কলকাতা, ২রা নভেম্বর- নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ভাষণ দিলেন। সাংবাদিকরা মূখ্যমন্ত্রীর ভাষণের জবাব নিতে বিরোধী দলনেতার কাছে যান। সূর্যকান্ত মিশ্রও জবাব দেন। ডহরবাবুও ওখানে ছিলেন। তিনিও জবাব দেন। শুনুন কে কি বলছেন।
মূ খ্যমন্ত্রী: ভোগ নয়, ত্যাগের জন্য আমরা ক্ষমতায় এসেছি। আমি তো পাঁচ মাস ধরে কোনও বেতনই নিচ্ছি না। দলের কর্মীদের বলছি, কেউ কোথাও থেকে টাকা তুলবেন না। আমাদের দল তৃণমূলের পতাকা নিয়ে সি পি এম-এর লোকজন কোনও কোনও এলাকায় তোলা তুলছে। এসব সি পি এম-এর প্ল্যান্টেড।
ডহরবাবু: প্ল্যানিং খায় না মাথায় দেয়? ওসব প্ল্যানিং-ফ্ল্যানিং আমি অনেক দেখেছি। আমার সব সটাসট ফটাফট।
মুখ্যমন্ত্রী: পাট চাষীরা খুব সমস্যায় আছেন। পাটের দর উঠেছে মাত্র ১৬০০ টাকা। কী করে হবে? উৎপাদন খরচই তো ২৩০০ টাকা। আমরা তাই ১০০ টাকা করে ভরতুকি দেব ঠিক করেছি। কেন্দ্রকে বলেছিলাম। কেন্দ্র ৩০০ টাকা করে ভরতুকি দেবে ঠিক করেছে। অর্ডার হবে।
ডহরবাবু: আমাকে চাষী দেখাবেন না। ওরকম চাষী আমি অনেক দেখেছি। আমাদের চাষী মন্ত্রীকে বলুন। আমি এখন মূখ্যমন্ত্রী।
ডহরবাবু: কেন সুদীপ তো বলে দিয়েছে আমরা ৫ মাসে ৫% কমিয়ে ফেলেছি। ১০ বছরে আমরা মাইনাসে রান করব। লিখে রাখুন।
ডহরবাবু: রাজ্যটা আমি কিনেছি। কেউ কিনতনা। লোকসানে কিনলেও আমি দেখিয়ে দেব কি ভাবে লাভ করা যায়। আপনাদের ও নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না। মানুষকে গিয়ে আপনারা বলে দিন তাঁরা রাজ্যটা আমার হাতে বেচে ভুল কিছু করেন নি। দশ বছর চুপ থাকতে বলুন ওদের।
সূর্যকান্ত মিশ্র: বেশ তো! আমি মুখ্যমন্ত্রীকে বলছি, আপনি কড়া নির্দেশ দিন পুলিসকে, পুলিস যেন নির্ভয়ে তৃণমূলের পতাকা কাঁধে নিয়ে তোলা আদায়ে ব্যস্ত লোকজনকে গ্রেপ্তার করে!
ডহরবাবু: ঠাকুর ঘরে কে রে? আমি তো কলা খাইনি!
মুখ্যমন্ত্রী: সংখ্যালঘুদের জন্য আমাদের কাজ থেমে নেই। এয়ারপোর্টের সামনে যে হজ হাউস আছে, তা বড্ড ছোট। আমরা আরেকটা বড় হজ হাউস বানাবো রাজারহাটে। সংখ্যালঘু মুসলিমদের জন্য যে কোটার ব্যবস্থা, তা করার জন্য আমি সংখ্যালঘুদের সার্ভে করার নির্দেশ দিয়েছি।
সূর্যকান্ত মিশ্র: বামফ্রন্ট সরকার আরেকটি হজ হাউস বানাবার পরিকল্পনা করেছিল উত্তরবঙ্গে। কেননা কলকাতায় দু’টো আছে। উনি কি সেই তৃতীয় হজ হাউসটাই উত্তরবঙ্গের বদলে রাজারহাটে বানাতে চাইছেন? আর সার্ভের সঙ্গে সংখ্যালঘু কোটার সুবিধা দানের কী সম্পর্ক? সার্ভে তো চলতেই পারে। ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। যে সার্ভে হয়েছে, তার ভিত্তিতে কোটার সুবিধা চালু করতে অসুবিধা কোথায়? নাকি সার্ভের নামে ওই সুবিধা আরো বিলম্বিত করতে চায় তৃণমূলের জোট সরকার?
