বহু বছর আগের কথা। তখন দেশে ছোট ছোট অঞ্চলের মালিককেই রাজা বলা হত। দু চারটে গ্রামের মালিক হতে পারলেই রাজা উপাধি পাওয়া যেত। তাই রাজা ছিল প্রচুর। আর রাজাদের রাজত্বে যে যার সুবিধা মতো নিয়ম কানুন বানিয়ে রাখত। সুবিধা মতো শাস্তিও দেওয়া হত। এক রাজার রাজত্বের নিয়ম অন্য রাজার অঞ্চলে প্রয়োগ করা যেতনা।
সেই সময়ে রাজা চন্দ্রকান্ত ছিলেন অভিরামপুরের রাজা। দু চারটে গ্রামের তিনি রাজা ছিলেন। সেই সময়ে এক ব্রাহ্মণ ভিখারি বিভিন্ন রাজার রাজত্বে গিয়ে সেই রাজার গুণগান গাইত। রাজার অনুচররা খুশি হয়ে তাকে কিছু খাবারদাবার খেতে দিত। ব্রাহ্মণ সেই খেয়ে জীবন কাটাত। আবার অন্য দিন অন্য রাজার রাজত্বে গিয়ে সেই রাজার গুণগান গেয়ে ভিক্ষা করত।
রাজা চন্দ্রকান্তের রাজ্য অভিরামপুরে একটি মুদির দোকানে এসে থামল সেই ভিখারি। ক্ষিদে পেয়েছে তার। ট্যাঁকে কিছু পয়সা ছিল। মুড়ি আর মুড়কি খাওয়ার ইচ্ছা হল। কিন্তু মুড়ি আর মুড়কির একই দাম শুনে সেই ব্রাহ্মণ ভিখারি আর কালবিলম্ব না করে রাজা চন্দ্রকান্তকে অভিসম্পাত করতে করতে দৌড়তে শুরু করল। মুদিও পেছন পেছন দৌড়ে ব্রাহ্মণকে ধরে একেবারে রাজার কাছে হাজির করল। রাজার কাছে ব্রাহ্মণের নামে অভিযোগ করল মুদি। ব্রাহ্মণকে কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে ব্রাহ্মণ বলল, যে দেশে মুড়ি আর মুড়কি এক দামে বিক্রি হয় সেখানে গুণের কদর দেওয়া হয় না। যে রাজার রাজত্বে এই রকম হয়, সেই রাজাও দুর্নীতিপরায়ণ। সেই রাজার রাজত্বে এক দন্ডও থাকা উচিত নয়। এই বলে ব্রাহ্মণ পেছন ফিরে দৌড়তে শুরু করল।
আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতিও ঠিক রাজা চন্দ্রকান্তের রাজত্বের মতো। এদেশে টম্যাটো আর আলু এক দামে বিক্রি হয়। যখন তখন পেঁয়াজের দাম আপেলের চেয়ে বেশি হয়ে যায়। চালের চেয়ে চিড়ের দাম কম থাকে। চিনির দাম গুড়ের চেয়ে কম হয়ে যায়। বিমানের জ্বালানি হোয়াইট পেট্রোলের দাম সাধারণ পেট্রোলের চেয়ে কম হয়ে যায়। সেই ব্রাহ্মণ আজ আর নেই। রাজাকেও কেউ বলার নেই যে এদেশের রাজা দুর্নীতিপরায়ণ। এদেশে গুণীর কদর নেই তাও কেউ রাজাকে বলতে সাহস করেনা। আর রাজার রাজত্ব ছেড়ে বেরিয়ে অন্য রাজ্যে যাওয়ার উপায় নেই। ভারতে এখন একজনই রাজা।