পুরাকালে অমৃত নামের এক পানীয় পদার্থ ছিল। মিষ্টি এই তরল পদার্থের চাহিদা ছিল। কিন্তু চট করে পাওয়া যেতনা। যাকে তাকে খেতেও দেখা যেতনা। দেবতা ছাড়া নিতান্তই ভাগ্যবানেরাই অমৃত পান করতে পেরেছেন। সমুদ্র মন্থন করে যে অমৃত পাওয়া গিয়েছিল তাই নিয়ে দানব আর দেবতাদের মধ্যে মারপিট, ঝগড়াঝাঁটি, লাঠালাঠি হয়েছিল। ওই অমৃত খেলে যে কেউ অমর হয়ে যেতে পারত। সব দেবতারা ওই অমৃত পান করার জন্যে ভিড় করলেন। রাক্ষসেরা, দানবেরা আর দৈত্যরাও ভিড় করে অমৃতের হাঁড়িটা নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু করে দিল। কবিরা দেবতা ছাড়া আর কাউকে সেই অমৃত পান করতে দেননি। তারই ফাঁকে রাহু কোন এক সময়ে খানিকটা অমৃত খেয়ে ফললেন। তবে পৌরাণিক কবিরা রাহুর পেট পর্যন্ত সে জিনিস নামতে দেননি। তাহলেই তো রাহু অমর হয়ে যাবেন। দেবতারা তাঁর মাথা কেটে ফেললেন। দেবতা সেজে অমৃত খেতে গিয়ে চালাক দানব রাহুকে ভীষণ খেসারত দিতে হল।
ভগবান শিবেরও বলিহারি! সবাই যখন অমৃত সাবাড় করে দিয়েছে, উনি তখন অমৃতের বাই প্রোডাক্ট বা অমৃত উৎপাদনের কারণে উৎপন্ন বর্জ্য পাদার্থ নিজে খেয়ে ফেললেন। অমৃত নানা রকমের ছিল। একবার ভীম যে অমৃত খেছিলেন তা খেয়ে অমর হওয়া যেতনা। বরং পুরুজ্জীবিত হওয়া যেত। দুর্যোধন একবার ভীমকে খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে দিলেন। ভীম অজ্ঞান হয়ে জলে পড়ে গেলেন। জলের মধ্যে ভীম ডুবেও গেলেন। এবার ভীমের তো মারা যাওয়ার কথা। আর ভীম মরে গেলে মহাকাব্য সেখানেই শেষ। কোন না কোন উপায়ে রাক্ষস এসে বাকি চার পান্ডবদের খেয়ে ফেলত। মহাকাব্য রাক্ষসের পেটে চলে যেত। তাই ভীমের জ্ঞান ফেরাতে বাসুকি এলেন। উনি ছিলেন সর্পরাজ। ভীম যেখানে ডুবে ছিলেন তারই তলায় নাগরাজ বাসুকির প্রাসাদ ছিল। সাদ্দাম হুসেনের আস্তানার মতো। ওপরে মস্ত সুইমিং পুল। তার নিচে সুড়ঙ্গ। তারপর প্রাসাদ। বাসুকি ভীমকে দেখতে পেয়ে নিজের প্রাসাদে নিয়ে এলেন। কবিরা লিখেছেন, সর্পরাজ বাসুকি ভীমকে আট কলসি অমৃত খাইয়ে পুনরায় জীবিত করলেন।