ডহরবাবু: দেখুন, মুসলমানদের নিয়ে কিছু বলবেন না। ভোটের রাজনীতি আমিও জানি।
মুখ্যমন্ত্রী: দীঘা, পুরুলিয়া, হলদিয়া, শান্তিনিকেতন, আসানসোল, সাগর, নবদ্বীপ, মালদহ, বালুরঘাট সব জায়গাগুলি বিমানপথ দিয়ে জুড়ে দেব।
সূর্যকান্ত মিশ্র: হলে ভালো। তবে কোচবিহারের মতো চালু হয়েই সমস্যা হবে না তো! সেটা না হলে ভালো।
ডহরবাবু: সব জায়গায় শিলার অর্ডার দেওয়ার কাজ আজই শেষ করে ফেলতে হবে। এরপর বাংলার মানুষকে আর মাটিতে পা ফেলতে দেব না।
মুখ্যমন্ত্রী: দশতলা হাসপাতাল হবে। স্কুল কলেজ হবে। দ্বাদশ প্ল্যানে।
সূর্যকান্ত মিশ্র: হলে ভালো। প্ল্যান আগে হোক।
ডহরবাবু: এবার দ্বাদশ প্ল্যানের শিলা পুঁতে দেওয়া হোক।
মুখ্যমন্ত্রী: অনেক সরকার সার-বীজের কোনও প্ল্যান করেনি। তাই এবার অসুবিধা হচ্ছে। সার মিলছে না। কালোবাজারিও হচ্ছে। আমাদের রাজ্যে চাই ৭৬ হাজার মেট্রিক টন সার। ২৫ হাজার মেট্টিক টন দিয়েছে কেন্দ্র। তিনদিন আগে তাই কেন্দ্রকে ফোন করি। বোধহয় আরো ১২ হাজার মেট্রিক টন সার আসবে।
সূর্যকান্ত মিশ্রঃ মুখ্যমন্ত্রীর হিসাব বলে দিচ্ছে, চাহিদার চেয়ে জোগান অনেক কম। যাই হোক, আগের সরকারের প্ল্যান আবার কী? ৩৪ বছর তো এমন সমস্যা হয়নি। এবছরই এমন সমস্যা হলো কেন? আসলে আমরা কৃষি নিয়ে রবি ও খরিফ মরশুমের অনেক আগেই সরকারী স্তরে কৃষি, ক্ষুদ্র ও বৃহৎ সেচ, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রী ও অফিসারদের নিয়ে বৈঠক করে প্ল্যানিং করতাম। রিভিউ করতাম। এই সরকার কি এসব কাজ করেছে? চাষের উপকরণের খরচই যে প্রচুর বেড়ে গিয়েছে, সারসহ বিভিন্ন জিনিসের দাম বেড়েছে, এসব খেয়াল আছে? আসলে ‘মা-মাটি-মানুষের সরকার’ হলে কী হবে, মা মাটি বা মানুষ কাউকেই চেনে না এই সরকার।
ডহরবাবু: প্ল্যানিং খায় না মাথায় দেয়? ওসব প্ল্যানিং-ফ্ল্যানিং আমি অনেক দেখেছি। আমার সব সটাসট ফটাফট।
মুখ্যমন্ত্রী: পাট চাষীরা খুব সমস্যায় আছেন। পাটের দর উঠেছে মাত্র ১৬০০ টাকা। কী করে হবে? উৎপাদন খরচই তো ২৩০০ টাকা। আমরা তাই ১০০ টাকা করে ভরতুকি দেব ঠিক করেছি। কেন্দ্রকে বলেছিলাম। কেন্দ্র ৩০০ টাকা করে ভরতুকি দেবে ঠিক করেছে। অর্ডার হবে।
সূর্যকান্ত মিশ্র: যখন তিনি এসব কথা বলছেন, তখন পাট আর চাষীদের হাতে নেই। ফড়েরা নিয়ে নিয়েছে। জে সি আই চুপ। এখন যা বলছে সরকার, তাতে লাভ হবে ফড়েদের। ওরাই টাকা পেয়ে যাবে। আর উনি যে হিসাব দিয়েছেন, তাতে রাজ্য কেন্দ্র মিলে ভরতুকি দিয়েও তো উৎপাদন খরচ উঠছে না। কেন চাষীরা জে সি আই-এর কাছে যাবেন? আর, না লাভ-না লোকসান ভিত্তিতেও যদি দর হয়, তাতে চাষীরা আর চাষ করবেন কেন?
