লোকে নাক ঝেড়ে ফেলে। কেউ ঝেড়ে কাশে। কেউ ঝাড় থেকে বাঁশ কাটে। কিন্তু মমতা যে খোদ দায়িত্বটাকেই ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলে দেবেন তা কি করে লোকে জানবে!
মমতার দলের সাধারণ সিধে সাদা কর্মীরা কেউ কেউ ভেবেছিল যে মাটির নাম করে তিনি সরকারে এসেছেন তাই নিশ্চয়ই চাষাভুষোর সুখ সুবিধের দিকটায় একটু নজর দেবেন। কিন্তু হলনা। পাটের দাম নেই। ধানের দাম নেই। সারের দাম আগুন ছোঁয়া। চাষীরা অত রাজনীতি বোঝেনা। এই সব অসুবিধার কথা আবদারের মতো শোনাতে চিৎকার জুড়ে দিল সভার মাঝেই। মমতা বুঝলেন না। উনি তো কোনদিন চাষাভুষোদের মধ্যে থাকেননি। তাই বুঝবেন কি করে!
চাষারা তো ওদের মতোই কথা বলবে নাকি! ডিজেলের দাম আর সারের দাম চড়া। কিন্তু ওরা বুঝছে ধানের দাম নেই। ব্যাপারটাই মাথায় ঢুকছেনা। ওরা কি বলতে চাইছে সেটাও মাথায় ঢুকলোনা মমতার। বুঝবেনই বা কি করে! উলটো করে লাঙল ধরে ফটো দেখেই বোঝা যায় উনি চাষের কিছুই জানেন না। ভাবলেন বুঝি তাঁকে আক্রমণ করছে চাষার দল। এত বড় আস্পর্ধা! চাষারা গলা উঁচু করে কথা বলবে! ওঁকে কে বোঝাবে যে চাষীরা যখন কথা বলে তখন ওই রকম ভাবেই বলে। মাঠে ঘটে কাজ করে। দূরের কোন লোককে ডাকতে তাদের গলা চড়াতে হয়। নইলে শোনা যায়না। ওঁকে কে বোঝাবে একমাত্র তাঁর গলার স্বর উঁচু নয়। চাষীরাও গলা উঁচু করে কথা কয়।
চাষীদের কথা শুনে ভাবলেন বুঝি পাবলিক ক্ষেপেছে। আর পাবলিক ক্ষেপে গেলে তার ওষুধ পাল্টা চোখরাঙানি। একবারে পুরোনো সুরে ঝেঁঝিয়ে উঠলেন। তিনি বললেন তাঁর কিছুই করার নেই। চারমাসে তিনি কি ভাবেই বা সারের দাম কমাবেন! কি ভাবেই বা ধানের ন্যায্য মূল্য ধার্য্য করতে পারবেন। এইসব পরিকল্পনা আগেভাগে নেওয়া উচিত ইত্যাদি বলে তিনি চুপ মেরে গেলেন। আবার খানিক্ষণ পরে সান্ত্বনা দিলেন যে সরকার পরের বছর সারের দোকান করে দেবে।
চাষীরা খানিকটা হলেও বুঝল ঝাড়গ্রামের চাষীদের দায়িত্ব সভাতেই ঝেড়ে ফেলে দিলেন মমতা। মাটি আর মানুষের জন্যে যে সরকার তার বরকর্তার গা ঝাড়া দেখে চাষারা বুঝল তারা সত্যিই চাষা।