পুরাকালে বঙ্গবর্ষে একদা মমতা নাম্নী এক মূর্খরাণীর রাজত্ব ছিল। তাঁহার রাজত্বকালে প্রজাগণের কৌতুকের অন্ত ছিলনা। সিধো ও কানহোর স্মরণার্থে একটি সভার আয়োজন হইলে মূর্খরাণী ডহরকে স্মরণ করিয়া সভাস্থিত প্রজাগণের সমীপে কৌতুকরস প্রদান করিয়াছিলেন।
রাজা জনার্দনের ইতিহাসজ্ঞান সীমিত ছিল। তিনি তৎক্ষণাত হুটাহুট শব্দবাণ নিক্ষেপ করিয়া হুতোম পন্ডিতকে আনয়ন করিয়া কহিলেন, “হে সর্বলোকগামী তথা সর্বজ্ঞানী মান্যবর হুতোম আপনি বর্ণনা করুন কি উপায় ওই কৌতুকোপাদান রাণী মমতা প্রজাগণের নিমিত্ত কৌতুকরস উপস্থাপনা করিয়াছিলেন।”
“একদা হুল দিবস বলিয়া একটি সংগ্রাম দিবস পালিত হইত। রাণী মমতা আদিবাসী বীরপুঙ্গবদের সম্মানার্থে উক্ত দিবসে সিধো ও কানহো নাম্নী বীরপুঙ্গবদ্বয়ের পরিবার পরিজনকে সম্মানপ্রদান করিবার মনস্থির করিলেন। রাণী মন্ত্রী, পাত্র, অমাত্য ও চাটুকারমন্ডিত হইয়া সভার মধ্যমণি হইলেন। সভা হইতে রাণী বীর সিধো মহাশয়ের পরিবারকে আমন্ত্রন করিলেন । বহুপূর্বে বীরগতি প্রাপ্ত হইয়া সিধো ইহলোক ত্যাগ করিয়াছিলেন এবং তাঁহার পরিজনদিগের কল্পনাতেও বীর সিধো বিরাজিত ছিলেননা। বীর সিধোর পরিবার ইতস্তত হইয়া রাণীর সমীপসভায় দন্ডায়মান হইলেন। রাণী আহ্লাদ সহকারে পরিজনকে বস্ত্রাদিসহযোগে আচ্ছাদিত করিলে সভাস্থিত দর্শক করতালিদ্বারা রাণীর মহিমা প্রচার করিল। এইরূপ দ্বিতীয় বীরপুঙ্গব কানহোকে স্মরণ করিবার নিমিত্ত তিনি তাঁহার বংশানুজদিগের মঞ্চে আমন্ত্রিত করিলেন এবং বস্ত্রাদি প্রদান করিয়া বিদায় করিয়া কহিলেন যে তিনি এহেন সম্মানপ্রদান উৎসব করিয়া বীরদ্বয়কে যথাযথ সম্মানপ্রদান করিয়াছেন তথা প্রজাগণ যেন রাণী মমতাকে শ্রেষ্ঠ বলিয়া তাঁহার গুণগানে সর্বদা বিলীন থাকে। প্রজাগণ করতালি ও জয়ধ্বনিদ্বারা আনন্দপ্রকাশ করিল”।
“কিন্তু রাণী মমতা সর্বদা তাঁহার মূর্খতার পরিচয় প্রদানপূর্বক প্রজাগণকে কৌতুকরসে স্নিগ্ধ করিতেন। সিধো ও কানহোর পরিজনকে বস্ত্রাদি প্রদান করিয়া বীর ডহরের পরিজনকে আমন্ত্রন করিলে অমাত্যগণ অপ্রস্তুত হইলেন। কোলকাতা জনপদে সিধো-কানহো ডহর নামক একটি রাজপথ ছিল। চলিত ভাষায় ডহরকে রাজপথ বলা হইত। স্বল্পজ্ঞানী রাণী ডহরকেও বীরপুঙ্গব ভাবিয়াছিলেন এবং তৃতীয় বীর ভাবিয়া রাজপথের পরিজনকে মঞ্চে আনয়নের নিমিত্ত আদেশ দিলেন। অমাত্যগণ এইরূপ আদেশিত হইয়া এবং রাজপথকে মঞ্চে উপস্থাপনে অপারগ হইয়া মূর্খরাণীকে কর্ণভাষণজ্ঞাত করিলেন যে রাজপথকে মঞ্চে আনয়ন সম্ভবপর নয়। সভাস্থিত দর্শক এইরূপ কৌতুকরসে স্নাত হইয়া দীর্ঘকাল আমোদপ্রমোদ সহকারে জীবনযাপন করিয়াছিল। কথিত আছে যে পুরাণাজ্ঞ মহারাণী মমতার রাজত্বকালে প্রজাগণ তাঁহার রোষানলে পতিত হইবার ভীতিতে বিশ্বাস করিত যে তৃতীয়বীর ডহরের পরিজন রাণীকে অবজ্ঞা করিয়া আমন্ত্রণ উপেক্ষা করিয়াছিল’।
এইরূপ পরিশ্রুত হইয়া রাজা জনার্দন হুতোম পন্ডিতকে প্রণাম করিলে তিনি ফরফর করিয়া উড়িয়া কালীঘাট জনপদের একটি বিশেষ কোন্দরে নিরাপদে নিদ্রাব্রত অবলম্বন করিলেন।