ডহরবাবু: আমাকে চাষী দেখাবেন না। ওরকম চাষী আমি অনেক দেখেছি। আমাদের চাষী মন্ত্রীকে বলুন। আমি এখন মূখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী: রেলের কাজ যা শুরু হয়েছে রাজ্যে, তা কমপ্লিট করার জন্য রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীকে নির্দেশ দিয়েছি।
সূর্যকান্ত মিশ্র: আরে ১৫ই অক্টোবর ঝাড়গ্রামে যে সভা করলেন উনি, সেখানে তো তাঁকে মানুষজন রেল নিয়ে প্রশ্ন করতেই মাইকে বললেন, রেল নিয়ে তাঁকে আর প্রশ্ন করা যাবে না। কারণ তিনি এখন রেলমন্ত্রী নন। সেই তিনি রেল নিয়ে বললেন আজ? নির্দেশও দিয়েছেন? কোনটা ঠিক?
ডহরবাবু: তৃণমূল একটা অল ইন্ডিয়া পার্টি। রেলও অল ইন্ডিয়ায় চলে। তাই দিয়েছি। তাতে আপনার কি?
মুখ্যমন্ত্রী: বি ডি ও-দের নিয়ে মিটিং করেছি। জেলা প্রশাসনকে নিয়ে মিটিং করবো। শুরু হয়েছে মিটিং।
সূর্যকান্ত মিশ্র: মিটিং-এ পঞ্চায়েতের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বাদ কেন? বিডিও দিয়ে পঞ্চায়েত চালাতে চান? আসলে পঞ্চায়েতকে অকেজো করতে চান। ওনার নিজের দলের পঞ্চায়েতও তো আছে। সেগুলিও কাজ করতে পারছে না? কী বলবেন উনি?
ডহরবাবু: আমাদের সরকার মা মাটি মানুষের সরকার। পঞ্চায়েতে দলের রঙ থাকে। ওরা মাও নয়। মাটিও নয়। মানুষ নয়।
মুখ্যমন্ত্রী: শিশুমৃত্যু বামফ্রন্ট আমলে বছরে ৪০ হাজার করে হতো। কোনও ব্যবস্থা হতো না। এখন সব চেঁচাচ্ছে।
সূর্যকান্ত মিশ্র: আমাদের সময়ে আমরা নিয়মিত বিষয়টি নিয়ে রিভিউ করতাম। পশ্চিমবঙ্গে যে এখন শিশু মৃত্যুর হারে চতুর্থ স্থানে, মহারাষ্ট্র-তামিলনাডু-কেরালার পরে, সেটা বামফ্রন্ট আমলেই সাফল্য। উদ্যোগ না থাকলে সাফল্য আসতো না। এই সরকারের কি কোনও পরিকল্পনা আছে? বলেছে কিছু?
ডহরবাবু: কেন সুদীপ তো বলে দিয়েছে আমরা ৫ মাসে ৫% কমিয়ে ফেলেছি। ১০ বছরে আমরা মাইনাসে রান করব। লিখে রাখুন।
মুখ্যমন্ত্রী: আমাদের দলের কেউ প্রোমোটারি বা সিন্ডিকেটে ডাইরেক্ট যুক্ত থাকতে পারবেন না। এসব ব্যাপারে আমি নিজের বাড়িকেও রেয়াত করি না। দলেও করবো না।
সূর্যকান্ত মিশ্র: ডাইরেক্ট যুক্ত থাকা যাবে না? তাহলে কি ইনডাইরেক্ট যুক্ত থাকা যাবে? মুখ্যমন্ত্রী তা-ই বোঝালেন দলীয় কর্মীদের?
ডহরবাবু: ভাইদের মধ্যে ঝগড়ার মূল কারণ ছিল এইটাই। তাই থেকে আমি শিক্ষা নিয়েছি। ছোট ছোট ঘটনা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
মুখ্যমন্ত্রী: এই সরকারকে নিলামে বেচলেও কেউ নিতো না। আমরা বলে সরকারে এসেছি।
সূর্যকান্ত মিশ্র: মনে হচ্ছে উনিই তার সরকারকে নিলামে চড়াবেন। ঋণের জন্য যদি নিলাম হতো, তাহলে তো আগে গুজরাট নিলামে চড়তো।
ডহরবাবু: রাজ্যটা আমি কিনেছি। কেউ কিনতনা। লোকসানে কিনলেও আমি দেখিয়ে দেব কি ভাবে লাভ করা যায়। আপনাদের ও নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না। মানুষকে গিয়ে আপনারা বলে দিন তাঁরা রাজ্যটা আমার হাতে বেচে ভুল কিছু করেন নি। দশ বছর চুপ থাকতে বলুন ওদের।