতা ল্যাং মারার কায়দাটি জেনে গেলেন। এরপর মুলায়ম সিংহ তৈরি থাকুন। আপনাকে কুস্তির প্যাঁচে মাৎ করে দেবেন মমতা।

‘এপিজে কালাম’ আপনিও তৈরি থাকুন। মমতা তো আগাম অভিনন্দন জানিয়ে দিয়েছেন। বিজেপি চুপ করে বসে মজা দেখছে। হতে পারে প্রণববাবুকে সমর্থন করে বসবে। বামেরা এখন ছোট। মাত্র পাচ শতাংশ ভোটশক্তি। তাই ধর্তব্যের মধ্যেই নেই। তবে সৌজন্য রক্ষার্থে এবং রাষ্ট্রপতি পদের মতো নির্লোভ ও নির্বিষ পদের মর্যাদা রক্ষার্থে বামেরাও প্রণববাবুকে সমর্থন জানাতেই পারেন। নির্বিবাদে প্রণব মুখার্জি ভারতের রাষ্ট্রপতি হয়ে যাবেন এমনই দেখা যাচ্ছে।
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
বাংলা ব্লগ জগতের সিন্ধুতে আমরাও একটা বিন্দু। নেট ঘেঁটো বাঙালির আপ্যায়ণে বড় হচ্ছে। শৌভিকের লেখা পড়তে এই ব্লগে যান LEKHASHAUBHIK.BLOGSPOT.COM